আটঘন্টা সাইকেল চালিয়ে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে কলকাতা পৌঁছলেন এক বাবা, যার পাশে দাঁড়াল 'ব্লাডমেটস'
ছেলেকে বাঁচানোর জন্য এক বাবার কঠিন লড়াই। কোনো রকম বাঁধা তাকে হার মানাতে পারেনা। একজন বাবার কাছে তার সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি হলো তার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে৷ সন্তানই বাবা-মায়ের কাছে সব। দুনিয়াতে এমন বাবা-মাও লক্ষ্য করা যায় যারা আধপেটা খেয়েও সন্তানদের মুখে তিনবেলা অন্ন তুলে দেয়। বাবা-মার কাছে সন্তান হলো প্রাণের চেয়েও প্রিয় বস্তু।
নিজের সন্তানকে বাঁচাতে কীভাবে লড়াই করতে হয় তা সকলের চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন সুন্দরবন অঞ্চলের বাসন্তী গ্রামের বাসিন্দা তপন জানা। যার ছেলে সুদীপ্ত জানা, যে মাত্র ছয় মাস বয়স থেকেই থ্যালাসেমিয়াতে আক্রান্ত। তাই সময়মতো তার পর্যাপ্ত রক্তের দরকার পড়ে। ছেলের জন্য তপনবাবুকে প্রায়ই বিভিন্ন হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।
অত্যন্ত কষ্টের সংসার তপনবাবুর। কলকাতার গড়িয়াতে রিক্সা চালিয়ে কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করে তিনি অর্থ উপার্জন করেন। লকডাউন চলাকালীন সময়ে নিজের গ্রামের বাড়িতেই তিনমাস থেকে যান তিনি। তারপর কয়েকমাসের মধ্যেই রক্তের দরকার পড়ে তার ছেলের৷ ১৬ বছর বয়সী ছোট্ট সুদীপ্তকে রক্ত না দিলে তার প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা। যে করেই হোক তার রক্তের ব্যবস্থা করতে তপনবাবু কলকাতার উদ্দেশ্যে সাইকেলে করে বেরিয়ে পড়লেন।
সাইকেলের সামনের রডে তার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছেলে ও পিছনের সিটে স্ত্রীকে বসিয়ে টানা আটঘন্টা তপনবাবু সাইকেলে করে কলকাতা পৌঁছলেন। কাঠফাটা গরমে প্রায় দেড়শো মাইল পথ সাইকেলে প্যাডেল করতে হয়েছে তাকে। সমস্ত ক্লান্তি ভুলে তিনি সাইকেলে এগোতে থাকেন। লক্ষ্য শুধু একটাই ছেলেকে রক্ত দিয়ে তার জীবন রক্ষা করতে হবে।
কলকাতার হাসপাতালগুলোতে তিনি কখনো সময়মতো রক্তও পেয়েছেন। আবার অনেক সময় খালি হাতেও ফিরতে হয়েছে তাকে। কিন্তু তিনি একেবারেই হাল ছেড়ে দেননি। লড়াইয়ের ময়দান থেকে তিনি সরে যাননি। তপনবাবু থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত তার ছেলের প্রসঙ্গে বলেন "কষ্ট করে সংসার চালানো যে কতোটা জটিল তা আমি বেশ ভালো করেই জানি৷ কলকাতায় আমি যে ঘরে থাকি সেখানে একটাই ঘর। ওখানে বাথরুমও নেই। আর আমার ছেলে ছয় মাস বয়স থেকেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। বাসন্তী থেকে কলকাতা এই যে দেড়শো কিমি পথ সাইকেল চালিয়ে এলাম আমি একটুও ক্লান্ত হয়নি। আমার মনে এখন শুধু একটাই জেদ কাজ করছে যে ছেলেটাকে যে করেই হোক বাঁচাতে হবে।"
তপন জানার কঠিন লড়াইয়ের কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসে 'ব্লাডমেটস৷' 'পিপলস ব্লাড ব্যাঙ্কে'র সঙ্গে 'ব্লাডমেটসে'র এক বছরের একটি বিশেষ চুক্তি হয়েছে। যে চুক্তি অনুযায়ী তার এক বছরের প্রয়োজনীয় রক্তের জোগান দেবে তারা। থ্যালাসেমিয়া ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনও সঙ্গে থাকবে তাদের সাথে৷ 'ব্লাডমেটসে'র সহযোগীতা তপনবাবুর লড়াইতে নতুন করে অক্সিজেন জোগিয়েছে৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment