Header Ads

বিখ্যাত ফুটবলার হওয়া সত্ত্বেও বাঙালি ভুলে গেছে ফুটবলার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়কে


সাতের দশকে কমলা জার্সির হল্যান্ড টোটাল ফুটবলের ভারতীয় কানেকশন হিসেবে গণ্য করা হতো সুদীপ চট্টোপাধ্যায়কে। আশির দশকে মোহনবাগানে যখন তিনি প্রথম খেলতে এসেছিলেন, তখন তাঁর পজিশন ছিল সেন্টার ব্যাক৷ পরে ইস্টবেঙ্গল কিংবা জাতীয় দলে যখন তিনি খেলতেন তখন তাঁর পজিশন বদলে গিয়েছিল, উইং হাফ, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে।   


ফুটবলার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের ক্রীড়াজীবন শুরু হয় হাওড়া সহযাত্রী ক্লাবের হাত ধরে। ১৯৮১ সালে  তিনি কলকাতার প্রথম ডিভিশন লীগ দল বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে ক্লাবে যোগ দেন। প্রায় এক মরসুম এই দলে কাটিয়ে তিনি ১৯৮২ সালে কলকাতায় মোহনবাগানের হয়ে খেলতে শুরু করেন। মোহনবাগানের হয়ে দুটো বছর খেলার পর ১৯৮৪ সালে মোহনবাগানের চির প্রতিদ্বন্দ্বী দল ইস্টবেঙ্গলে চলে যান। ইস্টবেঙ্গলে থাকাকালীন তাঁকে ঐ দলের কোচ অমল দত্ত সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে স্থানান্তরিত করেছিলেন৷ তিনি ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল দলের সাথে ছিলেন। ইস্টবেঙ্গলে থাকাকালীন ১৯৮৬ সালে তিনি এআইএফএফ দ্বারা বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি আবারও মোহনবাগান দলে যোগদান করেছিলেন। একই সাথে দুটো বছর খেলে একবছরের জন্য ইস্টবেঙ্গল দলে ফিরে আসেন৷ ১৯৯১ সালে আবারো মোহনবাগানে ফিরে এসে মাত্র এক বছর খেলার পর ১৯৯২ সালে তিনি ফুটবল জীবন থেকে অবসর নেন।  

সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে ১৯৮২ সালে এশিয়ান গেমসের জন্য ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে অবসর গ্রহণের আগে পর্যন্ত তিনি ভারতীয় ফুটবল দলের খুব নির্ভরযোগ্য সদস্য ছিলেন। তিনি এশিয়ান গেমস, এশিয়া কাপ, প্রাক-বিশ্বকাপ, প্রাক-অলিম্পিক, মেরদেকা কাপ, এসএএফ গেমস এবং নেহেরু গোল্ড কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি সাফ গেমস (১৯৮৫), প্রাক-বিশ্বকাপ (১৯৮৬), এশিয়ান গেমস (১৯৮৬), মেরডেকা কাপ (১৯৮৬), নেহেরু গোল্ড কাপ (১৯৮৫ ও ১৯৮৮) এবং এশিয়া কাপ (১৯৮৮) তে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৯২ সালে এশিয়া কাপ ছিল তাঁর সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। 

সুদীপ চট্টোপাধ্যায় যার ডাকনাম ছিল টুলু। ১৯৫৯ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর হাওড়ার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর সময়কালে প্রখ্যাত ফুটবলার কৃষাণু দের সমগোত্রীয় ছিলেন তিনি। সারা মাঠ জুড়ে তিনি কেবল খেলোয়াড়ে খেলোয়াড়ে সেতু বন্ধন করতেন একটি নির্দিষ্ট গোলে পৌঁছে দিতেন এক উদভ্রান্ত সময়কে। খেলার সূত্রেই তিনি ছিলেন সরকাী চাকুরে৷ পেনিট্রেটিভ জোনে তাঁর থেকে বড় সাহসী মানুষ খুব কমই ছিলেন৷ লোকে এখনো বলে 'কলজের জোর ছিল বটে'৷ নিজে আর কটাই বা গোল করেছেন, অন্য কে দিয়ে গোল করানোতেই তিনি সুখ পেতেন৷ ফলে ফাউল আফটার ফাউল আর তার রেগে ওঠা, আর কেবলই অফসাইডের বাঁশি তাঁকে ক্লান্তও করেছিল খুব৷ 

কার্যত অলরাউন্ডার এই ফুটবলার অধুনা বিস্মৃতপ্রায়। দুই প্রধান সহ জাতীয় দলে দেড়দশক দাপিয়ে খেলে বেড়ানো শিবপুরের সুদীপবাবু দীর্ঘায়ু হননি, তেমনই ফুটবলপ্রিয় মানুষদের মন থেকে তিনি হারিয়েই গেছেন বলা চলে। 

তথ্যসূত্র- ওয়েব্যাক মেশিন আর্কাইভ, দ্য টেলিগ্রাফ, এক্সট্রা টাইম, এবেলা। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments