বর্তমানে ছাত্র-যুবরা কী আন্দোলনবিমুখ হয়ে পড়ছে?
IIFL ওয়েলথ হারুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্টের তথ্য অনুযায়ী অতিমারি করোনার ফলে লকডাউনের পরে ঘন্টায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে বেশ কিছু নামী কোম্পানিগুলির। এই সময়কালে ভারতের বড় বড় সব পুঁজিপতিদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
অপরদিকে CMI এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ বছরের শুধু এপ্রিল-আগস্ট মাসে দেশে বাঁধা বেতনের চাকরি খুইয়েছে ২.১ কোটি মানুষ, অসংগঠিত ক্ষেত্রে তো অগণিত-অসংখ্য। অর্থাৎ দরিদ্র আরো দরিদ্র হচ্ছে, ধনকুবের আরো ধনী হচ্ছে। এগুলি সম্ভবপর হচ্ছে অবশ্যম্ভাবী ভাবে কোনো এক রাজনৈতিক দলের ইচ্ছেতেই। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় গত পাঁচ বছরে দেশের বেকারত্ব চরমে, খাদ্য সংকট তীব্র, জীবন ধারণের নূন্যতম জিনিস কেনা (বেসিক নীডস) আজ ক্রমশ সাধারণ মানুষের কাছে অসম্ভব হয়ে উঠছে অথচ পুঁজিপতিদের ঋণ মুকুব হয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে সাধারণ মানুষকে মত্ত করে রাজনীতি চলছে। কেউ ভেবেছিলেন এমনটা ??? বেশ কিছু যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়কেও আজ ক্ষমতার জোরে অগণতান্ত্রিক-অসংসদীয় পদ্ধতিতে পাশ করিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানা হচ্ছে। আমরা আগে যা কল্পনা করতে পারি নি তাই হচ্ছে, পুঁজিপতিদের ভান্ডার ফুলে-ফেঁপে উঠছে, দরিদ্র আরো দরিদ্র হচ্ছে-- যা পূর্বে হয়নি বা হবেও কেউ কল্পনাও করেনি। প্রত্যাশা রেখেছিল মানুষ নতুন সরকারের থেকেও আরো বেশী সুযোগ পাবে, বছরে কোটি কোটি কর্মসংস্থান হবে কিন্তু বাস্তব কি বলছে ?
বাস্তব বলছে - ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া পুঁজিপতিদের ফাইল পুঁড়ে গেছে, স্বাধীনতার পরবর্তী কালে সর্বোচ্চ বেকারত্ব, দেশের জিডিপি সঙ্কুচিত ২৩.৯ %, রিজার্ভ ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী এই অর্থবর্ষে তা কমবে ৯.৫%। আইএমএফ এর পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি বছরে মাথাপিছু জিডিপির নিরিখে ভারতের স্থান হতে পারে বাংলাদেশের পিছনে। ভারতবর্ষে এরকম এক সংকটময় অর্থনৈতিক ধসেও কৃষি ব্যবস্থা কিছুটা হলেও আলোকবর্তিকা প্রদর্শন করছিল, সেই কৃষি ব্যবস্থাকেও পুঁজিবাদীকরণের বৃহৎ চেষ্টা চলছে দেশে।
দেশের নানান অসাংবিধানিক আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলেছে, এখনো চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে । চলছে রাজনৈতিক পতাকার ছত্রছায়ায়, তা চলতেই পারে এবং চলুক ও। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বিক্ষোভ-বিদ্রোহ কোথায় ?? মূলত যারা বিদ্রোহের অগ্রদূত সেই (সমগ্র) ছাত্র-যুব সমাজ সামগ্রিক স্তরে রাজ শক্তির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কি গর্জে উঠেছে ??
হয়নি। কেন বলুন তো ?? কারণ টা খুব স্পষ্ট- প্রথমত ছাত্র-যুবদের রাজনৈতিক অসচেতনার মধ্যে রাখা হয়েছে, দ্বিতীয়ত- তাদের সামনে ভোগ-সর্বস্ব জীবন রিপ্রেজেন্ট করে তাদেরকে নিজেদের সুখ-স্বচ্ছন্দের পিছনে ছুটতে মত্ত করে রাখছে।
গত শতাব্দীতেও ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে যখন ব্রিটিশ দের বিরুদ্ধে আমরা লড়েছি, তার পুরোভাগে ছিল ছাত্র-যুবরাই, ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে পরিবর্তন এনেছে ছাত্র-যুবদের মিলিত প্রয়াস। তবে এখন কেন এইরকম করুণ পরিণতি ?? শোষণের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব নিষ্ক্রিয় কেন ? কেন তারা গর্জে উঠে নিপীড়িত সমাজ ব্যবস্থা কে ঠিক পথে আনার দায়িত্ব নিচ্ছে না ???
