Header Ads

শিক্ষার মূল্য, দুই বন্ধুর কাহিনী ও শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের বাঁধনে তৈরি শিকড় খোঁজার ছবি হলো 'নিউটন'স ল অফ মোশন'


লেখক অনিল কুমার পোদ্দার তাঁর জীবনের গল্প নিয়ে লিখেছেন 'দেখো কী কাণ্ড' নামের একটি ছোট গল্পের সংকলন। যে ছোট গল্পের সংকলনটি অবলম্বনে পরিচালক নাইল ভট্টাচার্য ও সহ-পরিচালক দেব গোস্বামী তৈরি করেছেন বাংলা ওয়েব সিরিজ 'দেখো কী কাণ্ড'। কয়েকমাস আগে মুক্তি পায় এই সিরিজের  প্রথম ছবি 'মৌলবী মাস্টার'। এবার মুক্তি পেল এই সিরিজের দ্বিতীয় ছবি 'নিউটন'স ল অফ মোশন'। বলা ভালো মৌলবী মাস্টারের সিক্যুয়েল হলো এই ছবি৷ আগের ছবিতে আমরা অনিলবাবুর ছোটোবেলার পাঠশালা জীবনের গল্প দেখেছি। আর এই ছবি তাঁর শৈশব থেকে মধ্য বয়সে আসার কাহিনী৷      



সেকেলের অধুনা পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরের একটি বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের স্বতন্ত্রতার বিবরণ নিয়ে তৈরি গল্পের প্লট। চিত্রনাট্যে দেখা যায়, প্রতিদিনই বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় তাদের বিদ্যালয়ের নাম কানাইপুর বিদ্যাবিথী উচ্চ বিদ্যালয়। যেখানে শিক্ষকদের সাথে তরুণ কিশোর শিক্ষার্থীদের কথোপকথনের সাথে সময় প্রবাহিত হয়। অনিল ('মৌলবী মাস্টার' গল্পের জমিদারের নাতি) ও চারুর মতো কিছু শিক্ষার্থীদের দুষ্টু আচরণের সাথে মিশ্রিত ‘নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র’ প্রয়োগের প্রক্ষেপণ এই শর্ট-ফিল্মটির সারাংশ প্রকাশ করে। সেখানকার শিক্ষকদের তাদের পেশার প্রতি চূড়ান্ত আন্তরিকতা, গভীর দায়বদ্ধতা সাথে শিক্ষার্থীদের প্রতি হৃদয়-অনুভূত নিঃশর্ত ভালবাসা; এবং অন্যদিকে, তাদের শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের গভীর শ্রদ্ধা যা সেই সময়কালে তাদের সারা জীবন বিরাজ করেছিল।

শিক্ষকদের শিক্ষাদানের যে গভীরতা তাও গল্পে স্পষ্টভাবে ধরা দেয় এবং আমাদের কাছে এই পেশার অন্তর্ভুক্তি নির্দেশ করে। বিজ্ঞানের শিক্ষক সুধীরবাবু, ইতিহাসের শিক্ষক কামাক্ষাবাবু ও হেডমাস্টারের মতো ব্যক্তিদের একটি বিদ্যালয়কে বড়ো করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টাও প্রতিফলিত হতে থাকে৷ সুধীরবাবু যেমন ছাত্রদের প্রচণ্ড শাসন করেন ঠিক তেমনই ছাত্রদের প্রচুর স্নেহও করেন। 

অনিল ও চারু দুই বন্ধু। চারু ক্লাসের সবচেয়ে অনিচ্ছাকৃত, বিক্ষিপ্ত শিক্ষার্থী এবং বিপরীতে পড়াশোনা করতে আগ্রহী একটি বাধ্য ছেলে অনিল। একদিন ক্লাসে চারু গুলতি পাকিয়ে একে ওকে মারতে থাকে। বিজ্ঞান শিক্ষক সুধীরবাবুর চোখে পড়ে যায় চারুর দুষ্টুমি। সুধীরবাবু চারুকে নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র জিজ্ঞেস করলে বলতে না পারলে সে উত্তম-মধ্যম প্রহার খায় সুধীরবাবুর কাছে। এ ঘটনা চলচ্চিত্রটিকে রঙিন করে তোলে৷ সুধীরবাবু ক্লাসে সবার সামনে চারুকে প্রহার করার জন্য বেচারা প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করে। সে সুধীরবাবুর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার কথা চিন্তা করতে থাকে। 

