Header Ads

ইতিহাস গড়ার পথে সত্যরূপ ও রুদ্রপ্রসাদরা, সফল হতে চলেছে তাদের নতুন অ্যাডভেঞ্চার


আমা ডাবলাম পর্বতশৃঙ্গে পা রাখার পর ৪ ঠা ডিসেম্বর এক নতুন অ্যাডভেঞ্চার শুরু করেন সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। এই অ্যাডভেঞ্চারটি শুরু হওয়ার সময়ই তিনি জানিয়েছিলেন আমা ডাবলামের পালা শেষ হলেই তাঁরা নতুন অ্যাডভেঞ্চার আরম্ভ করতে চলেছেন। বহরমপুর থেকে বাবুঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩৭০ মাইল জলপথ আটদিনে খড়ের নৌকায় ভর দিয়ে পাড়ি দেওয়া ছিল এই অ্যাডভেঞ্চারের লক্ষ্য। সেই কথামতো ৪ ঠা ডিসেম্বর নতুন অ্যাডভেঞ্চারের সাক্ষী হলেন তিনি৷ খড়ের নৌকাতে এতোদূর পথ অতিক্রম করা মোটেও সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। এই অ্যাডভেঞ্চারে যে-কোনো সময় একটা না একটা বিপত্তি ঘটেই যেতে পারে৷ এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। তবুও মৃত্যুভয় ও জীবনের মায়াকে উপেক্ষা করে তিনি নেমে পড়লেন দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চারে। 


জলপথে বাঙালির দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চার এই প্রথমবারই নয়, ১৯৬৯ সালে পিনাকী রঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ১৮ ফুটের একটি ছোট্ট ডিঙাতে চড়ে কলকাতা থেকে পোর্টব্লেয়ার পৌঁছে বিশ্বরেকর্ড তৈরি করেছিলেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০১৩ সালে ২৭ ফুটের নৌকা নিয়ে ১৮ দিনে আন্দামান পৌঁছেছিল আরো একদল বাঙালি। আর এবার মাউন্টেন ম্যান সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও রুদ্রপ্রসাদ হালদার খড়ের নৌকা নিয়ে জলে নামলেন। ২০১৩ সালে যে একদল বাঙালি ২৭ ফুটের নৌকাতে আন্দামান পাড়ি দিয়েছিলেন সেই দলেরই তিন সদস্য তাপস চৌধুরী, পুষ্পেন সামন্ত ও অসীম মণ্ডলও সামিল এবারের অ্যাডভেঞ্চারে। এক্সপ্লোরার তাপস চৌধুরী ও পুষ্পেন সামন্তর নেতৃত্বে এই অভিনব অ্যাডভেঞ্চারের পরিকল্পনা নিয়েছিল জে. ওয়াই. ফাউন্ডেশন৷ 

বহরমপুরে নিজেদের হাতে এক্সপ্লোরাররা ১৪ দিন ধরে খড়ের নৌকাটি তৈরি করেন। নৌকাটি লম্বায় ৫৬ ফুট ও চওড়ায় ৮ ফুট। নৌকাটির ওজন কয়েকশো কিলোগ্রাম। এখানে যেসব সামগ্রী ব্যবহৃত হয়েছে তা হলো ৫ কাহন খড়, ৫০ টি বাঁশ ও ৩০ বান্ডিল হোগলা পত্র। নৌকাটির নাম রাখা হয় 'শিউলি'। পিনাকী রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী শিউলি চট্টোপাধ্যায়ের নামেই রাখা হয়েছে এ নৌকার নাম৷ শিউলি চট্টোপাধ্যায় দায়িত্ব নিয়ে কলকাতার অভিযাত্রীদের অভিভাবকত্ব করেছেন। সম্প্রতি তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে নৌকাটির নামকরণ করা হয়েছে শিউলি।  

গত ৪ ঠা ডিসেম্বর সকাল দশটায় শিউলির যাত্রা শুভারম্ভ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বিশেষ কারণে সামান্য বিলম্বে 'শিউলি'র যাত্রা শুরু হয়। বহরমপুরের ফরাশডাঙ্গাতে ১৪ দিনেই সেখানকার মানুষ তাদের আপন করে নেয়। 'শিউলি'র ভালোমন্দ নিয়ে এক্সপ্লোরারদের মতো তারাও চিন্তিত ছিলেন। তাই তারা এই নৌকাটিতে পুজো দেন। পুজো দেওয়ার পর বহরমপুরকে বিদায় জানিয়ে 'শিউলি' এগিয়ে চলে। 

আজ ১২ ই ডিসেম্বর খড়ের নৌকা অ্যাডভেঞ্চার সফল হতে চলেছে। ইতিহাস গড়তে চলেছেন সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও রুদ্রপ্রসাদ হালদাররা। তাদের এই অ্যাডভেঞ্চার শেষ হওয়ার কথা ছিল ১১ ই ডিসেম্বর। জলপথে কিছু বিপত্তির জন্য পৌঁছাতে একটা দিন বাড়তি সময় লাগছে। ৯ ই ডিসেম্বর ২২ ঘন্টা একটি বালির চরে আটকে থাকায় এই বিপত্তি। যে চরের একদিকে নদীয়ার ফুলিয়া আর অন্যদিকে হুগলির কৃষ্ণবাটি। 

এক্সপ্লোরার রুদ্রপ্রসাদ হালদার ১০ ই ডিসেম্বর গণমাধ্যমে একটি পোস্টের মাধ্যমে পুরো ব্যাপারটি জানিয়েছেন। তিনি বলেন "আসল খেলা শুরু হয়ে গেছে। যত কলকাতার কাছে আসছি তত খেলা জমে উঠছে। বেড়ে গেছে রিভার ট্রাফিক। রেল ব্রীজ বা অনান্য ব্রীজ, ইলেকট্রিক পোষ্ট, পাম্পিং স্টেশন ইত্যাদি। একে মরা কোটাল তার উপর কুয়াশার ঘনঘটা। এক দিনে দুই ভাটার একটা ভাটা ও বাকি দুই জোয়ারে বসে থাকতে হচ্ছে কোথাও নোঙর করে।

কাল বলাগড়ে রীতাদি ও অসীমদার ব্যাবস্থাপনায় দারুণ একটা লাঞ্চ করে নদীতে নামি বিকাল পাঁচটায়। নদী ঘাটে বহু মানুষের উপস্থিতি আমাদেরকে চাগিয়ে দেয়। অন্ধকারে খুব সজাগ থেকে রাতের জোয়ার শুরু হবার আগে পর্যন্ত দারুণ এগোই। মাঝে আমাদের সামান্য ডিসিশনের ভুলে আবার একটা দূর্ঘটনায় পড়তে পড়তে কোনোরকমে বেঁচে যাই। সে গল্প পরে করবো। ভোরের ভাটায় কুয়াশার জন্য আটকে বসে থাকি। তারপর দিনের ভাটা শুরু হলে আজ দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে টানা পৌনে ন'টা পর্যন্ত পড়িমড়ি করে একটানা দাঁড় টেনে চুঁচুড়া পেরিয়ে সন্দেশ্বরতলা মন্দিরের ঘাটে থামতে বাধ্য হই। 

কাল ১১ ই ডিসেম্বর, আমাদের প্ল্যান যে-কোনো ভাবে আমরা ব্যারাকপুর বা আরো নীচে নেমে যাবো। পরশু ১২ তারিখ দুপুর একটা থেকে দু'টোর মধ্যে সী এক্সপ্লোরার ইনস্টিটিউট পৌঁছে আমাদের অভিযান শেষ হবে।"

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments