স্কুল যখন পরিণত একটি ট্রেনে, অভিনব উদ্যোগ শিলিগুড়িতে
প্রতিটি মানুষের প্রথম শিক্ষা শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বয়সে সকলেই একটু চঞ্চল হয়। শিশুদের পড়াশোনাতে মন থাকে না। শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। বিখ্যাত লেখক ও কবি অস্কার ওয়াইল্ডের মতে "শিশুদের গড়ে তোলার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল তাদেরকে আনন্দ দেওয়া।" যে স্কুলে যত বেশি আনন্দ দেওয়ার উপকরণ থাকে সেই স্কুলে তত বেশি বেশি করে শিশুরা স্কুলমুখী হয়।
শিলিগুড়ি শহরের বাল্মিকী বিদ্যাপিঠ শিশুদের স্কুলমুখী করার উদ্দেশ্যে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। শিশুদের শিক্ষার মাধ্যমে আনন্দদানের জন্য পুরো স্কুলকে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে ট্রেনের আদলে৷ স্কুলের প্রতিটি ঘরকে কোচের মতো করে বানানো হয়েছে৷ কোচের ভেতরের দেওয়ালগুলো বাংলা বর্ণমালার অক্ষর থেকে দিন, মাস, ঋতু ও নানারকমের রঙে পাঠবইয়ের আকারে মুড়ে ফেলা হয়েছে। স্কুলের মধ্যে ঢুকলে দেখা যায় 'হলদিবাড়ি-নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার' দাঁড়িয়ে আছে।
স্কুলের কাজটি এতোটাই নিখুঁত ভাবে বানানো হয়েছে যে দূর থেকে স্কুলটিকে মনে হবে যেন স্টেশনের ভেতরে একটা ট্রেন রাখা আছে। এই স্কুলটিকে দেখার জন্য অনেকে ভিড় জমাচ্ছেন। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এই স্কুলটি। যে সমস্ত শিশুরা এতোদিন স্কুলে গেছে তারা নতুন করে স্কুলে গিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠবে। বাচ্চারা ট্রেন ওঠার লোভ সংবরণ করতে না পেরে কেবল ট্রেনে ওঠার জন্যই স্কুলে আসবে।
বহুদিন থেকেই জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়েছিল এই স্কুলটি। দেওয়াল থেকে প্লাস্টার খসে পড়তে থাকে স্কুলের, জানালা-দরজা ভেঙ্গে যেতে থাকে, কোনো বেঞ্চ, আলো কিছুই ছিলনা এই স্কুলে। স্কুলটি এমন বেহাল দশা কাটিয়ে বর্তমানে এক অনন্য রূপ নিয়েছে। বাল্মিকী বিদ্যাপিঠের প্রধান শিক্ষক ও সহ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভাবনায় অলঙ্কৃত হয়েছে পুরো স্কুল। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাদের স্কুলের ছবি ও ভিডিও ঘুরপাক খাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশংসাও পাচ্ছেন।
এই স্কুলটিকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটা কোনো সরকারি স্কুল। বাংলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় যদি এভাবে উদ্যোগ নেয় তাহলে শিশু শিক্ষার জন্য এক নতুন দিক উন্মোচন হবে। স্কুলছুট শিশুদের সংখ্যাও একেবারে হ্রাস পাবে। শিলিগুড়ির বাল্মিকী বিদ্যাপিঠের স্কুল কর্তৃপক্ষকে লিটারেসি প্যারাডাইসের তরফ থেকে শত কোটি কুর্নিশ জানাই।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment