Header Ads

পুরুলিয়ার এক ঐতিহ্যমণ্ডিত পীঠস্থান বেড়ো চন্ডী মন্দির


পুরুলিয়ার এক অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন হলো বেড়ো চন্ডী মন্দির। পুরুলিয়ার চন্ডী পাহাড়ে অবস্থিত এই মন্দির। পাহাড়ের পাদদেশে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অতি সুন্দর এক চন্ডী মন্দির হলো বেড়ো চন্ডী মন্দির। আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে কাশীপুর রাজার কুলগুরু জগন্নাথ গোস্বামী বেড়ো পাহাড়ের কোলে খেলাই চন্ডীর মেলার সূচনা করেছিলেন। সেই সময় ঐ নিরিবিলি এলাকায় তৈরি হয়েছিল মন্দির।  


পুরুলিয়া জেলার  চন্ডীপাহাড়ের চন্ডী মেলার ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে সপ্তদশ শতাব্দীতে। রাঢ় বঙ্গের চন্ডী পাহাড় সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল শ্বাপদ সংকুল ও জঙ্গলাকীর্ণ। সেই সময় এখানে আদিবাসী ও কৈবর্ত সম্প্রদায়ের কিছু বাস ছিল। তাদের জীবিকা ছিল চাষবাস,  পশুপালন ও শিকার। হিংস্র জীবজন্তু থেকে রক্ষা পাওয়া ও মঙ্গল কামনার জন্য পূর্ব থেকেই চন্ডী পাহাড়ে দেবী চন্ডীর পুজো করতেন তারা। স্বর্ণ মূর্তির চন্ডী প্রতিমার দুই পাশে দুটি পায়রা ছিল।  

কথিত আছে বর্গী আক্রমণের সময় দেবী মূর্তিকে সুরক্ষিত করতে পায়রা দুটি ঠোঁটে করে মূর্তি নিয়ে পাহাড়ের চূড়ার ফাটল রেখে দেয়। সেই থেকে চন্ডী পাহাড়কে আজও এলাকার মানুষ ভক্তিভরে প্রণাম করেন। বর্গী আক্রমণ ও বিভিন্ন ধর্মের বিপুল, প্রচার এবং অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আনার্যরা বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভয়াল শক্তিরূপে চন্ডীদেবীর উপাসনা শুরু করেন। আবার মতান্তরে, এই অঞ্চলে আর্যবসতি স্থাপনের পরে অনেকে বৈদিক ধর্ম গ্রহণ করেন। আনুমানিক দ্বাদশ শতাব্দীতে দ্রুত প্রসার লাভ করে এবং চণ্ডী, শিব, বিষ্ণু ইত্যাদি দেবদেবীর পুজো প্রচলিত হয়। অন্যদিকে চতুর্দশ শতকে পঞ্চকোটরাজ কর্তৃক আনীত গুরু যখন এই স্থানে বসবাস শুরু করেন তখন থেকেই এই চন্ডী দেবীকে কেন্দ্র করে এখানে মেলা শুরু হয়। প্রতি বছর পয়লা মাঘ থেকে তিনদিন ব্যাপী বিরাট মেলা বসে চিরমৌন চন্ডী পাহাড়ের কোলে। 

মনস্কামনা পূর্ণ করতে এলাকার মানুষ পয়লা মাঘ মন্দির নিকটস্থ পুকুর থেকে দুহাতে মাটি নিয়ে উপরে ফেলে। চন্ডী মন্দিরে পূজা দেওয়ার রেওয়াজ বহু প্রাচীন। একসময় ভগ্নপ্রায় মন্দির ছিল বর্তমানে এলাকার  মানুষের সহযোগিতায় সুদৃশ্য মন্দির নির্মিত হয়েছে। একসময় বাজার-হাট খুব একটা না থাকায় সারাবছরের  ঘর-গৃহস্থালীর জিনিসপত্র সবাই মেলা থেকেই কেনাকাটা করতেন। এলাকার মানুষ চান এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠুক। 

তথ্যসূত্র- কৌলাল পত্রিকা, নিউজ বাংলা ২৪×৭

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments