এক অনাবিষ্কৃত পাহাড়ের সন্ধান দিলেন অ্যাডভেঞ্চারার অনিন্দ্য মুখার্জী 'গঙ্গা থেকে চিনশা' বইটির মাধ্যমে
চিনের ইউনান প্রদেশে এক অজানা পাহাড়ের খোঁজ এবং শেষ পর্যন্ত সেই পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছানোর জার্নি নিয়ে একটি নতুন বই হলো 'গঙ্গা থেকে চিনশা'। যে বইটির লেখক প্রখ্যাত অ্যাডভেঞ্চারার অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়। এই বই কোনো কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে নয়। অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের নিজের একটি অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন এই বইতে। বিভিন্ন জানা-অজানা বিষয় সাহিত্যের ভাষায় সুন্দর করে তুলে ধরেছেন তিনি। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, ভ্রমণপিপাসু, ভবঘুরে ও বইপাগল বাঙালিদের জন্য এক দূর্দান্ত আকর্ষণীয় বই হলো 'গঙ্গা থেকে চিনশা।'
ভাবছিলাম বেলুড় মঠের গঙ্গার ধারের ছেলেটা আজ দাঁড়িয়ে আছে চিনশা নদীর দ্বিতীয় বাঁকে এক অনাবিষ্কৃত পাহাড়ের চূড়োয়। তার পূর্ব দিক জুড়ে শুয়ে থাকা পাহাড়গুলো সিচুয়ান প্রদেশের। আর উত্তর পশ্চিম জুড়ে তিব্বত সীমান্তের তেছেন অঞ্চলের কাওয়া কার্পো রেঞ্জ। সিচুয়ান আর কাওয়া কার্পো অঞ্চলের মাঝখানে উঁকি দিচ্ছে রহস্যময় পাহাড় মিশিয়া কোঙ্কা। পশ্চিমে একের পর এক পাহাড়ের শ্রেণী যার ওপারে মিয়ানমার। দক্ষিণে হাপা এবং ইউলং পাহাড় যার পায়ের তলায় মাত্র কয়েক শতাব্দী আগেও ছিল এক প্রাচীন সাম্রাজ্য। অনেক দূরের এক রাজ্য সুজলা সুফলা বাংলার সঙ্গে যার ছিল নিয়মিত যোগাযোগ।
এভাবে নৈসর্গিক বর্ণনার মাধ্যমে এক অনাবিষ্কৃত পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছানোর অ্যাডভেঞ্চারের কথা বইয়ের পাতায় তুলে ধরেছেন অনিন্দ্য বাবু। বইটি এক নিঃশ্বাসে পাতা উল্টে সহজে পড়ে ফেলা যায়। বইতে রয়েছে অসংখ্য ছবিদের সমাহার। বইটি পড়তে গিয়ে যখন পাতা ওল্টাবেন তখন দেখতে পাবেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ছবির দেখা মিলছে। যে ছবিগুলো বই পড়ার স্বাদ দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রাখে। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের কাছে অজানা বিষয় জেনে ফেলার খিদেটা অনেক বেশি, তাদের জন্য এক ও অদ্বিতীয় বই হলো 'গঙ্গা থেকে চিনশা।'
পাহাড়-পর্বতকে জানতে কার না ভালো লাগে। কমবেশি পাহাড় সকলেই ভালোবাসেন। পাহাড়-পর্বত একাকীত্ব অনুভব করার আদর্শ জায়গা। পাহাড়-পর্বতকে নিয়ে কত কবি কত কাব্য, কত লেখক ও ঔপন্যাসিক কত গল্প ও কত উপন্যাসের ডালি সাজিয়ে পাহাড়-পর্বতের প্রতি টান প্রভূত হারে বাড়িয়ে দেয়। অ্যাডভেঞ্চারের নেশাও অনেক মানুষকে তাড়া করে বেড়ায়।
অ্যাডভেঞ্চারার অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় অ্যাডভেঞ্চারের নেশাতে বুঁদ হয়ে গঙ্গা থেকে চিনশাতে যেভাবে ছুটে গিয়ে অজানা এক পাহাড়ের পাদদেশে ছুটে গেলেন, সেইসব অভিজ্ঞতা যখন আপনি বইয়ের পাতাতে পড়বেন তখন আপনার মনে হবে যেন চোখের সামনে আপনি সবকিছু দেখতে পাচ্ছেন। বইয়ের শুরু থেকে শেষ সবটা জুড়ে একটা অস্থির উত্তেজনা কাজ করবে। বইটি পড়ার রেশও বহুদিন থেকে যেতে পারে আপনার মনের গহ্বরে।
বইটির প্রসঙ্গে অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় বলেন "ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ক্লাইম্বিং বা ট্রেকিং, তা সে বিশ্বের যে পর্বতমালাই হোক না কেন, ক্ষেত্র বিশেষে ব্যাকরণ একটুআধটু বদলালেও ব্যাপারটা মূলত 'ইন এসেন্স' একই৷ তাই, পাহাড়ে 'ওঠার' বা 'চড়ার' ব্যাপারটা এই বইতে সচেতন ভাবেই আনুষঙ্গিক হিসেবে রাখা আছে।"
কোভিড নাইন্টিন ও লকডাউন পরিস্থিতির শিকার হিসেবে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন। বহু মানুষ বুঝতে পারছেন না সঠিক ভাবে জীবনধারণের উপায়৷ এমন পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে ভেঙ্গে না পড়ে অনিন্দ্য বাবু বই বিক্রি করে স্বাবলম্বী থাকার প্রচেষ্টা হিসেবে পিডিএফ সংস্করণে এই বই লিখেছেন। চীনের এই অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে তাঁর লেখাকে বইয়ের রূপদান সম্ভব হয়েছে অভিজিৎ সুকুলের অমূল্য পরামর্শে। বইটিকে অপরূপ অলঙ্করণে সাজিয়েছেন সৌরভ নন্দী৷ বইটির বুকিং থেকে বন্টনে তাঁর হাত শক্ত করেছিলেন ইয়েতি অ্যাডভেঞ্চার্সের কিছু তরুণ-তরুণীরা।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment