Header Ads

জাপানের 'কিয়োটো ফিল্মমেকার্স ল্যাব' এ মনোনীত হলেন বাংলার ছেলে দিগন্ত


দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র মহলে ফিল্মমেকার্স ল্যাবের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ফিল্মমেকার্স ল্যাব শব্দটির সঙ্গে ভারতের দর্শকরা অতোটা পরিচিত নন। ফিল্মমেকার্স ল্যাবের স্থান চলচ্চিত্রের মধ্যে সর্বাধিক পর্যায়ে। সারা বিশ্বের চলচ্চিত্র প্রতিভাদের ওয়ার্কশপ ও হাতে-কলমে আন্তর্জাতিক স্তরের চলচ্চিত্র নির্মাণ এখানে শেখানো হয়। এই ল্যাবগুলোতে কাজের সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। গোটা পৃথিবী থেকে খুব সংখ্যক লোকেই এখানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন প্রতি বছর। 


বিশ্বের অন্যতম ল্যাব হলো জাপানের কিয়োটো শহরে অবস্থিত 'কিয়োটো ফিল্মমেকার্স ল্যাব'। এখানে 'মাস্টার্স সেশন' বিভাগে জাপান বাদে সারা পৃথিবী থেকে বাছাই করা মাত্র ২০ জনকে নেওয়া হয়। এতোটাই জটিল এখানে ফিল্ম ওয়ার্কশপ ও ফিল্ম শেখার জন্য সুযোগ পাওয়া। আর এখানে একবার সুযোগ পেলেই তার ভাগ্যের চাকা বদলে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র বানাতে গেলে এইসব ল্যাব দারুণ ভাবে সহায়তা করে।

এবার জাপানের এই 'কিয়োটো ফিল্মমেকার্স ল্যাব' এ বাংলার মুখ উজ্জ্বল করলেন কোচবিহারের তুফানগঞ্জের বাসিন্দা দিগন্ত দে। কেবল ভারত থেকে তিনিই একমাত্র এখানে ডাক পেলেন এ বছর। সূদুর জাপানের এই প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য ডাক পাওয়াটা মোটেও সহজ ছিল না তার কাছে। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এবং কাজের প্রতি বারংবার তার আস্থা তাকে এক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাচ্ছে। ২৬ বছরের এই যুবক ইতিমধ্যেই বানিয়ে ফেলেছেন ৫ টি ছবি। বর্তমানে তিনি একটি নতুন ফিচার ডকুমেন্টারি ছবি নিয়ে আসতে চলেছেন, যার নাম 'মেন্টাল ম্যানিফেস্টো'। আকালের জন্য এ ছবির কাজ বন্ধ আছে আপাতত। 

তার ঝুলিতে রয়েছে দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ১৮ টি অ্যাওয়ার্ডস ও ৫০ টি ফেস্টিভ্যাল নমিনেশন। ২০১৯ সালে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার 'প্ল্যাটফর্ম বুসান' এ মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এবছর হলিউড উইকলি চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি একজন বিচারক হিসেবে ছিলেন৷ তিনি চলচ্চিত্র সমালোচনার ওপর ভিত্তি করে তিনটি গবেষণা পত্রও লিখেছেন। যা প্রকাশিত হয় ভারতের সর্বোচ্চ  ফিল্ম জার্নাল 'FIPRESCI INDIA' তে। তার পরিচালিত শর্টফিল্ম 'মনসুন ক্লিপস্' আমেরিকা, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম, ভারতের আমাজন প্রাইম ও এমএক্স প্লেয়ারের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে দেখা যাচ্ছে। 
 
দিগন্ত দে কর্মসূত্রে এখন হায়দ্রাবাদে থাকেন। সেখানে একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে তিনি কাজ করেন। করোনার জন্য পুরো অনুষ্ঠান এ বছর অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। নাহলে জাপানে গিয়ে তাকে অংশ নিতে হতো। জাপান যাওয়ার পুরো খরচও ঐ সংস্থা বহন করতো। জাপানের এই সংস্থাটি জাপানের 'কিয়োটো হিস্টোরিকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কমিটি' এবং 'টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি' দ্বারা যুগ্মভাবে পরিচালিত হয়। গত বছর এই ল্যাবে ১১০ টি দেশের ১৭৩৩ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন তাতে মাত্র ৪০ জন মনোনীত হন। প্রত্যেক মনোনীত অংশগ্রহণকারীরা পাবে বিশ্ববিখ্যাত ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের 'বাইনেল কলেজ অফ সিনেমা'র প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ। সত্যিই যেন বিষয়টা রূপকথার মতো। আগামী ৭ ও ৮ ই নভেম্বর এই কিয়োটো ল্যাব অনুষ্ঠিত হবে। 

দিগন্ত দে জানান "ভারতের মতো দেশ যেখানে পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশি চলচ্চিত্র তৈরি হয় সেখানে এই ধরণের ল্যাব গড়ে তোলার উদ্যোগ কখনো নেওয়া হয়নি। তাই আমাদের কিছু সংখ্যক দেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। যেটা একেবারেই দুঃখজনক। জাপানের সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মিলে যেভাবে পনেরো বছর ধরে এটি করেছে তা থেকে আমাদের শেখা দরকার। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সিনেমা বানাতে হলে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কাঠামোও প্রয়োজন।"

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments