'মায়ের জন্য রক্তদান' এক মানবিক উৎসবের সাক্ষী থাকলো গোটা মহানগর
শরতের নীল মেঘে সেজে উঠেছে বাংলার আকাশ। মা আসছেন। চারিদিকে তাই আনন্দের আগমন বার্তা। প্যান্ডেমিক সময়ে আপামর বাঙালি মারণ ভাইরাসকে কিছুটা হলেও বিদায় জানিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে পুজোর। আমাদের বাংলা ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছে। বাঙালি বছরভর যে দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করে থাকে তা হলো পুজোর চারটে দিন। চলতি বছরে পুজোটা হবে একটু অন্যরকম ভাবে। সমস্ত প্রকার স্বাস্থ্যবিধি অবলম্বন করেই হবে এই বছরের দুর্গোৎসব। পুজোর চেনা ব্যস্ততা সামান্য অচেনা হয়ে ধরা দিলেও মা আসছেন বাংলাকে শান্তির বার্তা দিতে।
শহর থেকে গ্রাম প্রতিটি জায়গার ক্লাব থেকে সার্বজনীন পুজো কমিটি সকলে প্রস্তুত হচ্ছে এক অন্যরকম পুজো মানুষকে উপহার দিতে। পুজো আসতে আর মাত্র এক মাস। আশ্বিনের সূচনা হতে না হতেই এ বছর আমরা পার করে ফেললাম মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে মাতৃপক্ষের সূচনাও হয়ে গেছে। এবার শুধু উমার বাপের বাড়ি আসার পালা।
উমা তো আসবেন আমরা সব্বাই জানি। এই উমা আসার আগেই বাংলাকে এক সামাজিক ও মানবিক বার্তা দিতে গত ২০ শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হলো এই বছরের এক মহান উৎসব 'মায়ের জন্য রক্তদান'। 'ফোরাম ফর দুর্গোৎসব' আয়োজন করেছিল এই বিশেষ উদ্যোগের। 'ফোরাম ফর দুর্গোৎসব' হলো কলকাতার ৩৫০ থেকে ৪০০ টি ক্লাব নিয়ে গঠিত একটি সংস্থা। শুধু 'ফোরাম ফর দুর্গোৎসব'ই নয়, 'মায়ের জন্য রক্তদান' উৎসবে 'শারদ সৃজনী সম্মান' এবং 'খুশী' নামের দুটি সংস্থাও অংশ নিয়েছিল একটু আলাদা ভাবে।
নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে সাফল্যের সাথে অনুষ্ঠিত হলো এই মহান উৎসব৷ ২০২০ তে চতুর্থ বর্ষ অতিক্রম করলো 'মায়ের জন্য রক্তদান'। এই বছরে মোট রক্তদাতার সংখ্যা ছিল ১৩১৭ জন। এই উৎসবে 'শারদ সৃজনী সম্মান' ও 'খুশী'র তরফে প্রত্যেক রক্তদাতার হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে চারাগাছ।
'শারদ সৃজনী সম্মান' নামের এই সংস্থা ২০১৩ সাল থেকে কলকাতার বিভিন্ন পুজোর প্রচারকে কেন্দ্র করে সার্বজনীন পুজোগুলোকে সম্মান দিয়ে থাকে। আর 'খুশী' মূলত একটি অলাভজনক সংস্থা। যারা পথশিশু ও অসহায়-দুর্গতদের নিয়ে কাজ করে। তাদের নানা বিপদ-আপদ ও অসুবিধার সময় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এ সংস্থা। মে মাসের ২০ তারিখ আমফানে কলকাতা ও তার পাশ্ববর্তী জেলাতে প্রচুর গাছপালা নষ্ট হয়ে পরিবেশের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতিপূরণের তাগিদে 'খুশী' ও 'শারদ সৃজনী সম্মান' যৌথভাবে গত ৫ ই জুন শপথ নেয় ছয় মাসে এক লক্ষ গাছ লাগানো ও বিতরণ করার। সেই লক্ষ্যে তারা 'আমার বাংলা আবার সবুজ হোক' নামের একটি কর্মসূচী শুরু করেছে।
রক্তদান যেভাবে একটা মানুষের জীবন বাঁচায়, সেভাবে গাছও বহু মানুষের জীবন বাঁচায়। আমরা বলে থাকি একটি গাছ একটি প্রাণ৷ আসলে একটি গাছ মানে হাজার প্রাণ। 'মায়ের জন্য রক্তদানে'র সমর্থনে 'খুশী' ও 'শারদ সৃজনী সম্মান' প্রত্যেক রক্তদাতার হাতে তুলে দিয়েছে একটি করে চারাগাছ। তারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গাতে ২৮০০০ গাছ লাগিয়েছে ও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের হাতে চারাগাছ তুলে দিয়েছে। ২০ শে সেপ্টেম্বরের এমন অভিনব উৎসবের মধ্য দিয়ে মানবিক বার্তায় মুখরিত হলো গোটা মহানগর।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment