Header Ads

জরাজীর্ণ চেহারা নিয়ে ঠাকুরবাড়ির ইতিহাসের সাক্ষী কলকাতার 'টেগোর ক্যাসেল'


কলকাতার প্রথম দুর্গ বাড়ি 'টেগোর ক্যাসেল'। যে বাড়িকে   একসময় পুরো কলকাতা একনামে চিনতো। কলকাতার পাথুরিঘাটার ২৬ প্রসন্ন কুমার স্ট্রিটে অবস্থিত এই বাড়ি। ভারতীয় ধারার বদলে ইংরেজ দুর্গের মতন করে এই বাড়িটি বানানো হয়েছিল। এটি ইংল্যান্ডের উইন্ডসন ক্যাসলের  আদলে বানানো হয়েছিল৷ ইংল্যান্ডের বিগবেন টাওয়ারের ঘড়ির মতো একটি ঘড়িও বসানো হয়েছিল এই বাড়িতে। ম্যাকিনটোশ বার্নের সাহায্যে এই ক্যাসেল নির্মিত হয়। প্রাসাদের ভেতরে ১০০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট একটি মিনার রয়েছে। ইউরোপের মধ্যযুগীয় প্রাসাদের মতো গম্বুজের গড়ন৷ সেগুলোর মাথায় তিনকোণা টুপির মতো ছাউনি।


১৮২০ সালে নাপতেহাটায় পেল্লায় রবি ঠাকুরের পূর্বপুরুষ কালী কুমার ঠাকুর একটি প্রাসাদ গড়েছিলেন। সেই প্রাসাদের নাম ছিল 'টেগোর ম্যানসন।' কালী কুমার ঠাকুর মৃত্যুর আগে তাঁর সু-বিশাল এই প্রাসাদের মালিকানা দিয়ে যান তাঁর ছোটো ভাই প্রসন্ন কুমার ঠাকুরকে। যিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন সমাজ সংস্কারক। তিনি ছিলেন হিন্দু কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৮২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রক্ষণশীল সংস্থা 'গৌড়ীয় সমাজ' এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৮৩২ সালে তিনি তাঁর নারকেলডাঙার বসতবাড়িতে একটি অস্থায়ী নাট্যমঞ্চ তৈরি করেন। তাঁর নামানুসারেই পরবর্তীকালে নাপেতাহাটার 'টেগোর ম্যানসনে'র নিকটবর্তী  রাস্তার নামকরণ করা হয় '২৬ প্রসন্ন কুমার ঠাকুর স্ট্রিট'। 

১৮৫৪ সালে যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে একটি বসত বাড়ি পান। ১৮৯৫ সালে তিনি এই বসতবাড়িটিকে ভেঙ্গে দিয়ে দুর্গের মতো করে সাজিয়ে তোলেন। যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর ছিলেন থিয়েটার জগতের অন্যতম কাণ্ডারী। ক্যাসলের তিনতলাতে তিনি একটি অডিটোরিয়াম তৈরি করেছিলেন। এই ক্যাসলের রূপ বারংবার পরিবর্তন করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালে এস.বি.হাউস অ্যান্ড ল্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড এই বাড়িটি অধিগ্রহণ করেছিল। তারপর থেকে ক্যাসলের চেহারা পরিবর্তিত হতে থাকে। নষ্ট করে ফেলা হয় প্রাসাদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ রাজ্যের সরকার যদি তখন এই বাড়িটি অধিগ্রহণ করতো তাহলে আজকে এই দুর্গটি কলকাতার এক গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য স্থানে পরিণত হতো। কিন্তু তা হয়নি। হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে ভেঙ্গে পড়বে এই বাড়ি। বর্তমানে এই দুর্গবিশিষ্ট 'টেগর ক্যাসল' জরাজীর্ণ চেহারা নিয়ে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে ধ্বংসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে 

No comments