বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার উদ্যোগে বিশ্বস্বাস্থ্যের জার্নাল 'ল্যান্সেট' এ ২০০ বছরে প্রথমবার যুক্ত হলো বাংলা ভাষা
বর্তমান প্রজন্ম বাংলা ভাষা নিয়ে কিছু অবিস্মরণীয় করে চলেছে। দুই বাংলার বাঙালিরা বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এবার বাংলা ভাষার প্রসারের জন্য উদ্যোগ নিলেন ডঃ সেঁজুতি সাহা। যাকে এখন গোটা বিশ্বের মানুষ এক নামে চেনেন। বিল গেটস তার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। গুগুলে সেঁজুতি সাহা লিখে টাইপ করলে উইকিপিডিয়াতেও পাওয়া যাচ্ছে তাঁর নাম। অল্প বয়সেই অধিকতর সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।
সেঁজুতি সাহা হলেন একজন বাঙালি অণুজীব বিজ্ঞানী। তিনি একইসঙ্গে আণবিক জিনতত্ত্বেরও একজন গবেষক। তিনি বাংলাদেশের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনে কর্মরত। তাঁর বাবা সমীর সাহাও একজন প্রখ্যাত অণুজীব বিজ্ঞানী। তাঁর ছোট ভাইও একজন অণুজীব বিজ্ঞানী। তিনি তাঁর বাবা সমীর সাহার সাথে যৌথভাবে গবেষণা করে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে শিশুমৃত্যুর ব্যবধান কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ এমনকি বাবা ও মেয়ে যৌথভাবে বাংলাদেশে প্রথমবার করোনার জিন নকশা উন্মোচন করেন। এরপর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একজন পোলিও পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন তিনি।
বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানী ডঃ সেঁজুতি সাহার প্রচেষ্টাতে 'ল্যান্সেট' সাময়িকীতে যুক্ত হলো বাংলা ভাষা। গ্লোবাল হেলথের অন্যতম জার্নাল হলো 'ল্যান্সেট'। ডঃ সেঁজুতি সাহার মতে "আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের প্রতিষ্ঠান-উদ্ভুত ইংরেজি গবেষণা পত্রগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করে প্রতিষ্ঠানের সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।"
সেঁজুতি সাহার প্রতিষ্ঠানের অণুজীব বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ১০০ জনকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। যে সমীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে তাদের প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৬৬ শতাংশ মানুষ ২০১৮ থেকে প্রকাশিত হওয়া কোনো গবেষণাপত্র তাঁরা পড়েননি। মাত্র পাঁচ শতাংশ মানুষ পড়েছেন গবেষণাপত্রগুলো। কেবল ইংরেজিতে গবেষণাপত্র প্রকাশ হওয়ার জন্য ৬৯ শতাংশ কর্মী গবেষণাপত্র পড়েননি৷
সেঁজুতি সাহার প্রতিষ্ঠান স্পষ্ট বুঝতে পারে যে বাংলাতে গবেষণাপত্র প্রকাশ করলে হয়তো তাঁরা আগ্রহ সহকারে সেই গবেষণাপত্র পড়বেন। তিনি ও তাঁর বাবা সমীর সাহার তত্ত্বাবধানে সেপ্টেম্বরে বাংলাতে একটি সাক্ষাৎকার ই-লাইফ সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়। এই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানের প্রায় সকল বাঙালি কর্মীই আগ্রহ সহকারে সাক্ষাৎকারটি পড়েছেন। এ থেকেই বিজ্ঞান গবেষণাতে মাতৃভাষার গুরুত্ব তিনি বুঝতে পারেন৷ তাই 'ল্যান্সেট' সাময়িকীতে এবার থেকে ইংরেজি গবেষণা পত্রগুলো বাংলাতে প্রকাশিত হবে। ইতিমধ্যেই উক্ত সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে একটি বাংলা প্রবন্ধও।
পৃথিবীর অন্যতম চিকিৎসা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক জার্নাল হলো 'ল্যান্সেট'। যে জার্নালটি প্রতিষ্ঠা করেন থমাস ওয়াকলে ১৮২৩ সালে। দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এই জার্নাল। শিশু ও কিশোর স্বাস্থ্য, ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রিনোলজি, ডিজিটাল হেলথ, গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজি এন্ড হেপাটোলজি, হেমাটোলজি, এইচআইভি, সংক্রমণজনিত রোগ, স্নায়ুবিজ্ঞান, ক্যানসার চিকিৎসা, প্ল্যানেটারি হেলথ, পাবলিক হেলথ, মনোরোগ, রেসপিরেটরি মেডিসিন, বায়োমেডিসিন এবং ক্লিনিক্যাল মেডিসিন নিয়ে কাজ করে থাকে এই জার্নাল। স্বভাবতই 'ল্যান্সেট' জার্নালে বাংলাতে প্রবন্ধ প্রকাশ হওয়ার ব্যাপারটি বাঙালির কাছে বেশ গর্বের।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment