Header Ads

বাংলার এক ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ স্থান হলো শ্যামনগরের মূলাজোড় কালীবাড়ি


কলকাতা থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরে হুগলী নদীর তীরে  অবস্থিত উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি শহর হলো শ্যামনগর। এই শহরটি যে কারণে বিখ্যাত তার অন্যতম কারণ হলো শ্যামনগর কালীবাড়ি বা মূলাজোড় কালীবাড়ি। এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন গোপীমোহন ঠাকুর। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র এখানে কবি ভারতচন্দ্র রায় গুনাকরকে জমি প্রদান করেছিলেন। প্রতি বছর পৌষের শীতে একমাসব্যাপী মন্দিরে কালী মায়ের বিশেষ পুজো আরাধনা চলে। 


কথিত আছে, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ভাই  প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ভাই গোপীমোহন ঠাকুরের কন্যা ব্রহ্মময়ীর আট বছর বয়সে বিবাহ স্থির হয়। বিবাহের দিন পালকি করে আহিরীটোলা গঙ্গার ঘাটে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। যে ঘাটেই ব্রহ্মময়ী গঙ্গার জলে তলিয়ে যায়। এরপর গোপীমোহন ঠাকুর একদিন রাতে তার কন্যার স্বপ্নাদেশ পান। মা কালী তাঁকে স্বপ্ন দিয়ে বলেন তিনি ব্রহ্মময়ী। মূলাজোড় ঘাটে ব্রহ্মময়ীর শরীর পাওয়া যাবে। সেখানেই যেন গোপীমোহন ঠাকুর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর গোপীমোহন ঠাকুর আজ যেখানে মূলাজোড় কালীবাড়ি সেখানে আসেন ও তাঁর কন্যার শরীর খুঁজে পান।   এরপর ওখানেই তিনি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেই তিনি মাটিতে গাঁথা অবস্থায় কষ্টিপাথরের দেবীমূর্তি পান। ১৮০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই  কালীমন্দিরের।

অবশ্য মন্দিরের কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই পরলোক গমন করেন গোপীমোহন ঠাকুর। তিনি পরলোক গমন করার পর মন্দিরটির কাজ করেন তাঁর ছোট ছেলে প্রসন্নকুমার ঠাকুর৷ 

ব্রহ্মময়ী কালী বিশেষভাবে প্রসিদ্ধিলাভ করেছে এখানে। এই কালী মন্দিরটি উদ্যানবেষ্টিত। মন্দিরপ্রাঙ্গণে আছে ১২ টি শিবমন্দির।  কালী মন্দিরটি নবরত্ন শিল্পশৈলীতে তৈরি৷ কালী মন্দিরসহ শিবমন্দিরগুলি সব পশ্চিমমুখী। গর্ভ মন্দিরে স্থাপিত প্রসন্ন মুখমণ্ডলের দেবী বিগ্রহটি কালোপাথর দ্বারা বানানো৷ উচ্চতায় প্রায় ফুট তিনেক। দেবী এখানে স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা। শোনা যায়, এই মন্দিরে স্বয়ং বামাক্ষ্যাপা নাকি নিজের হাতে এখানে দেবীর পুজো করতেন। 

শ্যামনগরের ব্রহ্মময়ী কালী মন্দিরের মতো এমন নবরত্ন মন্দির পশ্চিমবঙ্গে খুব একটা নেই বললেই চলে। মন্দিরের নিকটে নবনির্মিত পুজো দালান আছে, তীর্থযাত্রীরা একসাথে বসতেও পারেন এখানে। মন্দিরের দুই পাশে ছয়টি করে সারিবদ্ধ শিবদেউল। সাদা ও কালো দুই রকমের শিবলিঙ্গ দেখা যায় শিব দেউলগুলোতে। শিব মন্দিরের কাজ প্রসন্নকুমার ঠাকুর সম্পন্ন করেন। মন্দিরের দালানের বাতিগুলি ইউরোপীয় প্রভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মন্দিরে সোপানের কাছে দুই স্তম্ভের ওপর রয়েছে দুটি শ্বেত পাথরের সিংহ মূর্তি। আর স্তম্ভের গাত্রে খোদাই করা আছে দুটি বিষ্ণু মূর্তি। অনুমান করা হয় এই মূর্তি দুটো ব্রহ্মময়ী মূর্তির চাইতেও প্রাচীন। 

প্রতি অমাবস্যায়, রটন্তী-চতুর্দশীতে কালীপুজো ও গোটা পৌষমাস ব্যাপী এখানে উৎসব হয়। কালীবাড়িতে আনন্দশঙ্কর, গোপীশঙ্কর ও হরশঙ্কর নামে তিনটি বৃহৎ শিবলিঙ্গও আছে। মন্দিরের পিছনে 'গোপীনাথ জীউ' নামে শ্রীকৃষ্ণের একটি বিগ্রহ আছে। 

তথ্যসূত্র- নীলকণ্ঠ পত্রিকা, হিস্ট্র অফ কলকাতা পিডিএফ, ইন্ডিয়া আনরিভিলড ডট কম। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments