Header Ads

কোভিড অ্যান্টিবডির স্থায়ীত্ব সাত মাস, বাঙালি গবেষক দীপ্ত ভট্টাচার্যের গবেষণায় নতুন মোড়


করোনা রোগীদের অ্যান্টিবডি লেবেল পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড সংক্রান্ত এক অজানা তথ্যের সন্ধান দিলেন আমেরিকার অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-অধ্যাপক তথা বাঙালি গবেষক দীপ্ত ভট্টাচার্য। বেশিরভাগ মানুষের  মনে একটা ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে যে করোনার বিরুদ্ধে দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা নাকি পাঁচ থেকে সাতদিনের বেশি স্থায়ীত্ব লাভ করেনা। এবার এই ভুল ধারণা টা ভেঙ্গে দিলেন গবেষক দীপ্ত ভট্টাচার্য। তার দাবী করোনার অ্যান্ডিবডি পাঁচ থেকে সাত মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে। 


দীপ্ত ভট্টাচার্য ও তার গবেষণার টিম অ্যারিজোনাতে ছয় হাজার করোনা আক্রান্ত রোগীর অ্যান্ডবডি পরীক্ষা করেন। যে পরীক্ষাতে দেখা গেছে বহু করোনা রোগী যারা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও তাদের দেহে নতুন করে উচ্চমানের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এই উচ্চমানের অ্যান্ডিবডিগুলো টানা পাঁচমাস থেকে সাতমাস অবধি স্থায়ী থাকছে। আমেরিকার অনেক রোগী করোনামুক্ত হওয়ার ৪৮ দিনের মাথায় দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হন। সেইসব রোগীদের দেহেও নতুন করে বাসা বাঁধছে উচ্চমানের অ্যান্টিবডি। 

গবেষক দীপ্ত ভট্টাচার্যের মতে, 'কোভিডের অ্যান্ডিবডির ক্ষমতা নাকি খুব বেশিদিন স্থায়ী নয় এই ধারণা নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন। আমরা আমাদের এই গবেষণায় এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘ গবেষণার পর আবিষ্কার করতে সমর্থ হয়েছি যে শরীরে কোভিডের বিরুদ্ধে  ইমিউনিটি পাঁচমাস স্থিতিশীল থাকতে পারে।" 

গত বুধবার আমেরিকার ইমিউনোলজি বিভাগের অ্যাকাডেমিকে জার্নাল 'ইমিউনিটি' তে প্রকাশিত হয়েছে দীপ্ত ভট্টাচার্যের গবেষণাটি। এই গবেষণাতে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন নিকোলিচ-জুগিচ। যারা মূলত করোনা প্রতিহত করতে অ্যান্ডিবডির ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন তাদের বুকের মধ্যে বল বৃদ্ধি করছে দীপ্ত ভট্টাচার্যদের এই গবেষণা।  

ইমিউনোলজি গবেষক, বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের মতে  করোনার জীবাণু প্রথমে যখন কোনো ব্যক্তির দেহের কোষগুলোকে সংক্রমিত করে তখন প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্বল্পস্থায়ী প্লাজমা কোষগুলি স্থাপন করে, যা ভাইরাসগুলির সঙ্গে লড়াই করার জন্য অ্যান্টবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডি সংক্রমণের চৌদ্দ দিনের মাথায় রক্তের নমুনা পরীক্ষায় ধরা পড়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে শরীরে তৈরি হয় দীর্ঘমেয়াদী প্লাজমা কোষ। এই প্রকার প্লাজমা কোষ থেকে তৈরি হয় উচ্চমানের অ্যান্টিবডি। যা দীর্ঘস্থায়ী ইমিউনিটির উৎস। 

অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অ্যান্টিবডি স্তরগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। করোনা আক্রান্ত কয়েকজন রোগীকে এই পর্যবেক্ষণে সাতমাস রাখার পর প্রামাণ্য তথ্য মিলেছে। রোগীদের দেহ পরীক্ষা করে দেখা গেছে প্রথমবার কেউ আক্রান্ত হলে তার দেহে যে স্বল্পস্থায়ী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে দ্বিতীয়বার তিনি আক্রান্ত হওয়ার পর তার দেহে দীর্ঘমেয়াদী অ্যান্ডিবডি তৈরি হয়েছে। এই গবেষণার এখনো অনেক ধাপ বাকী রয়েছে। পুরো গবেষণাটি সফল হলেই খুলে যাবে করোনাকে সহজ উপায়ে অল্প সময়ে প্রতিহত করার সঠিক পথ। এখন সেইদিকেই তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে    

No comments