Header Ads

মহা সাড়ম্বরে আয়োজিত হলো হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের প্রথম পরিবেশকর্মী সম্মেলন


গত ১৩ই ডিসেম্বর ফুলেশ্বরের জগৎপুর আনন্দ ভবন ডেফ এন্ড ব্লাইন্ড স্কুলের পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছিল হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের উদ্যোগে প্রথম পরিবেশকর্মী সম্মেলন। যেখানে হাওড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২০টিরও বেশি সংগঠন থেকে ৬০জন প্রতিনিধি জড়ো হয়ে জেলার পরিবেশ প্রকৃতির নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। 


এই সম্মেলনের মূল স্লোগান ছিল "শুধু নয় সচেতনতা, এবার চাই সক্রিয়তা।" কেবল পরিবেশ রক্ষার তাত্ত্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করলেই হবে না, মাঠে নেমে প্রকৃতিকে বাঁচাতে কীভাবে সক্রিয় ভাবে   কাজ করা হবে তার দিকনির্ণয়ের চেষ্টা করা হয়। হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সভাপতি মাননীয় সৌরেন্দু শেখর বিশ্বাস মহাশয়ের নিজস্ব ভেষজ উদ্যানের মাধ্যমে সারা জেলায় ভেষজ ও দেশীয় গাছের চারা বিলি কর্মসূচী আরো জোরদার করার ডাক দেওয়া হয় তাঁর নিজস্ব বক্তব্যের মাধ্যমে। এরপর জেলার ১৪টা ব্লক, ১টি পুরসভা ও ১টি কর্পোরেশন জুড়ে ইউনিট তৈরি করে কাজ করার পরিকল্পনা পেশ করেন পরিবেশ মঞ্চের কোষাধ্যক্ষ তথা সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সায়ন দে। আলোচনায় এরপর উঠে আসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন শীতকালীন পিকনিকে নদী নালা খাল বিলের ধারে যথেচ্ছভাবে থার্মোকল, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য গত দুবছরের মতো এবছরেও সক্রিয় ভাবে অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত হয়। গবেষক সৌরভ দোয়ারী জানান জেলা জুড়ে পরিবেশকর্মীদের ডেটাবেস তৈরি করা হবে। নদীতে বিষ দেওয়া, বন্যপ্রাণ উদ্ধার সংক্রান্ত বিষয়ে এই তথ্যভাণ্ডার বিরাট সাহায্য করবে বলে জানান তিনি। শহর হাওড়ার পরিবেশগত সমস্যার কথা তুলে ধরেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের হাওড়া জেলা কমিটির সদস্য শংকর মুখার্জী মহাশয়, গবেষক সন্দীপ বাগ ও মঞ্চের সহঃ সম্পাদক সম্রাট মন্ডল মহাশয়। জেলাশাসক, জেলা স্তরের পুলিশ প্রশাসনের কাছে এই নিয়ে আবেদন ও ডেপুটেশনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। পুকুরে জাল ঘিরে মাছরাঙা সহ পাখিদের হত্যার বিরুদ্ধে এবার জোরদার আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। এই কাজে সাফল্য এনেছেন শিক্ষক ও পরিবেশকর্মী অজয় দাস মহাশয়। তিনি এই নিয়ে একটি পরিকল্পনার কথা জানান। রাজ্যের বায়োডাইভার্সিটি বোর্ডের সাথে কীভাবে সমন্বয় করে পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষার কাজ করা যায় সে নিয়ে দীশা দেখান ডোমজুড় বায়োডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য দেবর্ষি মণ্ডল মহাশয়। সেখ মুজিবর রহমান খাল সংস্কার ও খাল নদীনালা দূষণ নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানান। প্রদীপ রঞ্জন রীত প্রস্তাব দেন জেলায় বাঘরোলের মুক্তাঞ্চল তৈরি করা যায় কিনা সরকারী বা বেসরকারী ভাবে। বাঘরোল নিয়ে কাজ করা শুভজিৎ মাইতি সবাইকে কমিউনিটি রিজার্ভ ফরেস্ট এর ধারণা দেন। 

মানুষের জীবন জীবিকা, বেঁচে থাকার লড়াই ও অন্যদিকে পরিবেশ প্রকৃতি বাঁচানোর লড়াই - এই দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতা আনার প্রশ্নগুলো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে আলোচনা করেন পুরুলিয়ায় আদিবাসী ও বনাঞ্চল রক্ষা করা নিয়ে আন্দোলন করা হাওড়ার রানীহাটির ছেলে সৌরভ প্রকৃতিবাদী। পরিবেশ গবেষক সৌভিক পাল জানান বিজ্ঞানের ছাত্রদের প্রজেক্টে পরিবেশ মঞ্চের নানা উদ্যোগকে সামিল করবেন এবং প্লাস্টিকের বিকল্প নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন নিরন্তর। হাওড়া জেলায় তা প্রয়োগ করতে পরিবেশ মঞ্চের হাত ধরবেন। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে সমন্বয় সাধন করে কাজ করার ডাক দেন সঞ্জিবন হাসপাতালের প্রতিনিধি যোগেশ দেঁড়ে মহাশয়। সবশেষে সরকার ও প্রশাসনের পরিবেশ নিয়ে ক্রমাগত ঔদাসীন্য কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে যে কোন আন্দোলনে পথে নামার জন্য, ডেপুটেশন দেবার জন্য দরকার পড়লে অনশন করার জন্য আহ্বান জানান পরিবেশ ও সমাজকর্মী সেখ সাইদুর রহমান সাহেব।

দুপুরে খাওয়াদাওয়া, গ্রাম্য পরিবেশ পাখি বনাঞ্চল পরিদর্শন ও পিকনিকের আমেজে আড্ডা, গান বাজনার মধ্য দিয়ে পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে এক সুন্দর দিন কাটে সবার। এলাকার মানুষজনও উঁকিঝুঁকি মেরে বুঝতে চান। অনেকে অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন পরিবেশ নিয়ে ভাবতে, বাঘরোল, মাছরাঙা, কচ্ছপ নিয়ে ভাবতে, গাছ বসানোর দাবী জানাতে সারাদিন ধরে এতো মানুষ উৎসাহ নিয়ে মিলিত হবেন এটা তারা ভাবেন নি।

এভাবেই সক্রিয় কাজকর্মের মধ্যদিয়ে জেলায় সবাইকে নিয়ে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে চলবে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ। 

প্রতিবেদন - নিজস্ব সংবাদদাতা
 

No comments