সুধীরবাবু চারুকে পেটানোর পর থেকেই সে বিদ্যালয়ে যেতে চায়না, এদিক-ওদিক ঘুরতে থাকে৷ একদিন তার বন্ধু অনিল তাকে স্কুলে যাওয়ার জন্য ডাকতে এলে চারু অনিলকে বাঁশি বাজিয়ে শোনাতে থাকে। চারু অনিলকে তার মনের মধ্যে জমানো ক্ষোভের কথা বলতে থাকে। চারু অনিলকে বলে সুধীরবাবু তাকে সবার সামনে না মেরে তাকে ভালোভাবে বোঝাতে পারত। সে সুধীরবাবুর ওপর প্রতিশোধ নিতে চায়। অনিল চারুকে বারবার বোঝাতে থাকে যে শিক্ষকরা গুরুজন, তারা আমাদের ভালোর জন্যই শাসন করে। অনিল বোঝালেও চারু প্রথমদিকে বুঝতে চায়না। চারু সেই সুধীরবাবুর ওপর কীভাবে প্রতিশোধ নেবে সে কথায় ভাবতে থাকে। চারু স্বপ্নের মধ্যেও একদিন দেখতে পায় সুধীরবাবু তাকে ধমকাচ্ছেন। এবার সে সত্যি সত্যিই প্রতিশোধ নিতে চায়। 

হঠাৎ একটা সকালবেলায় অনিল ও চারু স্কুল যাওয়ার জন্য নদীর দিকে এগোচ্ছে, পথে সুধীরবাবুর সাথে ওদের দুজনের দেখা হয়। তারপর অনিল চারুকে বুদ্ধি বাতলে দেয় কি করে সুধীর বাবু কে জব্দ করা যায়। সুধীরবাবু চারুকে দেখে তাকে পড়াশোনার মূল্য বোঝাতে বোঝাতে নদীতে নৌকা ধরার জন্য রওনা হয় কারণ তাদের নদী পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয়। নদীর পাড়ে নৌকা ধরার পূর্বে চারু সুধীরবাবুকে কাদাতে পিছলে যাওয়ার ভান করে তার ওপর হামলে পড়ে ওমনি তারা সকলেই কাদাতে পড়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে চারু কিছুটা শান্তি পায়। তারপর সে নিজেকে বদলাতে থাকে। এভাবেই এগোতে থাকে ছবির চিত্রনাট্য৷   

বাংলার জাতীয় শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে 'কাম টু দ্য পয়েন্ট' এর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে 'নিউটন'স ল অফ মোশন'। এই ছবির স্ক্রিপ্ট লিখেছেন নাইল ভট্টাচার্য। ছবিটির সহ-পরিচালনা, সঙ্গীত পরিচালনা, সম্পাদনা, কালার কারেকশন, ফলি ও সাউণ্ড ডিজাইন করেছেন দেব গোস্বামী। ছবিতে  সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন দিব্যেন্দু সরকার। ছবিতে এডিশনাল সিনেমাটোগ্রাফির কাজ করেছেন তনয় রায়।ছবিতে কস্টিউম ডিজাইন করেছেন নাইল ভট্টাচার্য। ছবিতে আর্ট ডিজাইনার ও আংশিকভাবে মেকাপের দায়িত্বে ছিলেন বিবস্বান গুপ্ত। ছবিতে ব্যবহৃত নেপথ্য কণ্ঠ দিয়েছেন দেব গোস্বামী। 

ছবিতে সুধীরবাবুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অশোক ভাঁদুড়ি, হেড মাস্টারের চরিত্রে  অভিনয় করেছেন প্রভাস সরকার, ইতিহাস শিক্ষক কামাক্ষা বাবুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শিবপ্রসাদ চক্রবর্তী, অনিলের কিশোর চরিত্রে সুমিত বিশ্বাস, চারুর কিশোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিশাল মণ্ডল, ফটিকের চরিত্রে রাকেশ হাউলি, বিনয়ের চরিত্রে সৌম্যদীপ দাস, মধ্যবয়স্ক অনিল পোদ্দারের চরিত্রে সৌগত পোদ্দার, মধ্যবয়স্ক চারুর চরিত্রে অজিত রায়, চারুর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তনুজা দাস এবং শম্ভুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমিত দত্ত। এই ছবির একটি বিশেষ গান 'জাগো জাগো নগরবাসী' গেয়েছেন লেখক শ্রী অনিল কুমার পোদ্দার নিজে৷ এছাড়াও 'মেঘের কোলে রোদ হেসেছে' গানটি গেয়েছেন শ্রীমতী শ্রাবণী সাহা। 

ছবির চিত্রনাট্য, অভিনয়, লাইটসের কাজ, আবহসঙ্গীত, দৃশ্য নির্ধারণ, সাজসজ্জা, লোকেশন ও মুখ ভঙ্গিমা প্রতিটি বিষয় একদম নজরকাড়া। চারু ও অনিলের মধ্য বয়সে আসার পর তাদের ছেলেবেলার স্মৃতিচারণের যে ক্লাইম্যাক্স দৃশ্য পর্দায় ভাসতে থাকে তা ছবিকে অন্য মাত্রা দেয়। সব মিলিয়ে এক অসাধারণ ছবি হলো 'নিউটন'স ল অফ মোশন'। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

1 comment:

  1. আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই....😊😊

    ReplyDelete