আসন্ন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে একটি শিশুকে নতুন জীবন দিলেন বাঙালি যুবক শঙ্কর পাণ্ডে
কেবল একটা মানুষই পারে অনেক মানুষের জীবনে হাসি ফোটাতে। এক মানবিক উদ্যোগের সাক্ষী নদীয়ার তাহেরপুর। প্রায় আসন্ন মৃত্যুর মুখ থেকে একটি শিশুকে বাঁচিয়ে নতুন জীবনদান করে মানবতার অনন্য নজির গড়লেন তাহেরপুরের এক বাঙালি যুবক শঙ্কর পাণ্ডে।
করোনার কঠিন সময়ে তাকে একাধিক মানবিক পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। কেবল করোনার কঠিন সময়ই নয়, তিনি দীনদুঃখী মানুষের যে-কোনো বিপদে নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। শুধু সামাজিক কাজকর্মই নয়, বাংলা ও বাঙালির অধিকার নিয়ে পথে নেমে আন্দোলন করতেও দেখা যায় তাকে।
শঙ্কর পাণ্ডে একদিন বাজারে গিয়ে লক্ষ্য করেন যে প্রায় এগারো থেকে বারো বছরের একটি শিশু বাজারে ভিক্ষা করছে। শিশুটির শরীর যেন বৃদ্ধদের মতো ভেঙ্গে পড়েছে। শরীরে তার একটুও বল নেই। চেহারা একেবারে রোগা পাতলা। শিশুটির নাম রাজু৷ তিনি রাজুকে প্রথম দর্শন করার পর রাজুর প্রতি একটা মায়া কাজ করতে থাকে তার। রাজুকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে লড়াই শুরু করে দেন শঙ্কর বাবু৷
২৩ শে মার্চ শঙ্কর পাণ্ডে রাজুকে প্রথম দেখেই তাকে বাজার করে দেওয়া থেকে সুস্থ করার এক গুরু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন শঙ্কর পাণ্ডে। রাজুকে তিনি ভালোমতো চিকিৎসার জন্য ডঃ সৌমেন্দু নাগের কাছে নিয়ে যান। সৌমেন্দুবাবুর পরামর্শ মতো নিয়মিত চিকিৎসা চলতে থাকে রাজুর৷ ওর বাড়ির লোকের মুখে শোনা যায় 'ওর একবার রক্ত শেষ হয়ে গিয়েছিল। ওকে রক্ত দেওয়ার সময় কোনো কারণে এক গোপন রোগের ভাইরাস রাজুর দেহে সংক্রমিত হয়।' ফলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো তাকে এক এক পা করে এগোতে হচ্ছে। মাত্র ছয় মাসের চিকিৎসায় তার দৈহিক চেহারার আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। রাজু সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার ফলে বর্তমানে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে।
রাজুর পাশে নিজের দাদার মতো দায়িত্ব পালন করছে শঙ্কর পাণ্ডে। তিনি ঠিক করেছেন ওর নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন। এমনকি স্কুল খুললেই রাজুকে তিনি স্কুলে পড়াশুনার জন্য ভর্তিও করাবেন। রাজুর মতো এক অসহায় শিশুকে জীবন দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন "মৃত্যুর মুখ থেকে রাজুকে আজ স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পেরেছি; রাস্তাটা সহজ ছিল না। ২৩ শে মার্চ ২০২০ ওকে বাজারে ভিক্ষা করতে দেখে বাজার করে দেওয়া থেকে সুস্থ্য করে তোলার প্রতিজ্ঞা আর আজকের ওর এই সুস্থ হয়ে ওঠা আমার কাছে জীবনের চরম প্রাপ্তি। আমি স্বর্গ, অমৃত কিচ্ছু চাই না, মানুষ হয়ে মানুষের মাঝে মানুষের জন্য শুধু বেঁচে থাকতে চাই। এই লড়াইয়ে যে মানুষটার নাম না করলেই নয় তিনি সৌমেন্দু নাগ স্যার। আমি ভগবান এর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাই না কারণ আমি স্যার কে দেখেছি।"
প্রতিবেদন-সুমিত দে
Post a Comment