Header Ads

দুই শতাব্দী পরেও বাংলার হেঁশেলে রাজত্ব চালাচ্ছে বাঙালির নিজস্ব ব্র্যান্ড কুকমি


রেস্টুরন্ট থেকে রান্নাঘর স্বাদে ও গন্ধে অদ্বিতীয় গুঁড়ো মশলা হলো 'কুকমি'। যে গুঁড়ো মশলার হাত ধরে বাংলার রন্ধন মশলায় আসে বিবর্তনবাদ। এই গুঁড়ো মশলার প্রবক্তা হলেন কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত। তিনি বাংলার পঞ্চব্যঞ্জন রান্নায় ব্যবহার করার জন্য প্রথম গুঁড়ো মশলা তৈরি করেছিলেন৷ 'কুকমি'ই হলো বাংলার প্রথম গুঁড়ো মশলা। প্যাকেটজাত গুঁড়ো মশলা যে একদিন বাংলা তথা ভারতের বাজার কাঁপাবে তা তিনি আগে থেকেই জানতেন। 


তিনি পরিশ্রম কমিয়ে সহজেই সুস্বাদু রান্নার কৌশল শেখালেন বাঙালিকে। অল্প বয়সেই ব্যবসাতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। এই তরুণ বাঙালি মশলা ব্যবসায়ীর আক্ষরিক অর্থে স্বপ্ন ছিল, ব্যবসার সম্প্রসারণ ও শ্রীবৃদ্ধি। তবে তিনিও বোধহয় ভাবতে পারেননি রান্নাঘরে তাঁরই মাধ্যমে বিরাট বিপ্লব ঘটে যাবে। বাস্তবেও তার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। অবিভক্ত বাংলার মশলা ব্যবসায় তিনি আমূল পরিবর্তন নিয়ে এলেন।

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, এক তরুণ শ্রী কৃষ্ণ চন্দ্র দত্ত সুস্বাদু স্বপ্নের ব্যাগ নিয়ে সুতানুটিতে (বর্তমান কলকাতায়) যাত্রা করেছিলেন। তাঁর দৃষ্টি ও উদ্যোগটি ধর্মহাটাতে একটি নম্র দোকানের আকার নিয়েছিল। এটি একটি দুর্দান্ত স্বপ্নের ভিত্তি স্থাপন করেছিল যা আজকের কুকমির বাস্তবতা।

বছর পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে শ্রী নটোবর দত্তের সুশাসনের অধীনে ব্যবসা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। বাংলার নিজস্ব ব্র্যান্ড কুকমি  শ্রী যুধিষ্ঠির দত্তের গতিশীল নেতৃত্বে বৃহত্তর উচ্চতায় পৌঁছেছে। কুকমি মশলা শীঘ্রই বাংলার সকল পরিবারের কাছে পৌঁছে যেতে থাকে। বাংলার শহর-গ্রামাঞ্চলের সমস্ত বাড়ির মহিলাদের নিকট দারুণ প্রশংসা পেতে থাকে কুকমি। এই মশলার এমনই গুণ যে একনিমেষে আমিষ জাতীয় খাবারের স্বাদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। কুকমির উৎপত্তির পর বাঙালির গৃহস্থের রান্নাঘরে এই মশলাকে "ঐন্দ্রজালিক গুপ্ত উপাদান" হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

১৮৪৬ সালে আজ থেকে দুই শতাব্দী আগে কুকমি মশলার আবির্ভাব হয়। কৃষ্ণচন্দ্র দত্তের প্রত্যয়, বৃহৎ চিন্তাভাবনা ও ব্যবসার প্রতি প্রবল উৎসাহ কুকমির মতো এক উজ্জ্বল গুঁড়ো মশলার জন্ম দিয়েছে। আজকে দুই শতাব্দী পরও কুকমি তার ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। বোরোলীন, এলীন, কিও কার্পিন ও শালিমার নারকেল তেলের মতো কুকমিও বঙ্গজীবনের অঙ্গ হয়ে বাঙালির মননে জায়গা করে নিয়েছে। কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত জন্মগ্রহণ করেন হুগলির আদিসপ্তগ্রামে। ব্যবসায়ীক সূত্রে সেকেলের সুতানুটিতে উঠে আসেন তিনি। তিনি নিজের অজান্তেই একটু একটু করে সুতানুটির ধর্মহাটার একজন সম্ভাবনাময় ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছিলেন। 

বাঙালির হেঁসেলে ভূরিভোজের জন্য কুকমি মশলা এক এবং অদ্বিতীয় উপকরণ। মাছ-মাংসের সকল প্রকার রেসিপিতে কুকমি বাঙালির চাই-ই। বর্তমানে আরো অনেক মশলা বাজারে ঢুকে গেছে ঠিকই কিন্তু কুকমির সমতুল্য মশলা খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর।   

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments