Header Ads

বেকারত্ব ও আর্থিক অনটনের আঘাতে আত্মঘাতী বাংলার আন্তর্জাতিক জুডো জয়ী


বাংলা ছবি 'চ্যাম্প' এর সেই দৃশ্যটা কী আপনাদের মনে পড়ে? একজন তুখড় বক্সার একটি বক্সিং ম্যাচে গুরুতর জখম হয়। ভেঙ্গে যায় তার পাঁজরা। ডাক্তার বলে দেয় সে আর কোনোদিনই খেলতে পারবে না। এমন অবস্থায় তার পাশে এসে দাঁড়ানোর কেউ রইলো না। চিকিৎসার জন্য তার জলের মতো বেরিয়ে গেল সমস্ত টাকা। এরপর সংসার চালানোর জন্য ঐ বক্সারকে বিক্রি করতে হলো সমস্ত মেডেল। যদিও ছবির গল্পটি ছিল সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তবে এই দৃশ্যের সাথে বাস্তবেরও অনেকে মিল আছে। লকডাউন পরিস্থিতিতে কত কত শিল্পী, খেলোয়াড়দের কেরিয়ার কীভাবে নষ্ট হয়েছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। 


করোনা আসার আগে থেকেই দেশের বেকারত্ব পৌঁছে গেছে চরম সীমাতে। করোনার পর সংখ্যাটা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে মেধাবী ছাত্ররা পড়াশুনা করার পরও তাদের চাকরির কোনো ভবিষ্যৎ নেই৷ দিনরাত পরিশ্রম করে বহু ছেলেমেয়ে ইন্টারভিউতে বসছে তবুও চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তাদের। চাকরি না পাওয়ার জন্য পাড়ার লোকেদের সেই ছেলেটি বা মেয়েটির প্রতি অবহেলা বাড়ছে। আত্মীয়স্বজনরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। বাড়িতে টিকে থাকার জোঁ নেই তাদের। পদে পদে অবসাদ ও অস্বস্তি কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের। 

চোখের আড়ালে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ। অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামে টিকে থাকা অনেক ছাত্র-ছাত্রীর কাছে জটিল হয়ে পড়ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের নিদারুণ অবস্থা দেখেও নিশ্চুপ ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশাসন। করোনার আবহে বেকারত্বের জ্বালা ও চরম অর্থাভাবের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে হাজার হাজার বেকার ছেলেমেয়েকে৷ 

বাংলার শিলিগুড়ির বাঙালি ছেলে পরিমল সিংহকে আপনাদের কী মনে পড়ছে? চোখে তার ছিল মায়াবী স্বপ্ন৷ বিশ্ববিখ্যাত জুডো খেলোয়াড় হওয়ার পথে এগোচ্ছিল সে। ম্যাচের পর ম্যাচ প্রতিপক্ষের কাছে দেওয়ালের মতো নিজেকে আবদ্ধ রেখে বাংলা তথা দেশের গর্ব হয়ে ওঠে সে। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও নেপালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জুডো প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা গেছে পরিমল সিংহকে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে জয়ী হয় সে বহুবার। ভারতের অন্যতম জুডো ও ক্যারাটে খেলোয়াড় হিসেবে সে ক্রমশ পরিচিত লাভ করেছিল। 

আজ চোখের সামনে শুধু তার ধোঁয়াশা। বেকারত্বের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে দিন কাটছিল তার। মানসিক অবসাদে কয়েকদিন ধরে ভুগতে দেখা গেছে তাকে। ছেলেটি ছিল জন্ম থেকেই বধির। খুব ছোটোবেলাতেই সে তার বাবাকে হারায়। তার বাবার অকালমৃত্যু তাকে অস্থির করে তোলে। খেলাধূলোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও উপায় খুঁজতে হতো তাকে। 

খেলাধূলো করে রাজ্যস্তর থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে অলিম্পিকে যাওয়ার রাস্তা পাকা করে নিয়েছিল পরিমল। লকডাউনের সময় বহুবার এদিক-ওদিক কাজের আশাতে ছুটতে হয়েছে তাকে। কিন্তু কাজ কোথাও মেলে না তার। অবশেষে আর্থিক অনটন ও বেকরত্বের যন্ত্রণা সহ্য করতে না করে জীবনযুদ্ধে হার মানতে হলো তাকে। গত ১৮ ই সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তার ঝুলন্ত দেহ। আন্তর্জাতিক জুডো চ্যাম্পিয়ন হয়েও আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো সে। 

পরিমল সিংহের বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার দুঃখের সময় কোনো রাজনৈতিক দলকে তার পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। তার মৃত্যুর খবরও ঘটা করে টিভিতে দেখানো হয়নি। এভাবেই  নিরব অভিমানে একাকী বিদায় নিতে হলো পরিমলকে।

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments