Header Ads

প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে বিমানে চড়েন নির্মলা নেলি সেন


এককালে বিমানে চড়া মানে সে এক রাজকীয় ব্যাপার। কজনেরই বা সামর্থ্য ছিল তখন বিমানে চড়ার। মহা অভিজাত পরিবারের লোকেরা ছাড়া কেউ বিমানে চড়তে পারতো না। এদেশে তো আবার সেকেলে লিঙ্গ বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছিল। পুরুষরাই তুলনামূলক বেশি চড়তো বিমানে। আর মহিলাদের সংখ্যা তো প্রায় হাতে গোণা বা চড়তো না বললেই চলে।


সালটা ১৯১০। ২৮ শে ডিসেম্বর কনকনে শীতের সকালে কলকাতার টলি ক্লাব গ্রাউন্ড থেকে উড়েছিল ভারতের প্রথম শখের বিমানটি৷ আর সেই প্রথম উড়ানের যাত্রীদের মধ্যে একজন ছিলেন 'মিসেস সেন'। ইতিহাসের পাতাতে চোখ রাখলে দেখা যায়, এই 'মিসেস সেন' ছিলেন ঊনিশ শতকের বাংলার বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক কেশবচন্দ্র সেনের পুত্রবধূদের মধ্যে একজন। ইনিই প্রথম ভারতীয় বাঙালি মহিলা হিসেবে প্লেনে চড়েন। 

গবেষক দেবাশিস চক্রবর্তী দেশ-বিদেশের নানান নথি ও ক্লিপিংস ঘেঁটে জানতে পারেন এই তথ্য। তাঁর গবেষণা বলছে, টলি ক্লাব থেকে প্লেনে চড়া মহিলাটি মিসেস সেন আসলে আর কেউ নন, তিনি এই নির্মলা নেলি সেন। 'মিসেস সেন' যখন প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে প্লেনে চাপছেন, কলকাতা তখনও ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল।  

নির্মলা নেলি সেন ছিলেন কলকাতার একটি অভিজাত পরিবারের মেয়ে, তাঁর বাবা পূর্ণচন্দ্র সেন বহুকাল বার্মার অ্যাডভোকেট জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আজ থেকে ঠিক একশো আট বছর আগে একটি হাম্বার সোমনার বাইপ্লেনে বেলজিয়ান পাইলটের পাশে একমাত্র যাত্রী আসনটিতে বসে কয়েক মিনিটের জন্য আকাশে উড়েছিলেন তিনি। 

রাইট ভাইদের সফল বিমান যাত্রার আট বছর পর ১৯১০ সালে একটি আস্ত বিমানের সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ নিয়ে মুম্বাই বন্দরে নেমে পড়লেন দুই বেলজিয়ান প্লেন এক্সপ্লোরার ব্যারনপিয়ের দ্য ক্যাটার্স ও জুল টিক। ঐ দুই বেলজিয়ানের উদ্দেশ্য ছিল মুম্বাইয়ে ধনী ইউরোপীয়ান ও ভারতের রাজা-মহারাজা ও সম্ভ্রান্ত বংশের লোকেদের বিমানে চড়ার স্বাদ জাগানো। আর এর সাথে প্রচুর টাকা কামানোর সুযোগ নেওয়া। কিন্তু মুম্বাইয়ের নগর কর্তৃপক্ষ বিমান ওড়ানোর অনুমতি দিলেন না। ওনারা এমন অবস্থায় ভেঙ্গে না পড়ে বিমানের সব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ট্রেনে চাপিয়ে সটান পাড়ি দিলেন কলকাতায়। 

কলকাতায় পা রাখার পর কলকাতার বিখ্যাত 'টলি ক্লাবে'র সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হয় তাদের। 'টলি ক্লাব' কর্তৃপক্ষের তরফে ঐ দুই বেলজিয়ান প্লেন এক্সপ্লোরারকে প্লেন ওড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়৷ প্লেনটিকে 'টলি ক্লাবে'র সামনে বিশাল মাঠটিতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এই প্লেনগুলো হলো ছোটো আকারের বাইপ্লেন। সাধারণত যেসব প্লেনে দুই ডানার ওপরে-নীচে দুটি করে ব্লেড লাগানো থাকে, তাকে বাইপ্লেন বলা হয়। প্লেনটি মাঠ থেকে পরীক্ষার জন্য ট্রায়াল হিসেবে ওড়ানো হয়। প্লেনটিকে দেখার জন্য ঝাঁক ঝাঁক লোকের ভিড়ে গোটা মাঠ গমগম করছিল৷ এই ট্রায়াল ফ্লাইটেই বেলজিয়ান পাইলটের পাশে বসে 'মিসেস সেন' আকাশ ছুঁয়ে ফেললেন। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments