বঙ্গতনয়া সায়নী ঘোষ সাঁতারে উজ্জ্বল করে চলেছেন দেশের মুখ
বাংলার মেয়েদের সাঁতারের ইতিহাস ওল্টালে আরতি সাহা, বুলা চৌধুরীদের নাম জ্বলজ্বল করে বইয়ের পাতায়। বুলা চৌধুরী ও আরতি সাহার সমতুল্য আরেক বঙ্গতনয়া নাম উজ্জ্বল করছে বাংলা তথা গোটা দেশের। তিনি হলেন সায়নী ঘোষ। যাকে এ প্রজন্মের কোনিও বলা চলে৷ তাঁর বয়স মাত্র একুশ বছর। ২০১৬ সালে সাফ গেমস সাঁতারে ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মেডল'তে সোনা জিতেছিলেন বঙ্গতনয়া সায়নী ঘোষ। একই বছরেই রাজ্য সিনিয়র সুইমিং ও ডাইভিং প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে স্বর্ণপদক অর্জন করেন তিনি। ২০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোক, ২০০ ও ৪০০ মিটার মিডলে, ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ও ৪০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে রাজ্যে রেকর্ড তৈরি করেছেন তিনি৷
হাওড়ার বালির বাসিন্দা সায়নীর সাঁতারু হয়ে ওঠার অদম্য জেদ তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। তিনি বাঁধার শিকল ভেঙে এগিয়ে চলেছেন। দারিদ্র্যতার সাথে সংগ্রাম করে প্রতিটি দিন কেটেছে তাঁর। বাবা শ্যামল ঘোষ ফার্স্টফুডের দোকান চালান। তাঁর বাবার সামর্থ্য নেই যে মেয়েকে কোনো নামকরা সুইমিং ক্লাবে ভর্তি করে প্রশিক্ষণ দেবেন৷ তবুও যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যান তাঁর বাবা। সায়নীর দাদা তাঁর স্বপ্নপূরণের জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দেন। নিজের বোনকে বিখ্যাত সাঁতারু বানানোর জন্য তাঁর দাদা টাকা-পয়সা জমাতে থাকেন।
সায়নী দিবারাত্র পরিশ্রম করে মন দিয়ে সাঁতার অনুশীলন করতে থাকেন। এমনও তাঁর দিন গেছে যে পুকুরের ঘোলা জলে নেমেও সাঁতার প্র্যাকটিস করতে হয়েছে তাঁকে৷ ২০০৫ সাল থেকে সাঁতারে প্রশিক্ষণ শুরু করেন তিনি। সায়নীর ছোটোবেলা থেকে হাঁপানির সমস্যা ছিল, তাই ডাক্তার তাঁকে সাঁতার শিখতে বলেছিলেন। ডাক্তারের পরামর্শ মতো তাঁর মা-বাবা তাঁকে সাঁতারে ভর্তি করিয়ে দেন। সেই শুরু, তারপর থেকে জলকেই জীবন করে তিনি এগিয়ে চলেছেন। স্থানীয় ক্লাবের পুলে কোচ সুরেশ গাঙ্গুলির কাছে সাঁতারে হাতেখড়ি হয় সায়নীর।
সায়নী কখনো থেমে থাকার পাত্রী নন। তাঁর ভবিষ্যৎ লক্ষ্য অলিম্পিকে যাওয়া। সায়নী বর্তমানে গোয়াতে প্রায় এক বছর সাঁতারে প্রশিক্ষণরত। সায়নী ঘোষই ভবিষ্যতে বাংলার গৌরব হতে পারে। এর জন্য তাঁর প্রচুর সাহায্য ও পরিকাঠামোর প্রয়োজন।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment