ফিরে আসুক শাল পাতার ঐতিহ্য
কৃত্রিমতা যেন আমাদের একটু একটু করে গ্রাস করে চলেছে। প্রকৃতি থেকে নিজেদের আমরা সরিয়ে নিয়ে কৃত্রিম জীবনে ঢুকে পড়ছি। যার ফলে অনেক ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে ফেলছি। সমাজ বদলাবে, মানুষের জীবনযাপন পরিবর্তিত হবে একথা তো আমরা সকলেই জানি। আমাদের কৃত্রিমতা অনেক মানুষের জীবিকা কেড়ে নিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে শালপাতার কথায় যদি বলা যায়। এখন বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়ার জন্য থার্মোকলের থালা ব্যবহার করা যাচ্ছে। আগে যেখানে শালপাতা ব্যবহার করা হতো।
আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোকপাত করবো যে বিষয়ে তা হলো শালপাতার ঐতিহ্য ফিরে আসুক। এককালে যে-কোনো বিয়েবাড়ি, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, পিকনিক, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ও পুজোতে খাওয়া-দাওয়াতে শালপাতা ব্যবহৃত হতো। ডুয়ার্স ও জঙ্গলমহলের বহু নিম্নবিত্ত মানুষের জীবিকা শালপাতার থালা বানানো। এতে মোটা টাকা রোজগারের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। শালপাতা আহরণ এবং শালপাতার থালা ও বাটি বানানোকে কেন্দ্র করে বহুমুখী মূলধনের সুযোগ পেয়ে থাকেন সাধারণ মানুষ। শালপাতার থালা ও বাটি বানানোর জন্য এক ধরণের মেশিন কিনতে পাওয়া যায়। এই মেশিনগুলোও শালপাতা ব্যবসায়ীরা মেশিনারি দোকান থেকে কিনতো। ফলে মেশিনারি দোকানদারদের হাতেও কিছু টাকা আসতো।
শুধু যে উৎসব-অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়ার জন্যই শালপাতা ব্যবহৃত হয় এমনটাও কিন্তু নয়। শালপাতার বহুবিধ ব্যবহার আছে। যেমন শালপাতায় তৈরি মাংস ও পিঠের স্বাদ কোথাও পাওয়া যাবে না। কাঠের আগুনে শালপাতার মধ্যে মাংস কিংবা পিঠের মূল উপকরণ মুড়ে দিয়ে আগুনে শালপাতাটিকে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর আগুনে জাল দিলে যে পোড়া গন্ধ বের হয় তা খাদ্যরসিকদের উন্মত্ত করে দিতে পারে। যাদের মাথা ভার হওয়ার রোগ আছে, প্রায় বিকেলের দিকে মাথা ভার হয় আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্বর এলের মাথা টললটল করে, বুক ভারী ভারী লাগে সেই সময় ২ থেকে ৩ টি শালপাতা ৪ কাপ জলে সেদ্ধ করে আন্দাজমতো এক কাপ ছেঁকে সকাল ও বিকেলে দুবার পান করলে তা সেরে যায়। শালা পাতাকে কাজে লাগিয়ে শালপাতার বিড়ি বানানো হয়। শালের পাতা কৃমি, রক্ত আমাশয়, অম্ল রোগে উপকার আসে। জ্বালানির কাজেও শালপাতা ব্যবহৃত হয়। শাল পাতা পচিয়ে এক ধরণের সার বানানো হয় যা চাষের কাজে বা বাগানে ফুলগাছ পরিচর্যার কাজে লাগে।
বর্তমানে আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে শাল পাতার মতো প্রাকৃতিক সম্পদকে আমরা বর্জন করে ফেলছি। উৎসব-অনুষ্ঠানে আজকাল থার্মোকল ও প্লাস্টিকের থালা-বাটি ব্যবহার করার জন্য শাল পাতার অর্থনৈতিক গুরুত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। বহু মানুষ জীবিকা হারিয়ে ফেলছে। শাল পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা অবহিত নই বলেই এমনটা ঘটছে। শাল পাতা পরিবেশ বান্ধব। শাল পাতা মাটিতে ফেলে দিলে সার হয়ে তা মাটিতে মিশে যায়। অথচ থার্মোকল মাটিতে মেশে না, এগুলো যত্রতত্র নিক্ষেপ করার ফলে মৃত্তিকা দূষণ বাড়ছে। বর্ষাকালে এগুলো জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে নদীনালা, পুকুর, বাঁধ ও খাল-বিলে জমা হয়ে জলদূষণ বৃদ্ধি করছে। শুধু আধুনিক হলেই হবেনা পরিবেশ রক্ষার দিকটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
তাই আসুন শাল পাতার ঐতিহ্যকে আমরা রক্ষা করি। পরিবেশ বাঁচানোর শপথ করি। শাল পাতার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে হলে জনসাধারণকে শাল পাতার ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত করতে হবে৷ মানুষকে বোঝাতে হবে পরিবেশ বান্ধব জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করার মূল্য। প্রশাসনকেও শাল পাতা ব্যবহারের জন্য কড়া নিয়মকানুন বানাতে হবে। প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য বর্জনের জন্য প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে আমাদের ও বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে শাল পাতার ঐতিহ্য আগের জায়গায় ফিরে যাবে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Nite chai
ReplyDelete