জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক যিনি মাইজভান্ডারি নিয়ে লিখেছেন গবেষণামূলক বই
তিনি একজন জার্মান অধ্যাপক। তিনি বাংলা ভাষাকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। তিনি পরিস্কার উচ্চারণে বাঙালিদের থেকেও ভালো বাংলা বলতে পারেন। কী চমকে গেলেন তো? চমকানোর কিছুই নেই কারণ এটা সত্যি। জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হান্স হার্ডার জার্মানির নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলা বলতে পারেন। নিজের মাতৃভাষা জার্মানির পাশাপাশি বাংলা ভাষাকেও মাতৃভাষার মতোই তিনি শ্রদ্ধা করেন।
তিনি বাংলা ভাষা কেবল বলতে পারাই নয়, তিনি বাংলা ভাষা লিখতে ও পড়তে দুই-ই পারেন। তিনি মাইজভাণ্ডারী নিয়ে একটি গবেষণামূলক বইও লিখেছেন। যে বইটির আকার যথেষ্ট বৃহৎ। তিনি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, ভাষা, রাজনীতি ও জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে গবেষণা করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ তাঁর গায়ে কাঁটা দেয়। বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ রয়েছে। তিনি মনে করেন বাংলা সাহিত্যে এমন কিছু রাখা আছে যা বাঙালিরাও জানেন না। বাংলা সাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ। বাংলা সাহিত্যে সামান্যতম ইউরোপীয় প্রভাব থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলা সাহিত্য মৌলিক। তাঁকে যে বিষয়টি খুবই দুঃখ দেয় তা হলো 'বাংলা সাহিত্যের সুবিশাল ভাণ্ডার থাকা সত্ত্বেও বাঙালিরা বাংলা সাহিত্য কেন পড়ছে না?'
জার্মানির ঐতিহ্যবাহী হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের 'দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউট' এর ভাষাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক হান্স হার্ডার। অনেক বাঙালি যখন বাংলা ভাষার প্রতি অসচেতন সেখানে তিনি বাংলা ভাষা নিয়ে গর্ববোধ করেন। অনেক বাঙালি বলে থাকেন যে বাংলা ভাষার নাকি কোনো বাণিজ্যিক মূল্য নেই। বাংলা ভাষা জেনে নাকি কোনো লাভ নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন "বাংলা কিন্তু পৃথিবীতে ষষ্ঠ বা সপ্তম স্থানে সংখ্যার দিক থেকে। তাহলে এমন একটি ভাষা পড়লে কিছু হবে না? নিশ্চয়ই হবে। এত লোক ফরাসি পড়ছে, স্প্যানিশ পড়ছে। বাংলা কেন পড়ছে না সেটাই আমার প্রশ্ন।"
তিনি বর্তমান বাঙালিদের ভাষাগত বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে বলেন "বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবিত্তরা তাদের বাচ্চাদের ইংরেজি মিডিয়ামের দিকে বেশি ঝুঁকিয়ে দিচ্ছেন, সেটাতে দোষ নেই যদি তারা নিজের ভাষাকেও যথেষ্ট সম্মান দিতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশে মধ্যবিত্তদের ইংরেজির দিক ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। আমি এটার বেশি সমালোচনা করব না। এটা হয়। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন দু'টো ভাষাই শিখতে পারে। নিজের ভাষার অবহেলা করা একটা আত্মবিরোধ।"
ইংরেজি ভাষা শেখার গুরুত্ব তিনিও বোঝেন। কারণ বিশ্বায়নের যুগে গোটা পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ইংরেজি জানা সকলের প্রয়োজন। একটা আন্তর্জাতিক ভাষা তো থাকতেই হবে। তিনি তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের এটাই শেখান যে গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ইংরেজি অবশ্যই জানতে হবে। তা বলে ইংরেজি ভাষার জন্য মাতৃভাষাকে বিসর্জন দেওয়ার মতো মানসিকতা তৈরি করলে চলবে না। ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য মাতৃভাষা প্রত্যাখান করা ঠিক নয়। এটা সাংস্কৃতিক শিক্ষার অভাব বা সাংস্কৃতিক বোকামি।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment