Header Ads

বাংলার এক গুরুত্বপূর্ণ হস্তশিল্প হলো কালনার রাখি শিল্প


ঘরোয়া শিল্পের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে রাখি শিল্প। রাখি এই শব্দটির মধ্যে আলাদা অনুভূতি লুকিয়ে আছে। একে অপরের সাথে মেলবন্ধন, ভাতৃত্ববোধ ও ভাই-বোনের মধুর সম্পর্কের প্রতীক হলো রাখি। অতএব রাখি শিল্পের কদর তো থাকবেই। পশ্চিমবঙ্গে রাখি শিল্পের যথেষ্ট রমরমা রয়েছে। আর রাখি শিল্প মানেই পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার রাখি শিল্প। কালনা শহরের লাখ লাখ শিল্পী যুক্ত রাখি শিল্পের সাথে। বাংলার হস্তশিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হলো রাখি। 


পৌরাণিক কাহিনী মতে রাখির প্রচলন কেবল আজকের নয়। মহাভারতে  উল্লেখ আছে, একটি যুদ্ধে কৃষ্ণের কবজিতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হলে পাণ্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল খানিকটা ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। এতে কৃষ্ণ অভিভূত হয়ে যান। দ্রৌপদী তাঁর অনাত্মীয়া হলেও, তিনি দ্রৌপদীকে নিজের বোন বলে ঘোষণা করেন এবং দ্রৌপদীকে এর প্রতিদান দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সময় এই ভাবে রাখির প্রচলন হয়েছিল। 

বর্তমানে আমরা বাংলাতে যে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করি। তার সূত্রপাত ঘটেছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে। বঙ্গভঙ্গ রদ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজন ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির। কারণ বঙ্গভঙ্গ সফল করার জন্য ব্রিটিশরা এ দেশের বুকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বীজ বপন করেছিল। এমতাবস্থায় হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মকে সম্প্রীতির বাঁধনে আবদ্ধ করতে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয়েছিল৷   

বাংলার ইতিহাসের সঙ্গে রাখির এক গভীর সম্পর্ক লুকিয়ে আছে। সেই সম্পর্ক অটুট রাখা বাঙালির নৈতিক কর্তব্য। তাছাড়াও রাখির ব্যবসায়ীক দিকটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। রাখি শিল্প ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আওতায় পড়ে মানে এই নেই যে বাংলার আর্থিক উন্নয়নে তার ভূমিকা নেই। শুধু বৃহৎ শিল্প গড়লেই হয়না কুটির শিল্পের ওপরও জোর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা কুটির শিল্পের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। 
 
কালনা মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রাখি শিল্পের প্রবল বিস্তার ঘটেছে। এখানকার বহু পরিবার বংশানুক্রমে এ শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কালনার রাখি যে কেবল বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়, বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন কোণায় কোণায় বিস্তৃত কালনার রাখি। কালনাতে প্রচুর পরিমাণে রাখি তৈরির কারখানা আছে। যেখান থেকে রাখির মরসুমে মোটা মূলধন আসে। সুতো, চুমকি, উল, পুঁথি ও রিবন ইত্যাদি দিয়ে এখানকার রাখি বানানো হয়। কালনার রাখিতে শিল্পীদের অসামান্য কারুকার্যের ছাপ থাকে। সারা  ভারতে প্রয়োজনীয় রাখির একটা বড় অংশের চাহিদা মেটায় কালনা মহকুমার শিল্পীদের হাতে তৈরি রাখি। 

২০২০ সালে লকডাউনের কারণে বন্ধ ছিল সবরকম আচার-অনুষ্ঠান। এ বছরটা কালনার রাখি ব্যবসায়ী ও রাখি শিল্পীদের জন্য একটা দুঃসময়। অন্য বছরের মতো এ বছর রাখি খুব একটা বিক্রি হয়নি। রুটি-রোজগারের তাগিদে বহু মানুষকে রাখি শিল্প ছেড়ে অন্য পেশায় মনোনিবেশ করতে হয়েছে। তবে আগামী বছর এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে বিশ্বাস কালনার রাখি ব্যবসায়ী তথা রাখি শিল্পীদের। বাংলার এই শিল্প জাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য সকল বাঙালিকে নজর দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পিছনে কালনার রাখিরও অনেকটাই অবদান রয়েছে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments