Header Ads

আকালের দুর্দিনেও বিগ বাজেটের পুজোতে সামিল আমলাশুলি সার্বজনীন দুর্গোৎসব


২০২০ সালটার আরম্ভ যখন জমকালো ভাবে হলো তখন আমরা সকলে ভেবেছিলাম বছরটা বেশ ভালোভাবে কাটতে চলেছে। কিন্তু বছরের তিনমাস গড়াতে গড়াতেই পৃথিবীর বুকে নেমে এলো আকালের দুর্দিন। কোভিড নাইন্টিন নামের এক ভিনদেশী ভাইরাসের করাল গ্রাসে নিস্তব্ধ হয়ে গেল গোটা বিশ্বময়। ২৩ শে মার্চ দেশজুড়ে জারি হলো লকডাউন। তারপর থেকেই এক ভয়ার্ত বিভীষিকা গ্রাস করতে থাকে রাজ্যের মানুষকে। 


লকডাউনের আঘাতে কর্মহীন হয়ে পড়তে থাকে বহু মানুষ। কারও তিনবেলা খাবার জোটে না। কারও সংসারের সদস্যরা এক এক করে মারা পড়ছে। টিভির পর্দা খুললেই দেখা যাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকের দল গ্রীষ্মের ফুটিফাটা গরমে পোড়া পিচঢালা রাস্তাতে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছে। কেউ কেউ না খেতে পেয়ে গলায় দড়ি পরে আত্মহত্যা করছে। অনেকে কাজের আশাতে বাড়িতে বসে ব্যাকুল হয়ে পড়ছে। 

মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পেরিয়ে আমরা এখন অক্টোবরেরর মাঝামাঝি সময়ে দাঁড়িয়ে। ছ'মাস পেরিয়ে গেছে তবুও আকাল কাটেনি৷ আমাদের রাজ্যের দিকে তাকালে দেখা যায় বাংলাতে সুস্থতার হার ক্রমশ বাড়ছে। বাংলা জেগে উঠছে নতুন স্বপ্নের ভোরের সন্ধানে। মহামারীর এই কঠিন সময়ে মা আসছেন। আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে শারদীয়ার শুভেচ্ছাবার্তা। ঢাকের আওয়াজে উদ্বেল হয়ে উঠছে আমাদের সোনার বাংলা৷ রোগগ্রস্থ বর্তমান প্রহরে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা গ্রাম-বাংলার প্রতিটি পুজো কমিটির কাছে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। 

আজকের প্রতিবেদনে এমন একটি গ্রামের দুর্গাপুজোর সন্ধান দেবো যেখানকার পুজো বিগত কয়েক বছর ধরে জেলার সেরা পুজোর তকমা অর্জন করে আসছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড় থানার অন্তর্গত আমলাশুলি গ্রামের পুজো শহুরে পুজোগুলোর থেকে কোনো অংশে কম যায়না। বাজেটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার যে-কোনো শহরাঞ্চলকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই পুজো। মহানগর কলকাতার বহু পুজো কমিটি যখন পুজো করার জন্য এ বছর হিমশিম খাচ্ছিল সেখানে সাত লক্ষ টাকা বাজেটে পুজো করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে আমলাশুলি সার্বজনীন দুর্গোৎসব। 

চলতি বছরে আমলাশুলি সার্বজনীন দুর্গোৎসবের পুজো পদার্পণ করছে ৩৪ তম বর্ষে। এ বছরের মণ্ডপ সেজে উঠেছে হোগলা পত্রে। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে নদীয়ার কৃষ্ণনগরের শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় মণ্ডপটি তৈরি হয়েছে। মণ্ডপটি এক ঝলক দর্শন করলে চোখ জুড়িয়ে যায়। মণ্ডপের ভেতরে শৈল্পিক কারুকার্যে সেজে উঠেছে দুর্গামঞ্চ। 

করোনার জন্য এখানকার পুজোতে জাঁকজমকতা এ বছর একটু কম। অন্যান্য বছর এই গ্রামের পুজোর প্রতিমাটি আভিজাত্যপূর্ণ হয়, চন্দননগরের আলোকসজ্জাতে পুরো গ্রাম মুড়ে ফেলা হয়, পুজোর দিনগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ও মণ্ডপের পিছনে মেলা বসে। এ বছর স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে সরকারি নির্দেশিকা মেনে মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চন্দননগরের আলোকসজ্জা রাখা হচ্ছে না। এ বছরের প্রতিমা বানানো হয়েছে সাবেকি ঘরানাতে। 

এই গ্রামের পুজোটি প্রথম পর্যায়ে অল্প বাজেটে করা হতো। যত দিন গেছে বাজেট তত বাড়তে শুরু করেছে। গ্রামের ২৫ তম বর্ষের পুজো থেকেই থিমের পুজো শুরু হয়েছে৷ যারা শহরে থাকেন তারা যদি শহরের গুমোট পরিবেশ থেকে বেরিয়ে মনোরম পরিবেশে শান্তিপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী গ্রামের পুজো দেখতে চান, তাহলে চলে আসুন আমলাশুলি সার্বজনীন পুজো কমিটির পুজো দেখতে। প্রতি বছর এখানকার পুজোতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন ছুটে আসে। পুজোর চারদিন এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে।  এখানকার পুজোর জৌলুস একেবারে আলাদা। এখানকার পুজো কমিটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিচালিত হয়। মানুষজনের ভিড়কে এই পুজো কমিটি যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তা বেশ প্রশংসনীয়।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments