গ্রামবাসীরা যখন প্রযোজক, পুজোতে মুক্তি পাচ্ছে 'দুধপিঠের গাছ'
নদীয়ার আড়ংঘাটা গ্রামের ঘটনা। গোটা গ্রাম মিলে তৈরি হলো একটা আস্ত সিনেমা। যে সিনেমার কথা ইতিমধ্যেই পুরো বাংলা জেনে গেছে। ছবির নাম 'দুধপিঠের গাছ'। এই ছবিটিকে নিয়ে কয়েকমাস ধরেই চর্চা চলছে। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ৩ রা এপ্রিল কিন্তু আকালের জন্য স্থগিত রইলো মুক্তি। অপেক্ষায় দিন কাটতে থাকে গ্রামবাসীদের। সেই স্বপ্নের দিনটার আশায় বসে গ্রামবাসীরা। ছবির পরিচালক উজ্জ্বল বসু চিন্তায় বিভোর হয়ে পড়েন, কবে আসবে সেইদিন যেদিন তাদের সিনেমাটি বাংলার ঘরে ঘরে চলবে।
'দুধপিঠের গাছ' ছবির পরিচালক উজ্জ্বল বসু ভেঙ্গে পড়তে থাকেন ছবিটির জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে। তথাপি গ্রামবাসীরা তাকে বারংবার আস্থা জোগিয়েছেন। গ্রামের মানুষজন তার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন। অবশেষে আগামী ২১ শে অক্টোবর অর্থাৎ পুজোতে আড়ংঘাটা গ্রামের বুকে প্রিমিয়ার হবে 'দুধপিঠের গাছ' এর৷ এই প্রথমবার বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে কোনো ছবির প্রথম প্রিমিয়ার মাল্টিপ্লেক্স ও সিনেমাহল থেকে বেরিয়ে খোলা মাঠে হতে চলেছে।
পরিচালক উজ্জ্বল বসু যেদিন ঠিক করেন যে একটা ছবি বানাবেন, সেদিন থেকেই গ্রামবাসীদের মনে একটা উত্তেজনা তৈরি হয়। একটা সিনেমা তৈরির জন্য উদ্যোগ নেয় গোটা গ্রাম। সকল গ্রামবাসীই হয়ে উঠলেন সিনেমার প্রযোজক। যে যার সামর্থ্য মতো অর্থ প্রদান করেছেন ছবিটি বানানোর জন্য। গ্রামের কেউ রিক্সা চালান, কেউ দোকান চালান, কেউ গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। পুরো গ্রামের প্রচেষ্টাতে ২৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ হয় ছবি বানানোর জন্য।
উজ্জ্বল বসু পরিচালিত 'দুধপিঠের গাছ' একটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের বাংলা ফিচার ফিল্ম। নদীয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম আড়ংঘাটার বুকে তৈরি হয়েছে। ভারতের মধ্যে একটি ছোট্ট গ্রামের গ্রামবাসীদের ফিচার ফিল্ম নির্মাণ করার ঘটনা এর আগে কোনোদিনই ঘটেনি৷ এই ছবি বাংলা ছবির অন্যতম মাইলস্টোন হিসেবে ইতিহাস তৈরি করার দিকে এগোচ্ছে। ছবিতে কলকাতার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সাথে দাপটে অভিনয় করেছেন গ্রামবাসীরা।
এই ছবিতে চল্লিশ জন শিশুকে প্রথমবারের জন্য বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন দামিনী বেণী বসু, হর্ষিল দাস, রিয়া দাস, কৌশিক রায়, শিবানী মাইতি ও দেবাঙ্গনা গণ। ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন জয় সরকার। জয়দেবের অন্ধ সঙ্গীতশিল্পী এবং 'গীত গোবিন্দ'-এর জীবন্ত কিংবদন্তি অনাথবন্ধু ঘোষ চলচ্চিত্রটির জন্য প্লেব্যাক গায়ক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এই ছবিতে।
ছবির গল্পে রয়েছে নতুনত্ব। গ্রামের এক সাত বছরের শিশু গৌর। বাকশক্তির প্রতিবন্ধকতার জন্য সে পরিস্কার ভাবে কথা বলতে পারে না। গৌর ছেলেটা একটু ভাবুক প্রকৃতির। সে বিশ্বাস করে আম-জামের মতো পিঠেরও গাছ আছে। সেই বিশ্বাসের ওপর ভর করে মাটিতে সে একটি পিঠে পুঁতে দেয়। তাতে নিয়মিত সে জল দিতে থাকে যাতে সেই পিঠে থেকে গাছ বেরিয়ে তাড়াতাড়ি বড় হয়। হঠাৎ করে একটা সময় আসে যে সময়ে সে নতুন এক দেশের খোঁজ পায়। যা এক অজানা ঈশ্বরের দেশ। সেখানে নাকি নানান রকমের পিঠের গাছ আছে। এই কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতে বাড়ি থেকে সে ট্রেন ধরে বেরিয়ে পড়ে।
ছবিটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে। নতুন দিল্লির পঞ্চম সিফএফসিওয়াই শিশু ও যুবকদের জন্য হাসি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯, তৃতীয় নয়াদিল্লি চলচ্চিত্র উৎসব এনডিএফএফ ২০২০ এবং বাংলাদেশের তেরো তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে এই ছবি৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment