নজরকাড়া পটচিত্রে ভরা মাস্ক তৈরি করে বাঁচার পথ খুঁজছে 'পটের গ্রাম'
প্রতি বছর পুজো এলেই থিমের জন্য সাড়া পড়ে যায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার 'পটের গ্রাম' নামে পরিচিত চন্ডীপুর, হবিচক, নানকরচক গ্রামে। পটের কাজের জন্য এই অঞ্চলের লোকেরা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পর্যন্ত অর্জন করেছেন। বিভিন্ন সচেতনতামূলক চিত্র, মানুষের আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, সামাজিক চিত্র প্রভৃতি উঠে আসে পটের মাধ্যমে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গাতে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে পটশিল্পের। পুজোতে পটচিত্রের নানাবিধ কাজ লক্ষ্য করা যায় শহরের মণ্ডপে মণ্ডপে।
করোনাকালীন পরিস্থিতির জন্য এই বছরের পুজোতে থাকবে না কোনো জাঁকজমকতা। হবেনা কোনো থিমের মণ্ডপ। যার ফলে পটশিল্পীদের রোজগার এই বছর খুব একটা হবেনা বলেই মনে করছেন পটশিল্পীরা। তাদের কাছে সবচেয়ে খারাপ বছর হলো ২০২০। গত মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়ার পর দুশ্চিন্তার মেঘ জমে পটশিল্পীদের মনে। রোজগারের সঠিক উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না কেউই। রাজ্যজুড়ে উৎসব ও মেলা বন্ধ থাকার ফলে পেটে টান পড়তে থাকে তাদের।
লকডাউনের ফলে বন্ধ হয়ে যায় খদ্দেরদের আনাগোনা। খুচরো ব্যবসায়ী বা পাইকারি কেউই পট না নেওয়াতে রোজগারের আলাদা পথ খুঁজে নিতে হয় পটশিল্পীদের৷ লকডাউন ও আমফানের জোড়া ধাক্কায় সংকটের মুখে পড়ে যান চন্ডীপুর, হবিচক, নানকারচক এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক পটশিল্পী। এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে তারা।
পরিবারের কথা ভেবে কেউ হাতে কোদাল তুলে নিয়েছেন, কেউ বেছে নিয়েছেন একশো দিনের কাজ। তবে পটশিল্প থেকে সরে আসেননি কেউই। কাপড়ের নানা রকম লৌকিক চিত্র আঁকা মাস্ক বিক্রি করে নতুন করে লাভের মুখ দেখছেন পটুয়ারা। এই মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি বাড়িতে সাজিয়েও রাখা যাবে। বৈচিত্র্যময় অভিনব এই মাস্কের বাজারজোড়া চাহিদাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সামান্য রোজগারের তাগিদে আবেদ চিত্রকর, সায়েরা চিত্রকর, রিজিয়া চিত্রকর, আলেকজান্ডার পটিদার প্রমুখরা এই মাস্ক বিক্রি করে পটশিল্পকে করোনার আবহে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসছেন।
লৌকিক ঘরনার অভিনব মাস্কগুলো ছড়িয়ে পড়ছে জেলায় জেলায়। অর্ডার অনুযায়ী ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে মাস্কগুলো। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া, মহিষাদল, তমলুক ও নন্দীগ্রাম, এমনকি কলকাতা থেকেও অর্ডার আসছে মাস্কের। স্থানীয় শ্যামসুন্দর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুনাংশু প্রধান তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বিক্রেতারা ফেসবুকের সাহায্যে মাস্কের প্রোমোশনের কাজ করছেন। ফেসবুককে কাজে লাগিয়েই এই মাস্ক তারা সহজেই বিক্রি করছেন।
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক
Post a Comment