Header Ads

'পথের পাঁচালী' ছবির সমর্থনে মিছিল বের করেছিলেন তরুণ মজুমদার


চলতি বছরের ২১ শে নভেম্বর বিশ্ববিখ্যাত ছবি 'পথের পাঁচালী' ৬৫ বছরে পা রাখলো। এই ছবিকে ঘিরে বাঙালিদের মধ্যে উন্মাদনা এখনও চরমে। নিখাদ বাঙালিয়ানাতে ভরপুর ছিল এই ছবি৷ কালজয়ী ছবি হিসেবে থেকে গেছে 'পথের পাঁচালী'। ছবির প্রধান দুই চরিত্র অপু ও দুর্গার খেলার জগৎ, তাদের সময় পারাপারের গল্প ও তাদের ভাবনার জগতে ডুব দিতে আজও পছন্দ করেন সিনেপ্রেমীরা। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় রচিত 'পথের পাঁচালী' উপন্যাস বিশ্বনন্দিত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়। তিনি যেন উপন্যাসটিকে জীবন্ত রূপে চলচ্চিত্রে তুলে ধরেন। 


কলকাতার উপকণ্ঠে বোড়াল গ্রামকে তিনি বিভূতিভূষণের উপন্যাসে বর্ণিত নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের রূপ দেন। কাশের জঙ্গল তার পাশ দিয়ে স্বশব্দে ট্রেন ছুটে চলার দৃশ্য, বোড়ালের মাঠ, অপু-দুর্গার কাশবনে লুকোচুরি খেলার নস্টালজিক দৃশ্যায়ন, হরিহরের ভিটেতে প্রথম সন্ধ্যার দৃশ্য, দিন শেষে আলো নেভার পর্ব, তুলসীতলায় প্রণাম করতে আসা ইন্দির ও সর্বজয়ার প্রবেশ-প্রস্থান, বাড়ির দেওয়াল, দেওয়ালের ওপাশে গাছের ডালের ওপর অপু-দুর্গার সময় কাটানোর দৃশ্য, দুর্গা সর্বজয়ার সঙ্গে চুল বাঁধতে বসে অন্য ধার থেকে অপু হাসে আর একা একা তাকে ভ্যাংচায় সঙ্গে আয়নার ওপারে ইন্দির ঠাকুরানের মধুমাখা হাসিমুখ ভেসে ওঠে। 'পথের পাঁচালী' ছবিটি দর্শন করলে হৃদয়, মন-প্রাণ সবই জুড়ে যায়। 

বিভূতিভূষণ-সত্যজিতের 'পথের পাঁচালী' দর্শকদের শিখিয়েছে দেশ মানে কেবল পতাকা ও ম্যাপ নয়, দেশ মানে ঘরের হাঁড়ি-কুড়ি, নারকোল-মালা, রাংতা থেকে ঘাস জল মাঠ বন পরিব্যাপ্ত এক সংসার৷  

১৯৫৫ সালের ২৬ শে আগস্ট বসুশ্রী সিনেমাহলে মুক্তি পায় 'পথের পাঁচালী'। ছবির মুক্তির দিন হল ফাঁকা। চাপা দুশ্চিন্তা নিয়ে হলের ভেতরে রুমাল কামড়াচ্ছেন সত্যজিৎ রায়। আস্তে আস্তে হল ভরে উঠতে থাকে। ইতিমধ্যেই খবর এলো নিউইয়র্কে 'পথের পাঁচালী' অকুণ্ঠ অভিনন্দন পেয়েছে। সত্যজিৎ রায় কিছুটা আশ্বস্ত হলেন। এই ছবি যে ইতিহাস সৃষ্টি করবে, তা স্পষ্ট হতে লাগল ক্রমশ। 'পথের পাঁচালী'  সকলের দেখা উচিৎ - এই মর্মে কলকাতায় মিছিল বের করলেন তরুণ মজুমদার সহ অনেকে। দেশবন্ধু পার্কের গেট থেকে তরুণ মজুমদার বারো জন যুবককে নিয়ে এই মিছিল বের করেন। যেখানে নেই কোনো স্লোগান, না আছে কোনো চিৎকার। সবার হাতে হাতে ঘুরছে আলতায় লেখা একটা পোস্টার, তাতে লেখা আছে "পথের পাঁচালী দেখুন, পথের পাঁচালী দেখা আমাদের কর্তব্য।"

বেলা গড়িয়ে মিছিল সার্কুলার রোড পেরিয়ে ফড়েপুকুর ঢোকার সময় তাদের লাইনে যোগ দেন আরও দু-তিনজন যুবক। কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটে আরও কয়েকজন, এরপর শিকদার মোড় থেকে আরও কয়েকজন। এভাবে মিছিলে লোকেদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। হাতিবাগানের মোড়ে এসে লোকেদের সংখ্যা পঞ্চাশ  অতিক্রম করলো। তরুণ মজুমদার তো মিছিলের শেষে বলেই ফেললেন 'মিশন সাকসেসফুল'। 'পথের পাঁচালী' ছবির সমর্থনে যে মিছিল তরুণ মজুমদার করেছিলেন তা সার্থক হয়ে ওঠে। 'পথের পাঁচালী' ছবি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের দ্বার উন্মোচন করে দেয়।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments