অর্ণব ঘোষ রায়ের লড়াই, অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া স্বাস্থ্য দপ্তরের নথি প্রকাশ হচ্ছে বাংলাতে
বিখ্যাত মনীষী জর্জ বার্নাড শ বলেছেন "বিদেশে থাকাকালীন আমরা আমাদের মাতৃভাষার সৌন্দর্য বুঝতে পারি।" এই উক্তিটি একদম বাস্তব সত্য। যারা প্রবাসী জীবনযাপন করেন তারা ভালোভাবে বুঝতে পারেন মাতৃভাষার মূল্য ঠিক কোন জায়গায়।
প্রবাসে থাকলে যে বিষয়টার মুখোমুখি সকলকে পড়তে হয় তা হলো নিজের ভাষা নিয়ে অন্যান্য ভাষাভাষীর মানুষ অনেক প্রশ্ন করে থাকেন৷ যার জবাব সঠিক ভাবে দিতে পারলেই মনের মধ্যে একরাশ শান্তি নেমে আসে৷ এখানে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জের বিষয় হলো আপনাকে তারা নিজের ভাষা নিয়ে যতো বেশি ভালো বিষয় জানতে চাইবে আপনাকে ততোই চেষ্টা করতে হবে নিজস্ব ভাষার গর্ব করার মতো বিষয়গুলো তাদের সামনে খোলাখুলি বলার। প্রশ্ন হলো আমার ভাষাতে গর্ব করার মতো কী কিছু আছে? এর উত্তর খুঁজতে হলে আপনাকে অবশ্যই মাতৃভাষা নিয়ে চর্চা করতে হবে।
প্রবাসের কথা ছেড়েই দিলাম বাইরের কোনো মানুষ যখন বাংলার মাটিতে ঘুরতে আসবেন তখন আপনাকেও মাতৃভাষার প্রসারের জন্য উঠে পড়ে লেগে যেতে হবে৷ নিজের ভাষা ত্যাগ করে অন্যের ভাষা আজীবন গ্রহণ করে যাওয়া নিছক বোকামি। এই বোকামি থেকে বাঙালিদের বেরিয়ে আসতে হবে।
অনেকে আজকাল প্রশ্ন ছোঁড়েন যে মাতৃভাষা নিয়ে লড়াই করে কোনো লাভ নেই৷ কী হবে মাতৃভাষা নিয়ে পড়ে থাকার? মাতৃভাষা নিয়ে কী কোনো বড়ো কিছু করা যায়? এর সহজ উত্তর হলো জাপান, ইতালি, জার্মানি, কানাডা, ফ্রান্স ও স্পেনের মতো দেশগুলো যেখানে মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের উন্নতি করতে পেরেছে তখন আমরা কেন পারিনা ওদের মতো একই পথের পথিক হতে? বাঙালিকে মনে রাখতে হবে আপনি যেখানেই যান না কেন মাতৃভাষা নিয়ে কাজ করবার ইচ্ছে ও চেতনা থাকলে সবই সম্ভব। যার বড়ো উদাহরণ হিসেবে উঠে এলো অর্ণব ঘোষ রায়ের নাম।
বারাসাতের যুবক অর্ণব ঘোষ রায় যিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার একজন নাগরিক। দেশি থেকে বিদেশি নাগরিক হওয়ার পরও ভোলেননি বাংলা ভাষাকে৷ তিনি নিজের ভাষাকে প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসেন। মাতৃভাষার প্রসারের জন্য বহুদিন ধরে কাজ করে চলেছেন। তিনি ভারতে বাঙালির জাতীয় সংগঠন 'বাংলা পক্ষ' সংগঠনের সাথে প্রতিষ্ঠার প্রথমদিন দিন থেকেই যুক্ত আছেন। তিনি ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির আইনের ছাত্র। তার হাত ধরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইতিহাস তৈরি হলো। তাঁর বাংলা ভাষা নিয়ে বহুদিনের কঠোর লড়াইয়ের ফলে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটে সকল নথি বাংলাতে প্রকাশিত হচ্ছে।
ভিক্টোরিয়া স্বাস্থ্য দপ্তরের এই সাইটে করোনা সম্পর্কিত সমস্ত বিশদ সতর্কীকরণ, পরীক্ষা ও আইসোলেশন এবং করোনা পরিস্থিতিতে কী কী সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় ইত্যাদী যাবতীয় তথ্য জানা যাচ্ছে সম্পূর্ণ বাংলা ভাষাতে। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের স্থায়ী বসবাসকারী বাঙালির জনসংখ্যা ৫৪ হাজার ৫৫৬ জন। অর্ণব ঘোষ রায় লক্ষ্য করেছেন ভারত থেকে বহু বাঙালি ছেলেমেয়েদের বাবা-মা ভিক্টোরিয়াতে চিকিৎসা করাতে এলে ভাষাগত সমস্যার জন্য বহু অসুবিধার সম্মুখীন হন। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য তিনি দীর্ঘ লড়াই শুরু করেন। তার পরবর্তী লক্ষ্য হলো ভিক্টোরিয়াতে বাংলাকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণ।
অর্ণব ঘোষ রায় কেবল একটা মানুষ যিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৭,২৯৫ মাইল দূরের একটি দেশে একা লড়াই করে সেখানে বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করে সাফল্য অর্জন করেছেন। তার এই সফলতা থেকে আমাদের মতো প্রতিটি বাঙালিকে শিক্ষা নিতে হবে। মাতৃভাষার প্রতি গভীর প্রেম ও আত্মবিশ্বাস থাকলেই মাতৃভাষাতে কাজ করে সফল হওয়া যায়৷
সংবাদটির প্রমাণস্বরূপ ভিক্টোরিয়া রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটটির লিঙ্ক দেওয়া হলো https://www.dhhs.vic.gov.au/coronavirus/bengali
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment