হাওড়ার ফুসফুস সাঁতরাগাছি ঝিল বাঁচাতে বৃহত্তর উদ্যোগ নেওয়ার কাজ শুরু করলো একাধিক পরিবেশ সংগঠন
হাওড়া জেলার ফুসফুস হলো সাঁতরাগাছি ঝিল। সাঁতরাগাছি রেল স্টেশন লাগোয়া এক বড় জলাশয় হলো সাঁতরাগাছি ঝিল। এই ঝিলটি প্রায় ১৩ লক্ষ ৭৫ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে। প্রতি বছর এই ঝিলে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায় গ্যাডওয়াল, গার্গেনি, শোভেলর, কমন টিল, নর্দান পিনটেলের মতো বিদেশি পাখি সাঁতরাগাছি ঝিলে ঘুরতে আসে৷ ভোরবেলায় এই পাখিরা স্নান সেরে নিয়ে ঝিলের ওপর খেলাধূলো করে এবং সন্ধ্যাবেলায় ঝিলের ধারে থাকা গাছপালাতে বিশ্রাম নেয়। পরিযায়ী পাখিদের প্রধান আশ্রয়স্থল হলো এই জলাশয়।
বেশ কিছু বছর ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে এই জলাশয়। ঝিলের জলে যথেচ্ছ পরিমাণে প্লাস্টিক, বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলার জন্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঝিলের জল। আবর্জনা জমে থাকার জন্য ঝিলের আয়তন হ্রাস পাচ্ছে। ইদানীং কালে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গুটিকয়েক পরিযায়ী পাখি এলেও ঝিলের নোংরা পরিবেশে টিকতে না পেরে তারা ফিরে যাচ্ছে।
নগরায়ণের সাথে সাথে ঝিলের বেশ কিছু অংশ বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অত্যধিক পরিমাণে বাইরে থেকে লোকজন এসে জনবসতি গড়ে তুলছে৷ ঝিলের পাশের চাষযোগ্য জমি দখল, প্রোমোটারি চক্রের ফাঁদে ঝিলের বেশ কিছু অংশ চলে যাচ্ছে। এর ফলে এই জলাশয়ের বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জলাশয় পরিচ্ছন্ন না রাখার জন্য ও জলাশয়ে পচে যাওয়া কচুরিপানা পরিষ্কার না করার জন্য ২০১০ সালের পর থেকে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনাও একেবারেই কমে যায়। যার ফলে বহু মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়ে৷ অনেক পরিবেশ সংগঠন ঝিলকে বাঁচানোর জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝিল সম্পর্কে সচেতনতা প্রচার করতে থাকে৷ ঝিলে জুলাই-আগস্টের দিকে পুরো জলাশয় কচুরিপানাতে ঢেকে যায়। যার জন্য ঝিলের ধারের চাষযোগ্য সমস্ত জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। পুরো জলাশয় কচুরিপানাতে ঢেকে যাওয়ার ফলে অনেক মাছ মারা যায়। তাদের প্রজনন শক্তি হ্রাস পায়৷
এই ঝিলকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এগিয়ে এসেছে বহু পরিবশ সংগঠন। তারা সকল এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছে যে ঝিলের মধ্যে ও ঝিলের চারপাশে কোনোরকম বর্জ্য, প্লাস্টিক ও আবর্জনা নিক্ষেপ করা চলবে না। ঝিল বাঁচাতে সকলকে উদ্যোগ নিতে হবে৷ তারা বাড়ি বাড়ি লিফলেট বিলি করারও কর্মসূচী নিয়েছে। যে লিফলেটে তুলে ধরা হয়েছে জলাশয় থাকার প্রয়োজনীয়তা। সাঁতরাগাছি বিল বাঁচাতে একাধিক পরিবেশ সংগঠন বড়োসড়ো উদ্যোগ নিতে চলেছে। ইতিমধ্যেই ঝিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য 'সাঁতরাগাছি ঝিল বাঁচাও' নামে একটি ফোরামও তৈরি করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ফোরামের মাধ্যমে আয়োজন করা হচ্ছে বিভিন্ন ওয়েব কনভেনশনেরও৷
গত ২৯ শে সেপ্টেম্বর হাওড়া বিজ্ঞান চেতনা সমন্বয় - সাঁতরাগাছি ঝিল বাঁচাও কমিটি, নেচার মেট, হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে ঝিলের জল পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এ মরশুমের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও পাখিদের জন্য আইল্যান্ড তৈরির কাজ ও পানা পরিস্কারের কাজ চলছে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment