Header Ads

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে অক্ষয়কুমার দত্তের হাওড়ার বসতবাড়ি


কোথাও দেওয়ালের ইট খসে যাচ্ছে, কোথাও প্লাস্টার ছেড়ে পড়ছে, বাড়ির উঠোন ভরে উঠেছে আগাছায়, বাড়ির ভেতরে-বাহিরে ঝোপের জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে। ঠিক এই অবস্থায় হয়েছে অক্ষয়কুমার দত্তের বসতবাড়ি। হাওড়ার বালিতে অবস্থিত এই বাড়ি। গঙ্গার তীরবর্তী শতাব্দীপ্রাচীন এই বসতবাড়ি। নিতান্ত অবহেলা ও উদাসীনতার অত্যাচারে ভগ্নপ্রায় হয়ে ধ্বংসের পথে দিন গুণছে ঐতিহ্যবাহী এই বাড়ি। 


প্রখ্যাত সাহিত্যিক, লেখক ও প্রাবন্ধিক অক্ষয়কুমার দত্তের শেষ জীবন কেটেছিল হাওড়ার এ বসতবাড়িতে৷ ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের স্মারক হিসেবে পরিচিত ছিল অক্ষয়কুমার দত্তের বসতবাড়ি৷ চলতি বছরের ১৫ ই জুলাই আমরা পেরিয়ে এসেছি অক্ষয়কুমার দত্তের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ ও প্রথম বাঙালি সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন অক্ষয়কুমার দত্ত। তিনি বাঙালির কাছে একজন প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও আমরা তাঁর সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি৷ 

১৮৫০ সালে তিনি বালিতে বসতি স্থাপন করেন। আজ দেওয়ান গাজী তালায় যেটি 'হরমিলার ডক' বলে পরিচিত, সেটি তাঁর শেষ জীবনের বসতবাড়ি। অক্ষয়কুমার দত্ত একজন উদ্ভিদপ্রেমিকও ছিলেন৷ তাই বাড়ির নাম রেখেছিলেন 'শোভনোদ্যান'। তাঁর হাতে গড়া উদ্যানে ৩৫ রকমের গাছ, ১৫ রকমের ফুলগাছ ও ১৬ রকমের মশলাজাতীয় গাছ পাওয়া যেত। বাড়ির ভেতরে ছিল ভূতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। যার ভেতরে ছিল জীবাশ্ম, প্রবাল, নানাবিধ পাথর প্রভৃতি। নিরিবিলি প্রকৃতির সান্নিধ্যে বালির বাড়িতে বসে নিরলস গবেষণার ভিত্তিতে আমৃত্যু সব কাজগুলো করে গেছেন সেগুলো আমাদের অক্ষয় ও অমূল্য ঐতিহ্য।

এক দশক আগে ২০০৬ সালে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন এই বাড়িটিকে সরকারিভাবে 'হেরিটেজ' তকমা দিয়েছিল। তবে ঐ তকমা কেবল নামমাত্র। কাজের কাজ কিছুই হয়নি৷ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব তো গ্রাস করেইছে বাড়িটিকে। তাছাড়াও প্রোমোটারদের নজর পড়তেও শুরু করেছে বাড়িটির ওপর। হয়তো যে-কোনো সময় তাদের দখলে চলে যেতে পারে এই বাড়ি। বাড়ির নিকটবর্তী বহু অংশ ইতিমধ্যেই বেদখলে চলে গেছে। 

বাড়িটির চারপাশ উঁচু উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। বাড়ির বাইরের মূল প্রবেশদ্বারে লাগানো হেরিটেজ ব্যানার। অথচ রক্ষণাবেক্ষণের কোনো নামগন্ধ নেই এক দশক পরেও৷ ২০০৬ সালে ঠিক হয়েছিল বাড়িটি সংস্কার করে অক্ষয়কুমার দত্তের নামে একটি সংগ্রহশালা নির্মিত হবে। সেই ঘোষণা শুধু ঘোষণায় থেকে গেছে। বাড়িটি এক দশকের পরেও সংরক্ষণ হয়নি বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ঐ এলাকার স্থানীয়রা। তারা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি প্রশাসনের উচ্চস্তরে পৌঁছায় নি এখনো৷ প্রশাসন বাড়িটি সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে বাড়িটির আর অস্তিত্ব থাকবে না। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments