ধ্বংসের মুখে হাওড়ার জরি শিল্প, কাজ হারাবে ৫০০০০ জরি শিল্পী
বাংলার প্রায় হারিয়ে যেতে বসা একটি শিল্প হলো জরি শিল্প। এই শিল্পের অন্যতম পীঠস্থান হলো হাওড়ার পাঁচলা। গোটা বিশ্ব জুড়ে যার সুনাম রয়েছে। কেবল পাঁচলায় নয়, আমতা এক ও দুই, উদয়নারায়ণপুর ও সাঁকরাইল ব্লকের প্রায় সব গ্রামের বহু মানুষ যুক্ত আছেন জরি শিল্পের সাথে। ২০১৬ সালে নোটবন্দী ও জিএসটির ধাক্কায় জরি শিল্পীদের রোজগার ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।
জিএসটি চালু হওয়ার ঠিক চার বছর আগে ২০১২ সালে জরি শিল্পীদের জন্য রাজ্য সরকারের সহায়তায় জরি হাব গড়ে উঠলেও অর্থনৈতিক কারণে কোনো জরি শিল্পী সেখানে কাজ করার সুযোগ পাননি। তাই অনেকে বাড়িতে ও ছোটো ছোটো কারখানায় কাজ করতে থাকেন। প্রায় ৫০০০০ হাজারেরও বেশি মানুষ ২০১৬ সালে জরি শিল্পের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছিলেন।
জিএসটি ও নোটবন্দীর ধাক্কা ২০১৯ সালে অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিল তারা কিন্তু ২০২০ সালে মারণ ভাইরাসের কবলে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই হাওড়ার জরি শিল্পীদের কপালে নেমে এসেছে সর্বনাশের কালো ছায়া। পাইকারি ও বড়ো ব্যবসায়ী কারো দেখা নেই জরি আমদানি করার জন্য। প্রায় ছয় মাস তাদের হাতে কোনো কাজ নেই। আগামী ছয় মাসেও হয়তো তাদের কোনো কাজ আসবে না বলে মনে করছেন জরি শিল্পীরা।
লকডাউন শুরু হওয়ার পর রাজ্য প্রশাসন ও ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশাসনের তরফে অসংগঠিত শ্রমিকদের কিছুটা অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়। এতে করে জরি শিল্পীদের অবস্থার মোটামুটি উন্নতি হলেও ধীরে ধীরে রোজগারের সমস্ত রাস্তা তাদের বন্ধ হয়ে পড়ছে। তারা কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না কীভাবে অন্য উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করবেন।
এই মুহূর্তে যদি গোটা রাজ্য করোনামুক্ত হয়ে যায় তারপরও স্বাভাবিক অবস্থায় নাও ফিরতে পারে জরি শিল্প। প্রশাসন জরিশিল্পকে বাঁচানোর উদ্যোগ না নিলে আর কোনোমতেই জরি শিল্পকে বাঁচানো যাবে না। জরি শিল্প ধ্বংস হলে ৫০০০০ মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এমনকি দুর্ভিক্ষ পর্যন্ত দেখা দিতে পারে তাদের মধ্যে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলো জরি শিল্পকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন চালাচ্ছে। তার ফলাফল কতটা সূদুরপ্রসারী হবে তা সময়ই বলে দেবে।
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক
Post a Comment