বীরত্বের মাঝেও বাঙালি চোখে আজও খলনায়ক যোদ্ধা মুন্সেফ প্যারীমোহন
বীরত্বের মাঝেও বাঙালি চোখে আজও খলনায়ক যোদ্ধা মুন্সেফ প্যারীমোহন। কেন বাঙালি এই বীর কে অবহেলা করে গেছে? উনিশ শতকের এই বাঙালির দক্ষতার কথা আজও ইতিহাসে অমিলন।প্যারীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তার আসল নাম ছিল। তার জন্ম হুগলির উত্তরপাড়ায়।
সিপাহী বিদ্রোহের বছর কয়েক আগে তিনি উত্তরপাড়া থেকে কাশি চলে যান। এরপর মুনসেফি পরীক্ষায় পাশ করে এলাহাবাদের কাছে মঞ্ঝনপুরে মুনসেফ নিযুক্ত হন। এরপর বেজে উঠলো সিপাহী বিদ্রোহের দামামা। সেই সময় ব্যক্তিগত লাভের আশায় সিপাহীদের সঙ্গে হাত মেলান কিছু ছোটখাটো জমিদারও। গ্রামবাসীদের উপর তারা প্রবল অত্যাচার করতে থাকেন। রুখে দাঁড়ান প্যারীমোহন মাত্র 22 বছর বয়সে জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনীর বিরুদ্ধে। তার দক্ষতা ও বীরেত্ব বিস্মিত হয়ে লর্ড ক্যানিং তাকে যোদ্ধা মুনসেফ বা fighting munsiff তকমা দেন।
এককথায় ঠিক যোদ্ধা মুনসেফের অবস্থান ছিল ব্রিটিশ এর পক্ষে সেই কারণে তাকে পরবর্তীতে খলনায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে। কিন্তু তার প্রত্যক্ষ লড়াই সিপাহীদের বিরুদ্ধে ছিল না। লড়াই ছিল অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া তার বীরত্ব সাহস দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। যাঁর চিহ্ন আজও রয়ে গিয়েছে যোদ্ধা মুনসেফ প্যারিমোহন অভিধারের মধ্যে।
জ্ঞানেন্দ্রমোহন নিজেই লিখেছেন বাঙালি দেশে পতির অদ্বিতীয় সহায়ক। যদুনাথ সরকারও যাকে অত্যাবশ্যক সহায়ক বলেছেন। এর মাশুল বাঙালিকে কেমন দিতে হল সে বিবরণ আছে উত্তর ভারতে মহাবিদ্রোহের প্রত্যক্ষ দর্শী যদুনাথ সর্বাধিকারীর লেখায়। স্বেচ্ছের দাস বললে নাক কান কেটে দেওয়া নাকি হয়। ফ্যানি পার্কস এর নৌকোর উওর ভারতীয় লেঠলেরা শান্তিপুরের গঙ্গায় ভাসমান মৃতদেহ আঘাত করতে গিয়ে "বজ্জাত বাঙালির মুন্ড" বলতে ও কসুর করেনি। এই বাঙালি -পীড়নের বর্ণনার সঙ্গে ১৮৫৭ য় ইলাহাবাদ "যোদ্ধা মুনসেফ" নামে পরিচিত প্যারিমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় মতো সরকার -হিতৈষী বাঙালির কথাও জ্ঞানেন্দ্রমোহন গর্বভরে বলেছেন।
এইভাবে প্যারীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও বাঙালির কাছে বীর হিসেবে পূজিত হয়েছেন আবার কখনও খলনায়ক হিসেবে ও চিহ্নিত হয়েছেন কিন্তু তার বীরত্বের বীরগাথা আমরা কখনো ভুলে যাবো না।
প্রতিবেদন- কৌশিক চ্যাটার্জী
Post a Comment