Header Ads

পশ্চিমবঙ্গের যেসব পণ্য জিআই স্বীকৃত


জি.আই মানে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন যার বাংলা অর্থ হলো ভৌগোলিক স্বীকৃতি। এটি একটি স্বাক্ষর বিশেষ। কোনো প্রোডাক্টের সঠিক ভৌগোলিক মর্যাদা দিতে ব্যবহার করা হয় এই স্বাক্ষর। একটি প্রোডাক্ট যে অঞ্চলে প্রথম উৎপাদিত হয়৷ সেই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশে জিআই বিশেষ সহায়তা করে। 


আমরা এই প্রতিবেদনে আলোকপাত করবো পশ্চিমবঙ্গের যেসব পণ্যে জিআই আছে তা নিয়ে। 

বাংলার যেসব পণ্যে জিআই আছে তা হলো দার্জিলিং চা, নকশি কাঁথা, শান্তিনিকেতনী চর্মজাত সামগ্রী, তুলাইপাঞ্জি চাল, গোবিন্দভোগ চাল, লক্ষ্মণভোগ আম, ফজলি আম, হিমসাগর আম, শান্তিপুরী শাড়ি, বালুচরী শাড়ি, ধনেখালি শাড়ি, পটচিত্র, সীতাভোগ, মিহিদানা, রসগোল্লা, জয়নগরের মোয়া, মাদুরকাঠি, ছৌ মুখোশ, কুশমান্ডির কাঠের মুখোশ, ডোকরা, মনসা চালি ও পাঁচমুড়ার টেরাকোটা। 

দার্জিলিং চা যা স্বাদে ও গন্ধে বিশ্ববিখ্যাত। ২০০৫ সালে জিআই তকমা পায় দার্জিলিং চা। এটিই বাংলার প্রথম জিআই স্বীকৃত পণ্য। বীরভূম জেলার অন্যতম হস্তশিল্প হলো শান্তিনিকেতনী চর্মজাত সামগ্রী। মালদা জেলা আমের জন্য বিখ্যাত। মালদা জেলায় উৎপাদিত বাংলার নিজস্ব জাতের আম হলো লক্ষণভোগ আম, ফজলি আম ও হিমসাগর আম। এই তিন প্রকার আম অত্যন্ত সুস্বাদু। সূদুর মার্কিনে লক্ষণভোগ আম রপ্তানি করা হয়। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে উৎপন্ন হয় তুলাইপাঞ্জি চাল যার স্বাদ বিশ্ববিখ্যাত। লন্ডন অলিম্পিকের ফুড ফেস্টিভ্যালে এই চালকে পাঠানো হয়েছিল। তুলাইপাঞ্জির মতো আরেক প্রকার সুস্বাদু চাল হলো গোবিন্দভোগ চাল। পায়েস, খিঁচুড়ি ও ফ্রায়েড রাইস তৈরির জন্য একদম উপযুক্ত চাল হলো গোবিন্দভোগ চাল৷ বর্ধমান, হুগলি, নদীয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াতে চাষ হয় এই চালের।   

নকশি কাঁথা হলো সাধারণ কাঁথার ওপর নকশা আঁকা বিশেষ প্রকারের কাঁথা। বাংলার লোকশিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো নকশি কাঁথা। গ্রামাঞ্চলে এটি সর্বাধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। বাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য হলো পটচিত্র। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা ও নয়াগ্রামের পটচিত্র জগদ্বিখ্যাত। বাংলার আরেক প্রাচীন শিল্প হলো ডোকরা। বাঁকুড়া, বর্ধমান ও পুরুলিয়া ডোকরা শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এর এক বিরাট অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে জঙ্গলমহলে। বাঁকুড়া জেলার পাঁচমুড়া গ্রাম টেরাকোটার জন্য বৃদ্ধি করেছে বাংলার নাম। এই গ্রামের চারশো থেকে সাড়ে চারশো জন মানুষ এই শিল্পের সাথে যুক্ত। এই শিল্পের জিআই অর্জনের ফলে মোটা অর্থ সংগ্রহের সুযোগ পাচ্ছে পোড়ামাটির শিল্পীরা।টেরাকোটা ছাড়াও বাঁকুড়াতে তৈরি মনসা চালিরও বিশেষ কদর আছে। পুরুলিয়া জেলার নিজস্ব নৃত্য ছৌতে যে মুখোশ তৈরি হয়, যাকে ছৌ মুখোশ বলা হয়। এই ছৌ মুখোশে দেখার মতো শৈল্পিক কারুকার্য তৈরি করা হয়। পুরুলিয়া ছৌ মুখোশের মতো দক্ষিণ দিনাজপুরে একপ্রকার কাঠের মুখোশ তৈরি করা হয়। কুশমান্ডির কাঠের মুখোশ দুই দিনাজপুর জেলার মুখোশ নৃত্যতে ব্যবহৃত হয়৷ 

দুই মেদিনীপুর জেলার এক গর্বের শিল্প হলো মাদুর। গ্রামাঞ্চলের দিকে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীরা এই মাদুর তৈরি করে থাকে। নদীয়া জেলার শান্তিপুরের তাঁত শাড়ি। এই শাড়ির কারুকার্য, নক্সা ও পাড়ের সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো। শান্তিপুরী শাড়ির মতো বাংলার আরেক প্রসিদ্ধ শাড়ি হলো বালুচরী শাড়ি৷ যার উৎপত্তিস্থল বাঁকুড়ার ঐতিহাসিক শহর বিষ্ণুপুর। শুধু তাই নয়, হুগলি জেলার কার্পাস তুলোর সুতো দিয়ে বানানো ধনেখালি শাড়িও বাংলার অন্যতম প্রসিদ্ধ শাড়ি। এই শাড়ি মূলত হুগলির ধনেখালি অঞ্চলে উৎপাদিত হয়।

আর বাঙালি মানেই তো মিষ্টি। বাংলার মিষ্টির মতো এমন রসালো মিষ্টি আর কোথায় আছে। তাই বাংলার মিষ্টি জিআই পাবে না এটা কী আর হয়। রসগোল্লা কার? ওড়িশার না বাংলার? এই বিতর্ক যখন কোর্টে উঠলো তখন জয় পেল বাংলা। নবীন ময়রা যে রসগোল্লা আবিষ্কার করেছিলেন সেই সত্যটা বেরিয়ে আসে৷ ২০১৭ সালে বাংলার রসগোল্লা অর্জন করলো জিআই ট্যাগ। আর সীতাভোগ, মিহিদানা ও জয়নগরের মোয়াতে তো জিআই রসগোল্লার বহু আগে  থেকেই ছিল। বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানা বাংলার দুই প্রসিদ্ধ মিষ্টি, বাঙালিই কেবল জানে এই দুই মিষ্টির কী পরিমাণ স্বাদ আছে। জয়নগরের মোয়া নিয়ে তো আলাদা করে বলার কিছুই নেই। 

পশ্চিমবঙ্গের এতোগুলো পণ্য জিআই স্বীকৃতি অর্জন করেছে। যা বাংলার অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের আরো বেশ কিছু পণ্যে জিআই তকমা পাওয়া সময়ের অপেক্ষা। শক্তিগড়ের ল্যাংচাকে জিআই ট্যাগ দাগানোর জন্য ইতিমধ্যেই উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে। এছাড়াও আরো কয়েকটি পণ্য জিআই ট্যাগ পাওয়ার দৌড়ে রয়েছে যেমন নদীয়ার লাল দই, মেচা সন্দেশ, জনাইয়ের মনোহরা প্রভৃতি। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments