জীববিদ্যার কিংবদন্তি ব্যক্তি দুলাল চন্দ্র সাঁতরার জীবনাবসান, রেখে গেলেন অজস্র স্মৃতি
বাংলা মাধ্যমে যারা পড়াশোনা করেন তাদের কাছে এক পরিচিত নাম হলো দুলাল চন্দ্র সাঁতরা। জীববিদ্যার জীবন্ত নক্ষত্র ছিলেন তিনি। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর জীববিদ্যার বই বলতে দুলাল চন্দ্র সাঁতরার উচ্চমাধ্যমিক জীববিদ্যা বইটিই সকলে জানেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর একমাত্র ভরসা হলো এই বই। ক্লাস সেভেন থেকে স্নাতক স্তর অবধি তার বই স্কুলে পড়ানো হয়।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা প্রস্তুতি কিংবা জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা এই বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। সহজ উপায়ে নাম্বার পেতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে এই বই। বলা ভালো জীববিদ্যার ভরসা ও নির্ভরতার অন্যতম নাম দুলাল চন্দ্র সাঁতরা। গত বুধবার দুপুরে বহু ছাত্রছাত্রীকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
নব্বই দশক থেকে চলতি সময় পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের প্রথম পছন্দের বই হলো দুলাল চন্দ্র সাঁতরার জীববিদ্যা। কয়েকমাস আগে প্রয়াত হন উচ্চতর গণিতের দিকপাল সৌরেন্দ্রনাথ দে। আর তাঁর মৃত্যুর কিছুমাস গড়াতে না গড়াতেই প্রয়াত হলেন জীববিদ্যার আরেক দিকপাল দুলাল চন্দ্র সাঁতরা। এই বছরটা সত্যিই যেন অভিশপ্ত। একের পর এক মহান ব্যক্তিরা অনেক তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
দুলাল চন্দ্র সাঁতরা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৭ সালের ২০ শে ডিসেম্বর অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে। এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের। মেদিনীপুর শহরে তিনি প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্র। জীববিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি সিটি কলেজে জীববিদ্যায় স্নাতক হন এবং পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি শিক্ষকতা করতে খুব ভালোবাসতেন।
পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি চারটে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। অবশেষে মধ্যমগ্রাম হাইস্কুলে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত থেকে যান। প্রায় ২৯ বছর এখানে শিক্ষকতা করেন তিনি। ২০০৫ সালে তিনি শিক্ষক জীবন থেকে অবসর নেন। শিক্ষকতা ছাড়াও ২০০১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা সাঁতরা পাবলিকেশন। তিনি কেবল জীববিদ্যার বই-ই নয়, নিজ উদ্যোগে রসায়ন, পর্দার্থবিদ্যা ও অন্যান্য বিষয়ের বইও প্রকাশ করেন সাঁতরা পাবলিকেশন থেকে। উচ্চমাধ্যমিক থেকে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মতো যে-কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বই সাঁতরা পাবলিকেশন থেকে তাঁর উদ্যোগে পাওয়া শুরু হয়।
তিনি একজন দক্ষ শিক্ষক ছিলেন। বহু ছাত্রছাত্রীর কথায় তিনি গল্পের ছলে জটিল বিষয়কে সুন্দর করে ব্যাখ্যা করে বোঝাতেন। নিজস্ব প্রচেষ্টাতে সাঁতরা পাবলিকেশনকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন তিনি। সারা জীবন ধরে শিক্ষার উন্নতির জন্য কাজ করেছেন তিনি। গত বুধবার দুপুরে বেলভিউ নার্সিং হোমে প্রয়াত হলেন তিনি। রেখে গেলেন অজস্র স্মৃতি। পড়ে রইলো তাঁর সমস্ত কর্মযজ্ঞ।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment