Header Ads

সমুদ্র নেই তবু সমুদ্রের ছোঁয়া পেতে পৌঁছে যান মালদায়


পারলে একবার মালদার সমুদ্র সৈকতে ঘুরে আসুন৷ কী অবাক হলেন নাকি? আপনি নিশ্চয় ভাবছেন মালদায় আবার সমুদ্র এলো কোথা থেকে? মালদাতে সমুদ্র নেই আমরা সকলেই জানি কিন্তু আপনি কী ভাটরা বিলের নাম শুনেছেন? মালদা জেলায় অবস্থিত ভাটরা বিল, যাকে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় দীঘা বলা হয়। বিশাল আকৃতির এই বিলের এপাড় থেকে ওপাড় দেখা যায়না৷ জলের রঙও নীল৷ যেন চোখের সামনে একটা আস্ত সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। 


ভাটরা বিলের কাছে আপনি যদি নিজের ছবি উঠিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখে দেন দীঘার সমুদ্র সৈকতে একদিন তাহলে লোকে সত্যি সত্যিই দীঘা বলে বিশ্বাসও করে নেবে। বিশ্বাস করবে নাই বা কেন ভাটরা বিলের জলের সাথে দীঘার সমুদ্রের জলের হুবহু মিল আছে। দীঘার সমুদ্রের মতো ভাটরা বিলেও প্রচণ্ড ঢেউ দেখা যায়। দীঘার মতো এখানেও স্নান করতে লোকে ভিড় জমান৷ দীঘার সমান আনন্দ উপভোগ করার আদর্শ জায়গা হলো ভাটরা বিল। 

পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাটরা গ্রামে অবস্থিত এই বিল৷ ভাটরা গ্রামের পাশেই অবস্থান করছে এই ভাটরা বিল৷ এই বিলের আরেক নাম হলো শান্তিপুর বিল। প্রায় দশ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই বিল৷ শান্তিপুর, মাধাইপুর ও মোরগ্রামের মতো গ্রামগুলির লাইফ লাইন হলো ভাটরা বিল। যার চতুর্দিকে শুধুই ফসলের ক্ষেত। আর সবুজ ক্ষেতের মাঝে ভাটরা বিল বা ভাটরা জলাধারের নীল জলরাশি, যেন সবুজের বুকে এক টুকরো দীঘা। 

সারাবছর ভাটরা বিল জলে জলাময় থাকলেও বর্ষাকালে ফুলে ফেঁপে ওঠে। প্রতি বছর বর্ষাকালে ভাটরা বিলে পর্যটকদের ভিড় লেগে যায়৷ যত দিন যাচ্ছে ভাটরা বিলে পর্যটকদের আনাগোনা ততই বেড়ে চলেছে। সমুদ্র সৈকতের স্বাদ নিতে বিল দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন শহর ও গ্রাম থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ। ভাটরা বিলের পাড়ে বসেছে খাবারের দোকানও। মনোরঞ্জনের জন্য বহু মানুষ পরিবারসহ নৌকা ভাড়া করে চরে বেড়াচ্ছেন ভাটরা বিলের বক্ষে। 

শীতকালে জলাশয় কিছুটা শুষ্ক থাকে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে এখানে হাজির হয় সাইবেরিয়ান পরিযায়ী পাখির দল। বিলে ছোটো মাছ ও শামুক প্রচুর পরিমাণে থাকার জন্য শীতের কয়েকমাস বিভিন্ন প্রজাতির পাইপার, বুনোহাঁস, বালিহাঁস ও স্প্যারো প্রজাতির পাখিদের অস্থায়ী আস্তানা হয়ে ওঠে। ভাটরা গ্রামের স্থানীয়দের মতে, গত বছর থেকে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এর পিছনে অন্য কারণ লুকিয়ে আছে। অবাধে ফাঁদ পাতা ও চোরাশিকারীদের গুলি করে পাখি হত্যা করা হয়। 

বিলের চারপাশে উঁচু উঁচু খুঁটি পুঁতে তাতে জাল ঝুলিয়ে দেয় শিকারীরা। সেই জালে বালিহাঁস, বুনোহাঁস, পাইপার, বঘেরা জাতির পাখিরা। সেইসব পাখির মাংস চারশো থেকে আটশো টাকা কিলো দরে চড়া দামে বিক্রি হয়৷ পাখি শিকারের নেশাতে বুঁদ হয়ে টাকার লোভে চোরাশিকারীরা শিকারে মেতে উঠতে থাকে। এখনও তারা সমানভাবে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শীতকালে জল কমে আসার জন্য ও প্রাণনাশের আশঙ্কায় পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা হ্রাস পাচ্ছে। 

গ্রামের লোকেরা চোরাশিকারীদের অত্যাচার দমানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছেনা। ভাটরা গ্রামে চোরাশিকারীদের আক্রমণ আটকানোর জন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ভাটরা বিলে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা কমে গেলে চলবে না। ভাটরা বিলকে কেন্দ্র করে উন্নতমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যাবে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments