আফ্রিকার যে দেশে সম্মান দেওয়া হয় বাংলা ভাষাকে
৮ ই আশ্বিন, ১৪২৭, শুক্রবারঃ- ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার মতো এমন জাতি আর কটা আছে পৃথিবীতে। একটা ভাষার ভিত্তিতে কীভাবে দেশ গড়ে ওঠে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। ভাষা রক্ষার জন্য বাঙালির সেই দীর্ঘ লড়াই বিশ্বের ইতিহাসে আজীবন লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। ভাষা শহীদদের মর্যাদা দিতে ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বের সকল দেশে ঘটা করে পদলিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা হলো বাংলা। ঝাড়খণ্ডের বৃহৎ অংশ ও আন্দামান নিকোবরের বৃহৎ অংশের মানুষ বাঙালি হওয়া সত্বেও এই দুই জায়গাতে বাংলাকে দেওয়া হয়নি সরকারি ভাষার মর্যাদা। কয়েকমাস আগে লন্ডনে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষার সম্মান পায় বাংলা ভাষা। অস্ট্রেলিয়াতেও সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে বাংলাকে। সূদুর আমেরিকারও চতুর্থ ভাষা বাংলা। কিন্তু আপনারা কী জানেন আফ্রিকার কোন দেশের সরকারি ভাষা বাংলা?
বাংলাদেশ থেকে ১৫০০০ কিলোমিটার দূরের একটি দেশ হলো সিয়েরা লিওন। এটি পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী বহুভাষীর দেশ। এই দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম বক্সাইট ও টাইটানিয়াম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে অন্যতম৷ দেশের আয়তন ৭১, ৭৪০ বর্গকিলোমিটার। দেশের মোট জনসংখ্যা ৭৬ লক্ষ। বহুভাষীর দেশ হওয়ার জন্য সিয়েরা লিওনে বিভিন্ন জাতি ও ভাষার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। সিয়েরা লিওনকে বলা হয় 'হীরার খনির গরীব দেশ'।
২০০২ সালে সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষাকে সাম্মানিক সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সিয়েরা লিওন ও বাংলাদেশের বিস্তর ফারাক আছে। উভয় দেশের সাথে উভয় দেশের কোনো ক্ষেত্রেই সাদৃশ্য নেই। অথচ এই দুই দেশের বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা এতোটাই গভীর যে বাংলা ভাষাকে আফ্রিকার এই দেশ নিজের করে নিয়েছে৷ ১৯৯১ সাল থেকে ২০০২ এই সময়কালে দেশটি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। যার ফলে এই দেশে শান্তি ফেরাতে জাতিসংঘ বিপুল পরিমাণ শান্তিবাহিনী নিয়োগ করে। তাদের বৃহৎ অংশজুড়ে ছিল বাংলাদেশের সৈন্যবাহিনী। সিয়েরা লিওনের বিদ্রোহীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সেনারা যুদ্ধ পর্যন্ত করেছিল৷ এই দেশের শান্তি ফেরাতে বাংলাদেশের সেনারা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। বিদ্রোহীদের দখলে যাওয়া অঞ্চলকে মুক্ত করতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
সিয়েরা লিওনের সরকার কৃতজ্ঞ থাকে বাংলাদেশের কাছে। ২০০২ সালে বাংলাদেশের সেনাদের প্রচেষ্টায় সিয়েরা লিওনে শান্তি ফিরে আসে। এ দেশের প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজান কাব্বাহ বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানাতে বাংলা ভাষাকে সাম্মানিক সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment