Header Ads

সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে ছিন্নমস্তার অভিশাপ আশীর্বাদ হয়ে ধরা দিলো 'ফেলুদা ফেরত' এ


বাংলাতে গোয়েন্দানির্ভর গল্পের চাহিদা চিরকালই রয়েছে। তথাকথিত বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের সময় থেকে এখনকার সময় গোয়েন্দা ছবি বাঙালিদের পছন্দের তালিকায় সবার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে। গোয়েন্দা ছবির  ভরা বাজারে গোয়েন্দা ওয়েব সিরিজও বিশেষ ভাবে জায়গা করে নিচ্ছে। বাংলার গোয়েন্দা ছবি বা ওয়েব সিরিজগুলি অনেকটাই সাহিত্যনির্ভর। কারণ বাংলা সাহিত্যে ব্যোমকেশ, ফেলুদা, কিরিটির মতো চরিত্ররা ঘুরে বেড়ায়। আর যেহেতু ফেলুদা বা ব্যোমকেশের একটা ভালো ডিমান্ড আছে বাঙালির মধ্যে সেহেতু সেই ডিমান্ডকে কাজে লাগানো বাংলার চলচ্চিত্র পরিচালকদের একান্ত কর্তব্য।  সেই কর্তব্য পালন করার মাঝেও বহুদিন থেকেই অনেক বাঙালির মুখে অভিযোগ ঘুরছিল যে ফেলুদা নিয়ে নাকি বাংলাতে ভালো কাজ হচ্ছে না। এই অভিযোগকে তাসের ঘরের মতো ভেঙে ফেললেন স্বনামধন্য পরিচালক সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়। 


সম্প্রতি আড্ডা টাইমসে মুক্তি পেয়েছে সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ওয়েব সিরিজ 'ফেলুদা ফেরত'। যে সিরিজটির লুক টেস্টের সময় থেকেই সিরিজটি আলোচিত হতে শুরু করে। কে হবেন নতুন ফেলুদা, জটায়ু ও তোপসে এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। শেষমেশ পরিচালক তুখোড় সিদ্ধান্ত নেন। ফেলুদার চরিত্রে টোটা রায়চৌধুরী, লালমোহন গাঙ্গুলী ওরফে জটায়ুর চরিত্রে  একেন বাবু খ্যাত অনির্বাণ চক্রবর্তী এবং তোপসের চরিত্রে কল্পন মিত্র অভিনয় করেছেন 'ফেলুদা ফেরত' এ। সত্যজিৎ রায়ের লেখা ফেলুদা গল্পের বইয়ের পাতায় আঁকা ফেলুদা, জটায়ু ও তোপসের মুখের সাথে হুবহু মিল আছে ফেলুদারূপী টোটা রায়চৌধুরী, জটায়ুরূপী অনির্বাণ চক্রবর্তী ও তোপসেরূপী কল্পন মিত্রের।  

পরিচালক সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় যেভাবে কাকাবাবুকে দূর্দান্ত ভাবে পর্দায় তুলে ধরেছেন তাতে তাঁর হাত ধরে ফেলুদা যে অনবদ্য হয়ে উঠবে এই সম্ভাবনা প্রথম থেকেই ছিল। সেই সম্ভাবনা প্রবল হলো 'ফেলুদা ফেরত' স্ট্রিমিং হওয়ার পর। বছরের শেষে শীতের মরসুমে তিনি জয়ী হলেন এক বড়োসড়ো ইনিংসে। এর পিছনে যে কারণগুলো উল্লেখযোগ্য তা হলো পরিচালক এই সিরিজে ফেলুদার মধ্যে থ্রিলিং এর একটা আবহ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। তিনি এই সিরিজে চরিত্রগুলোকে প্রচন্ড শক্তিশালী করে তুলেছেন। লোকেশন নির্বাচনেও তিনি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তার থেকেও বড়ো কথা চিত্রনাট্যে বাঙালিয়ানা বজায় রাখা হয়েছে। 

আপাতত মুক্তি পেয়েছে 'ফেলুদা ফেরত' সিজন ওয়ানে 'ছিন্নমস্তার অভিশাপ'। ফেলুদা সিরিজের এই গল্পটি নিয়ে এমনিতেই দর্শকদের আলাদা উন্মাদনা ছিল। ওয়েব পর্দায় এই গল্পটিকে এমন অসাধারণ ভাবে উপস্থাপনও যে করা সম্ভব তার প্রমাণ পাওয়া গেছে 'ফেলুদা ফেরত' এর প্রথম পর্বে। 

অনেকে মুক্তির আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে টোটা রায়চৌধুরী কী পারবেন ফেলুদার চরিত্রে সঠিক ভাবে অভিনয় করতে? তবে সিরিজটি দেখে বোঝা গেছে টোটা রায়চৌধুরী যথেষ্ট উপযুক্ত ফেলুদার চরিত্রে। তিনি খুবই যথাযথ ভাবে অভিনয় করে সবার নজর কেড়েছেন। জটায়ুর চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তীর অভিনয়ও মনে রাখার মতো। তোপসের চরিত্রে কল্পন মিত্রও ভালো অভিনয় করেছেন। অনেকে হয়তো বলতে পারেন কল্পন মিত্রকে নেওয়াটা কী ঠিক হয়েছে এখানে? আমরা বলবো তোপসের চরিত্রে কল্পন মিত্রকে নির্বাচন করা অবশ্যই প্রশাংসাযোগ্য কারণ তোপসের চরিত্রে কোনো নতুন মুখ যদি সাবলীল ভাবে অভিনয় করে নিজের একটা সুন্দর কেরিয়ার গড়ার সুযোগ পান তাহলে সেটা মন্দ কী? অতএব অভিনয় নিয়ে এই সিরিজের প্রসঙ্গে কোনো খারাপ কথা লেখা নিছক বোকামি। 

ওয়েব সিরিজটির ক্যামেরার কাজও অকল্পনীয়। দৃশ্য নির্ধারণ, কলাকুশলীদের অভিনয়ের মুখভঙ্গিমা, জয় সরকারের সঙ্গীত পরিচালনা, সম্পাদনা সবই চিত্তাকর্ষক। সবশেষে একটাই কথা বলবো যে নতুনরূপে এই ফেলুদা আপনিও যদি একবার দেখেন আপনারও খারাপ লাগবে না। কদিন পরেই মুক্তি পাবে 'যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে'। এখন অপেক্ষা সেই গল্পের। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments