রাজাপুরের তুলসীবেড়িয়া গ্রাম থেকে 'কড়ি কাইট্টা কচ্ছপ' উদ্ধার হল হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের উদ্যোগে
বাড়িতে অ্যাকোরিয়াম অনেকেই রাখেন এবং সুন্দর সুন্দর মাছ এবং কচ্ছপ এসব তো অনেকেই রাখেন। অ্যাকোরিয়াম রাখার ক্ষেত্রে এই সব মাছের দোকান থেকে অনেকেই রঙিন মাছ নিয়ে আসে। এইসব দোকানে মাছ কোথা থেকে আসছে সেই সম্পর্কে ক্রেতা জানতেও পারেনা। প্রায় ১৮০০ রকম প্রজাতির মাছ এভাবে আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যবসা হয়ে থাকে যদিও তা বেআইনি কারণ এইসব রঙিন মাছের মধ্যে বেশিরভাগ প্রাণী লুপ্তপ্রায়। বিভিন্ন রকমের কোরাল ও কচ্ছপও এভাবে বেআইনি ব্যবসার সাথে যুক্ত ফলে এইসব প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে।
গবেষকদের মতে মাছের ২২ টি প্রজাতি ভারতীয় অ্যাকোরিয়াম ব্যবসায়ীদের কারণে সংকটের মুখে। এই ব্যবসার কোনো নিয়ম পর্যন্ত নেই, যার ফলে এই সমস্ত প্রজাতি সংরক্ষণে পরিবেশবিদরা হিমসিম খাচ্ছেন।
এরকমই আই.ইউ.সি.এন বা ইন্টারন্যাশানাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অফ ন্যাচার এর লাল তালিকায় থাকা এরকমই দুটি কচ্ছপ উদ্ধার করলো হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ। যে কচ্ছপটি উদ্ধার হয় তার বৈজ্ঞানিক নাম Pangshura tecta. বাংলাদেশে এই কচ্ছপ 'কড়ি কাইট্টা কচ্ছপ' নামে পরিচিত। দক্ষিণ এশিয়ার নদী-নালা তে এই ধরণের কচ্ছপের দেখা মেলে। এই কচ্ছপ দেখতে বেশ সুন্দর হয়। কচ্ছপের পেটের নীচটা রঙিন হয় যার ফলে অ্যাকোরিয়ামে রাখার ক্ষেত্রে এই কচ্ছপের বেশ চাহিদা আছে যদিও তা বেআইনি। গত বৃহস্পতিবার এরকম দুটি পুরুষ শিশু কচ্ছপের খবর পায় হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমা এলাকার রাজাপুর থানার তুলসীবেড়িয়া গ্রাম থেকে।
পরিবেশ মঞ্চের কোষাধ্যক্ষ সায়ন দে খবর পান যে তাদের সাথী সংগঠন খড়দহ নিউ এজ সোসাইটির সদস্য তুলসীবেড়িয়া নিবাসী সুরঞ্জন ঘোষ দুটি 'কড়ি কাইট্টা কচ্ছপ' পেয়েছে কুলগাছিয়ার এক বন্ধুর অ্যাকোরিয়াম থেকে। সেটি সে তার কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের হাতে তুলে দিতে চায়।
খবর পেয়ে এদিন সুরঞ্জনের বাড়ি থেকে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সম্পাদক শুভ্রদীপ ঘোষ, বিশিষ্ট জীববৈচিত্র্য গবেষক সৌরভ দোয়ারী, পরিবেশকর্মী প্রদীপ রঞ্জন রীত ও সায়ন দে এই কচ্ছপ দুটি উদ্ধার করেন। ভালো করে পরীক্ষা করে সৌরভ বাবু জানান যে হাওড়া জেলায় পাওয়া যায় এমন কোনো প্রজাতির কচ্ছপ নয় এই কচ্ছপ দুটো।
কচ্ছপ দুটি সুরঞ্জনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তা প্রকৃতিপ্রেমী ও সংরক্ষণবিদ অনির্বাণ চৌধুরীর পরামর্শে প্রদীপ রঞ্জন রীত মহাশয়ের বাড়িতে বিশেষ যত্ন সহকারে রাখা হয় এবং বনদপ্তরকে খবর দেওয়া হয়। ঠিক তার পরদিনই বনদপ্তরের কর্মীরা এসে এই কচ্ছপ দুটি নিয়ে যান এবং শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের সংরক্ষিত জলাশয়ে এদের নিরাপদে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ধরণের জীব অ্যাকোরিয়ামে রাখার খবর পেলে আবারও তা এভাবে সংগ্রহ করা হবে এমনটাই জানিয়েছেন হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের পক্ষ থেকে। পরিবেশ রক্ষায় বাঘরোল, ঘড়িয়াল এরকম বহু প্রাণীর সংরক্ষণে বারবারই দৌড়ে এসেছেন হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সদস্যরা। এ নিয়ে বারবার বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠনকে নিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা প্রায়ই দেখা যায় এই সংগঠনের সদস্যদের। এভাবে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায়। লিটারেসি প্যারাডাইস এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায়।
প্রতিবেদন-অমিত দে
Post a Comment