ক্ষমতা হস্তান্তরের (ভারতের স্বাধীনতার) সময় থেকেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মদতপুষ্ট হিন্দী সাম্রাজ্যবাদীদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে দীর্ঘ ৭৪ বছর আগেই দেশের ছাত্র-যুব শ্রেণীর নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলার ঘৃণ্য চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সেই সময় থেকে যৌন আবেদন মূলক চলচ্চিত্র, নেশাকে আধুনিকতার মোড়কে সূচিকা ভরণ করা, বড়লোকি হাবভাব মার্কা চলচ্চিত্রের প্রচার প্রসারের মাধ্যমে ছাত্র-যুবদের মন থেকে "বিপ্লব" নামক জিনিসটিকে ভূলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছিল এবং বর্তমানেও তা অব্যাহত। এছাড়া বার ক্যাবারে, পতিতালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান কে হাতের নাগালের মধ্যে এনে ছাত্র-যুব দের নৈতিকতা শিথিল করার চেষ্টা চলছে অনবরত। কয়েকমাস আগে এক হিন্দি ওয়েব সিরিজে তো আবার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রথম আত্মবলিদানকারী ক্ষুদিরাম বসুকে অপরাধীদের তালিকায় দেখানো হয়। এখনতো আবার এই সমস্ত ছবির নায়কগণ ই সমাজের আইডল !! আর আইডল কে অনুকরণ করাই স্বাভাবিক। ঠিক এভাবেই প্রচার যন্ত্রকে অস্ত্র করে ছাত্র-যুবদের উপর তাদের অজান্তেই মানসিক শোষণ কায়েম করে ঠিক-বেঠিকের চিন্তা ভূলিয়ে সমাজে তীব্র অর্থনৈতিক শোষণ চালাচ্ছে পুঁজিপতি গোষ্ঠী।
তাহলে এখন উপায়?? যারা সমাজের হিতার্থে যুক্ত, সেই সকল স্তরের মানুষের কর্তব্য, আজ প্রত্যেকটি ছাত্র-যুব দের মধ্যে নৈতিক শক্তি গড়ে তোলার শিক্ষা, শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই এর শিক্ষা-সচেতনতা প্রদান করা। ছাত্র যুব দের দিকে চেয়ে আছে শোষিত- নিপীড়িত- লাঞ্ছিত- বঞ্চিত মানবতা চেয়ে আছে, আজ মানবতা জাতিকে বাঁচাতে প্রত্যেকটি ছাত্র-যুবকে ঐক্যবদ্ধ করার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা জানি একদিন তা সফল হবেই, ছাত্র-যুব ঐক্যবদ্ধ হবেই, তাদের মিলিত প্রয়াসে ভেঙে পুঁজিপতিদের মগজ ধোলাই এর কারবার, স্তব্ধ হবে অপরাধী দানবদের চিৎকার। আর এই কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হবে "বাংলা ভাষী-বাঙালী" ছাত্র-যুবদের মাধ্যমে। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বহু আশা করে বলেছিলেন "হে বাংলার ছাত্র ও তরুণ সমাজ। তোমরা পরিপূর্ণ ও অখন্ড মুক্তির উপাসক হও। তোমরাই ভবিষ্যৎ ভারতের উত্তরাধিকারী; অতএব তোমরাই সমস্ত জাতিকে জাগাইবার ভার গ্রহণ করো।" তাই বাঙালী ছাত্র-যুবদের সজাগ ও সচেতন হয়ে সমস্ত শোষণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে ক্ষত-বিক্ষত সমাজ ব্যবস্থাকে শান্তির প্রলেপ দেওয়ার কাজ শুরু করে সমস্ত জাতিকে জাগিয়ে তোলে শোষণকে চিরতরে ধ্বংস করতে হবে
জয় আমাদের হবেই হবে ।।
প্রতিবেদন- তপোময় বিশ্বাস (কেন্দ্রীয় সচিব, বাঙালি ছাত্র-যুব সমাজ)
Post a Comment