Header Ads

বাংলার গর্ব জয়িতা মন্ডল, বৃহন্নলা মানুষদের মধ্যে ভারতের প্রথম বিচারক


বিচারকের এবার এক বৃহন্নলা। কী অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ বৃহন্নলাদেরকে সমাজের বেশিরভাগ মানুষ যে চোখে দেখে তাতে তো সকলকে অবাক হতেই হবে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হলেই যেন তার কপালে জুড়ে দেওয়া হয় একগুচ্ছ অপমান। বৃহন্নলাদের টিকে থাকার লড়াইটা বহু কঠিন। লোকে তাদের মন্দ চোখে দেখে। বেশিরভাগ লোকের ধারণা যে বৃহন্নলা মানেই তারা রাস্তার মোড়ে কিংবা ট্রেনে হাত চাপড়ে চাপড়ে লোককে বিরক্ত করে টাকা আদায় করে। অনেক লোক সরাসরি তাদের ওপর গালিও বর্ষণ করে বসে। 


আমরা বৃহন্নলা সম্পর্কে বহু খারাপ ধারণা নিয়ে চলি৷ কখনো কী ভেবেছি তারা এই কাজগুলো কেন করছে? এর মূলে একটাই কারণ তাদের সমস্ত রকম সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়। তারা কোথাও কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় না। পেটের জ্বালাতে বাধ্য হয়ে তারা ট্রেনে বা রাস্তায় ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়। দোষটা তাদের নয়। দোষটা পোড়া সমাজের। 

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের বাসিন্দা জয়িতা মন্ডল ভারতের প্রথম 'বৃহন্নলা বিচারকে'র মর্যাদা পেলেন। জয়িতা মন্ডলের বয়স বর্তমান বয়স ২৯। তার জন্ম কলকাতায়। জন্মের সময় তার নাম ছিল জয়ন্ত। তিনি ছেলে হওয়া সত্বেও ছোটোবেলা থেকে মেয়ে হওয়ার তীব্র বাসনা তাকে তাড়া করে বেড়াত। যার জন্য স্কুলে পড়ার সময় ছেলেদের বহু কটুক্তি তাকে সহ্য করতে হতো। দশম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই স্কুল ড্রপআউট হন তিনি। কারণ লিঙ্গ নিয়ে নিয়মবিধিতে তিনি আটকে যান। 

জয়ন্ত থেকে তিনি হয়ে গেলেন জয়িতা। শুরু হলো তার নতুন জীবন সংগ্রাম। মনের দুঃখে-রাগে ও অভিমানে ২০০৯ সালে গৃহত্যাগ করলেন তিনি। বেরিয়ে পড়লেন বাড়ি থেকে। চলে এলেন উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে। তারপর থেকে আর কোনোদিন তিনি কলকাতামুখী হননি। রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে দিন কাটতে থাকে তার। একটা সময় বাসস্ট্যান্ডেও রাতে শুয়ে তাকে দিন কাটাতে হয়েছে। একবার এক হোটেলে তিনি থাকতে গেলে তাকে বৃহন্নলা হওয়ার অপরাধে অপমান করে বের করে দেওয়া হয়।   
   
তিনি হিজড়া হিসেবে বহু অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। এখান থেকেই বৃহন্নলাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। দূর শিক্ষার মাধ্যমে তিনি নিজের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে আইনের ডিগ্রিও অর্জন করেন৷ ২০১০ সালে উত্তর দিনাজপুরের প্রথম বৃহন্নলা মানুষ হিসেবে তিনি ভোটার আইডি হাতে পান৷ তারপর 'দিনাজপুর নতুন আলো' নামে একটি সোসাইটি গড়ে তোলেন৷ যে সোসাইটির সদস্য সংখ্যা এক লহমায় ২২০০ অতিক্রম করেছে।        
          
২০১৭ সালের জুলাই মাসে ইসলামপুরের জাতীয় লোক আদালতের বিচারক হিসেবে তিনি যোগ দেন। তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হলো বেশি বেশি করে বৃহন্নলাদের কর্মসংস্থান করানো। তিনি বিশ্বাস করেন যে বৃহন্নলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়লেই তাদের জীবন পুরো বদলে যাবে৷     
   
বাংলার গর্ব জয়িতা মন্ডল বৃহন্নলা মানুষদের মধ্যে ভারতের প্রথম বিচারক৷ সমাজকে তিনি আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন যে বৃহন্নলারাও মানুষ৷ বৃহন্নলাদেরকেও মানতে পারতে হবে আমাদের সমাজে। তারা তো অন্যায় করেনি। তারাও তো রক্তমাংসের মানুষ৷ তাদেরও অধিকার সমাজের প্রতিটি স্তরে। আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো লিঙ্গ বৈষম্য। যা দূর করতে পারলেই সমাজটা অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।      

প্রতিবেদন- সুমিত দে
 

No comments