Header Ads

মৃত্যু উপত্যকার একলা ড্রাকুলা, অতীত-বর্তমানের যুগলবন্দীতে সময়ের সেরা ছবি ড্রাকুলা স্যার


পুজোতে মুক্তি পেয়েছে পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত বাংলা ছবি 'ড্রাকুলা স্যার।' এই মাসেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও মুক্তি পেয়েছে এ ছবি৷ ড্রাকুলা হলো এক জনপ্রিয় বিদেশি ভৌতিক চরিত্র। যে চরিত্রকে প্রেক্ষাপট করেই সাজানো হয়েছে ছবির গল্প। রক্তিম নামের এক সভ্রান্ত পরিবারের বাঙালি ভদ্রলোক। যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। হুগলির এক স্কুলে তিনি বাংলা পড়ান। যিনি ক্রমশ ড্রাকুলা হয়ে উঠতে থাকেন। নিজেও বুঝে উঠতে পারেন না কেন এমন হয়ে যাচ্ছেন তিনি৷  


রক্তিম বাবুর ড্রাকুলার মতো দুটো বড়ো বড়ো দাঁত আছে। ঠিক এই কারণে লোকে তাকে ড্রাকুলা স্যার বলে সম্বোধন করেন। তিনি বাচ্চাদের কামড়ে দেন বলে বাচ্চারা তাকে ভয় পায়। তিনি নিজের বড়ো দাঁত দুটোকে ঢেকে রাখার জন্য মুখে রুমাল দিয়ে সবসময় কথা বলেন। তিনি যে বাড়িতে থাকেন সেখানে কম ভাড়াতে থাকার জন্য  বাড়িওয়ালার শর্ত মেনে ঐ বাড়ির বুল্টাই নামে এক বাচ্চাকে দাঁত বের করে তিনি ভয় দেখাতে থাকেন। স্কুলের এক ট্রাস্টির ছেলের ছবিতে তাকে ড্রাকুলার চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ডেকে পাঠানো হয়, সেখানেই ঘটে বিপত্তি। সিনেমার মুখ্য অভিনেত্রীর ঘাড়ে কামড়ে দেন তিনি।  

এ ঘটনার পর কয়েকদিন বাড়িতে অন্তরীন থাকেন তিনি। তারপর একদিন স্কুলে গেলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর রক্তিম একা একা আবার বাড়িতে দিন কাটাতে থাকেন। সারাদিন তিনি কী যে করেন সব গুলিয়ে ফেলেন। ঐ বাড়ির বাড়িওয়ালার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে তাকে হত্যা করেন৷ নিজের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য নার্সিং হোম থেকে তিনি রক্ত চুরি করে রক্তপানও করতে থাকেন। তিনি বিড়বিড় করে মঞ্জরিকে কল্পনা করে তার সাথে গল্প করতে থাকেন। তিনি মঞ্জরীকে কল্পনা করে বলতে থাকেন "আমি দিন দিন ক্রমশ ভ্যাম্পায়ার হয়ে উঠছি।"

আপনাদের বলা হয়নি যে মঞ্জরি কে? মঞ্জরি হলো এক নকশাল নেতা অমল সোমের প্রাক্তন প্রেমিকা। রক্তিম মনে মনে ভাবতে থাকেন তিনি অমল সোম। পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার পর তার নতুন করে জন্ম হয়েছে। তাহলে সত্যিই কী যেই রক্তিম সেই অমল? রক্তিম গুলিয়ে ফেলতে থাকেন যে তিনি রক্তিম নাকি অমল। 

ছবিটিকে উপন্যাসের পরিচ্ছেদের মতো কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে সাজানো হয়েছে৷ একবাক্যে ছবির বিষয়বস্তু বিচার করতে গেলে বলতেই হয় গল্প জুড়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে মুক্তির খোঁজ। একটি অংশে যেমন সত্তরের দশকের বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থাকে একটি প্রেম কাহিনীর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। নকশাল আন্দোলনে উত্তপ্ত গোটা বাংলা। অমল সোম নামের এক নকশাল নেতা ও তার প্রাক্তন প্রেমিকা মঞ্জরী একটি প্রাচীন বাড়ির চিলেকোঠাতে আত্মগোপন করেছেন। আরেক অংশে দেখানো হচ্ছে অমল অস্থির হয়ে উঠছেন৷  পুলিশ তাকে খুঁজছেন। অমল ও মঞ্জরি দুজনেই মুক্তিলাভের সন্ধান করছেন৷ আরেক অংশে দেখা যাচ্ছে রক্তিম গুলিয়ে ফেলছেন তিনি আসলে কে? আবার কোনো একটি অংশে আমরা দেখতে পাচ্ছি রক্তিম ক্রমশ ড্রাকুলা হয়ে উঠছেন। একা রাক্ষস যেন খুঁজে ফেরে তার বাড়ি। মুক্তির জন্য রক্তিমও উন্মত্ত। 

গল্প এখনো ফুরোয় নি৷ গল্পটির কথা প্রথম থেকে শেষ দৃশ্য অনুযায়ী বর্ণনা করা অনেকটাই শক্ত৷ গল্পের অনেক কিছুই বাকী থেকে গেছে। যেগুলো আর না বলাটাই ভালো৷ কারণ ড্রাকুলা স্যার ছবির গল্পকে এতোটাই কঠিন করে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছে যে ছবির শেষ প্রান্তে এসে আপনি ছবির পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারকে বাহবা জানতে বাধ্য হবেন। পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য যে এক্সপেরিমেন্টমূলক ছবি বানাতে বেশ পাকাপোক্ত তার প্রমাণ আমরা আবারও পেলাম। 
রক্তিম ও অমলের চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং মঞ্জরির চরিত্রে মিমি চক্রবর্তী দুজনেরই অভিনয় অসাধারণ। এছাড়াও বিদীপ্তা চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ, সুপ্রিয় দত্ত, কাঞ্জন মল্লিক ও অন্যান্য কলাকুশলীরা সকলেই দূর্দান্ত অভিনয় করেছেন। ছবির অভিনয়, চিত্রনাট্য, আবহসঙ্গীত, দৃশ্য নির্ধারণ, লাইট এফেক্টস, ভিএফএক্স ও সাজসজ্জা সবকিছুই নজরকাড়া। ছবিটি দেখার পর আপনার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকবে। ছবির রেশও থাকবে খানিকক্ষণ। 

এ ছবির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ছবির গানগুলো। অমিত-ঈশানের যুগলবন্দীতে এ ছবিতে তাদের সৃষ্টি করা সব গান শিহরণ জাগিয়ে তোলে। প্রিয়তমা, রাত পোহালে ও আবার জন্ম নেবো এ তিনটে গান ছবিটিকে আরো বেশি চিত্তাকর্ষণীয় করে তুলেছে৷ এ ছবিতে অমিত-ঈশানের গানগুলো যেন একপ্রকার মাস্টারপিস৷ এ ছবি নিয়ে কথা বলতে গেলে নেগেটিভ পয়েন্টের কোনো জায়গায় নেই৷ আসলে এই ছবিটার কোনো নেগেটিভ পয়েন্টই নেই। এই ছবির ক্ষেত্রে নেগেটিভ পয়েন্ট খোঁজা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments