Header Ads

গঙ্গাতে তলিয়ে যাওয়ার মুখে চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্রনাথের পাতালবাড়ি


চন্দননগরের ঐতিহ্য হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাতালবাড়ি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম প্রিয় বাড়ির মধ্যে ছিল এই বাড়ি। তিনি চন্দননগরের এক সভাতে বলেন " এই বাংলার নদী আমাকে আহ্বান করেছিল বিশ্বপথে। আমার চিত্তের যথার্থ উদ্বোধন হল সেইসময় বিশ্ব প্রকৃতির ভিতরে বিশ্বের সুরে সুর ঘটাবার উপলক্ষ্য পেলাম আমি তখন। যেমন কারাগারে যখন রাজবন্দীগণ বন্দী জীবনযাপন করে তখন তাদের সমস্ত চিত্ত থাকে অবরুদ্ধ, বেরুতে পারে না, তেমনি আমারও সেতার যন্ত্র ছিল, কিন্তু বিশ্বের সুরে তার সুর বাঁধার উপলক্ষ্য পাইনি। সেতার পড়ে ছিল তার বাঁধা হয়নি, সুর ধরা হয়নি। সেই মুক্তি পেয়েছিলাম আমি গঙ্গার তীরে।"     


বর্তমানে রবীন্দ্রনাথের পাতালবাড়ির একাংশ গঙ্গার ভাঙ্গনের ফলে ভেঙ্গে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথের পাতালবাড়ি কী তাহলে তলিয়ে যাবে? চন্দননগরবাসীদের মুখে এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। দীর্ঘ ছয় বছর পর তাদের মধ্যে পাতালবাড়ি ভেঙ্গে পড়ার সেই আতঙ্ক আবারো ফিরে এলো। ২০১৩ সালের জুন মাসে গঙ্গার ভাঙ্গনের কারণে শহরের হাটখোলা-নোনাটোলা এলাকার দুটি আবাসন ও কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুর কর্তৃপক্ষ ও সেচ দফতর ২০১৯ সালে তদন্তে নেমে দেখতে পায় উত্তর ২৪ পরগণার দিক থেকে গঙ্গায় বেআইনি ভাবে বালি তোলার ফলে এই বিপর্যয়। ভাঙ্গন রোধে কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়েছিল বালি তোলা। শহরের গঙ্গা তীরের বাসিন্দারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন।           

২০১৯ এ প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিলেও ২০২০ তে হঠাৎ করেই আতঙ্ক ছড়ালো চন্দননগর এলাকাতে। গঙ্গার গ্রাসে রবীন্দ্রনাথের পাতালবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবলভাবে মাথা চাড়া দিচ্ছে। শুধু রবীন্দ্রনাথের পাতালবাড়িই নয়, ইতিহাসপ্রসিদ্ধ সাবেক ফরাসডাঙ্গার কয়েকশো মিটার এলাকাও তলিয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।      

প্রশাসনের চাপে অবাধে বালি তোলা বন্ধ হলেও এক বছর গড়াতে না গড়াতেই আবারো বালি তোলা শুরু হয়েছে। ফের ভয়াবহ ভাবে ধসে পড়ছে গঙ্গার পাড়। ইতিমধ্যেই পাতালবাড়ির পাঁচিলের একাংশ জলের নীচে তলিয়ে গেছে। গঙ্গার পাড়ে ৫৬ টি পরিবার বিপদের সম্মুখীন। নিদারুণ আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। গঙ্গার ভাঙ্গন রোধে গঙ্গার পাড়ে নতুন উঁচু পাকা দেওয়াল বসানো হয়েছিল। চলতি বছরে প্রচণ্ড টানা বর্ষণে গঙ্গার পাড়ে ধস নেমে দেওয়ালগুলো সব জলের নীচে তলিয়ে যায়।          
  
সঠিক ব্যবস্থা না নিলে পাতালবাড়ির তলিয়ে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। গঙ্গার পাড়ে ভাঙ্গন হওয়ার পরিমিত কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। নির্দিষ্ট প্ল্যানমাফিক পাড় বাঁধাতে হবে। ভেঙ্গে যাওয়া দেওয়ালগুলো পুনরায় সংস্কার করতে হবে। জেলাশাসকের মতে "পাতালবাড়ি বাঙালির ঐতিহ্য। প্রাচীন এই ঐতিহ্য বিলুপ্ত হওয়া থেকে আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। দ্রুত সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করবো আমরা।" জেলাশাসক আশ্বাস দিলেও যতক্ষণ না পর্যন্ত নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে সংস্কারের ব্যবস্থা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত স্বস্তি থাকছে না কারোর। 

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments