ডাকঘর নাটকের ছায়া ও অমলের কল্পনার জগৎ ফুটে উঠলো বেহালা নূতন দলের পুজোতে
জানালা দিয়ে যারা ঘরবন্দী হয়ে বিশ্ব দেখে তারা তো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নাটকের অমল। বাংলার এক কালজয়ী নাটক হলো 'ডাকঘর'। যে নাটকের মুখ্য চরিত্র হলো 'অমল'। এই অমল একটি বাচ্চা ছেলে। সে কঠিন অসুখে ভুগছে৷ বাড়ি থেকে তার বেরিয়ে পড়া বারণ। বেচারা ছেলেটা জানালা দিয়ে তাকিয়ে সবুজ প্রকৃতি অনুভব করতে থাকে। সে অপেক্ষা করতে থাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার কবে সুজলা-সুফলা বসুন্ধরার স্বাদ নেবে।
একটা ভাইরাস যখন মানুষের একটা পুরো বছর নষ্ট করে দেয় তখন মানুষ দিন গুণতে থাকে আবার কবে সোনালী দিনগুলো ফিরে আসবে। বাড়িতে বন্দী হয়ে প্রতিটি মানুষ ব্যাকুল। সকলের অবস্থা যেন অমলের মতোই। বাড়িতে চার দেওয়ালে বন্দী থাকাটা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে সবার। যেন এক বৃহত্তর অসম লড়াইয়ে সামিল মানবসমাজ।
মানুষ যখন নতুন করে মুক্তির পথ খুঁজছে তাকে অমলের চোখ দিয়ে তুলে ধরলো 'বেহালা নূতন দলে'র এ বছরের দুর্গাপুজো। শিল্পী বিশ্বনাথ দের স্বতন্ত্র ভাবনার মিশেলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। তাদের এ বছরের থিম হলো 'অমলের পুজো'। ডাকঘর নাটকের ছায়া অবলম্বনে অমলের কল্পনার জগতকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপসজ্জাতে। ডাকঘর নাটকে অমলের ব্যাকুলতা স্পষ্ট মণ্ডপের পরতে পরতে। অমলের কল্পনার জগৎ থাকলেও মণ্ডপে অমল নেই৷
অমল এমন একটি অসুখে ভুগছিল সেখান থেকে কারো ফিরে আসার জোঁ নেই। বাড়িতে বসে অস্থির হয়ে পড়ছিল সে। মৃত্যুভয় তাকে তাড়া করে বেড়াতে থাকে। সে জানতো সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে তাকে চলে যেতে হবে তাই মৃত্যুর আগে সবুজ প্রকৃতির হাতছানি চেয়েছিল সে৷ বর্তমান সময়ে মানুষের অবস্থাও অমলের মতো। সবাই চাইছে একটু মুক্তি খুঁজতে।
এখানে ডাকঘরের আরেক চরিত্র সুধাকেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মা দুর্গারূপে। মণ্ডপের ভেতরে বাজতে শোনা যাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সমুখে শান্তি পারাপার'। এই গানটির সাথে 'বেহালা নূতন দলে'র পুজোর ভাবনা অনেক মিল আছে। তাই মণ্ডপের ভেতরে বাজবে এই গানটি। সঞ্জয় দাসের সুর ও সংযুক্তা দাসের গায়কীতে সেই গান তৈরি হয়েছে ক্লাবের তরফে। 'বেহালা নূতন দলে'র সম্পাদক থেকে শুরু করে সকল সদস্য চান এ বছরের পুজো হোক মানুষের মুক্তির পুজো।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment