বাঙালির বাংলা ভাষার প্রতি আত্মসম্মান কী হ্রাস পাচ্ছে?
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা সবাই, বিশেষতঃ তরুণরা সকলেই স্মার্ট হতে চাই। এই স্মার্ট হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে প্রধান অন্তরায় মনে করি ভাষাকে। আমরা স্মার্ট হওয়ার জন্য কথা বলতে গিয়ে ইংরেজি, আরবি, হিন্দি, এমনকি উর্দু ভাষার শব্দ পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকি।
সব নাগরিকই জানেন, দেশের কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই। সংবিধানেও তা লেখা আছে। কিন্তু সংবিধানে লেখা থাকা আর তা বাস্তবে প্রয়োগ করা এক নয়। বরং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে, আদালতে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার যথেচ্ছ ব্যবহার চলছে। কোনো বাধা নেই। দেশের উচ্চ আদালতের ভাষা ইংরেজি। সংসদীয় অধিবেশন চলে হিন্দিতে। দেশেই অধিকাংশ আইন-কানুন লেখা হয় ইংরেজি বা হিন্দি ভাষায়। ব্যাংকের প্রতিবেদন গ্রাহকদের কাছে আসে ইংরেজিতে। চিকিৎসকরা দুর্বোধ্য ইংরেজি ভাষায় রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন, এমনকি দেশের শিক্ষিত সমাজ এখন ব্যবহারিক জীবনে প্রতিক্ষণে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষা ব্যবহার করছে।
আর সেই দেখে বঙ্গতরুণ সমাজ নিজের মাতৃভাষা পরিত্যাগ করতে বসেছে। এখন আমাদের সাংস্কৃতিক চিন্তা ও বিশ্বাসের মধ্যে হিন্দি সংস্কৃতি এমনভাবে স্থান করে নিয়েছে যে, তা আমাদের জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। আমাদের পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে গান, সিনেমা, চুলের কাটিং, এমনকি আমরা যে ভাষায় কথা বলি তাতেও ব্যাপকভাবে বিহার-ইউপি সংস্কৃতি প্রভাব ফেলছে। আজকাল আমাদের ঘরে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর চোখ খুলেই টিভি চ্যানেলে হিন্দি ভাষার ক্রাইম বা হরর দৃশ্য দেখে হিন্দিতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে।
ফলে বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য পরিত্যাজ্য হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মাঝে বাংলা ভাষাকে হীন ভাবার মতো হীনমন্যতাও কাজ করছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন জাগে, একবিংশ শতকে পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব কতটুকু টিকে থাকবে? বহু ভাষা-বহু জাতি-বহু ধর্ম, বিবিধ সংস্কৃতির এদেশের বুকে ধর্মীয় উগ্রবাদ, হিন্দি আধিপত্যবাদ বড় দৃষ্টিকটু মাত্রায় দৃশ্যমান৷
হিন্দি একটা ভাষামাত্র। কাজে লাগল বা লাগল না। কিন্তু, যে শক্তি চায়, আপনার বেঁচে থাকাটা বরাবরের মতো পালটে গেলে তার মাল বেচার সুবিধে - সে স্মার্টফোনই হোক, বা ভালো দিনের স্বপ্ন, ভাষা তার হাতে একটা সিঁদকাটি। ওই সিঁদকাটিটার দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
প্রতিবেদন- সৈকত মজুমদার
Post a Comment