পোড়ামাটির নির্মাণশৈলীতে দাবা বানিয়ে চমকে দিলেন পাঁচমুড়ার এক পরিবার
বাঁকুড়া জেলাকে বলা হয় 'পোড়ামাটির দেশ'। এখানকার পোড়ামাটির শিল্প জগদ্বিখ্যাত। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে বহু পোড়ামাটির নিদর্শনও রয়েছে। পোড়ামাটির তৈরি শিল্পকর্মকে টেরাকোটা বলা হয়। কাদা দিয়ে একটি অবয়ব তৈরি করে সেটাকে রৌদ্রে শুকনো করা হয়। তারপর আগুনে পুড়িয়ে মজবুত করা হয়। বিভিন্ন সাংসারিক উপকরণ মূলত গৃহাদি অলঙ্করণ এবং শৈল্পিক প্রদর্শনের জন্য টেরাকোটা তৈরি করা হয়।
এই বাঁকুড়া জেলার পাঁচমুড়া গ্রামের অধিবাসী শিবু কুম্ভকার বানাচ্ছেন পোড়ামাটির দাবা। যারা দাবা খেলতে পছন্দ করেন তাদের জন্য অসাধারণ একটি দাবার সেট হলো পোড়ামাটির দাবা৷ যা দেখলে মনেই হবেনা যে ওটা পোড়ামাটি দিয়ে বানানো। পোড়ামাটির রঙে যেন অন্য রূপ পেয়েছে এই দাবার সেটটি। শিল্পীর নিপুণ হাতে গড়া নিখুঁত শিল্পকর্ম হলো পোড়ামাটির দাবা বানানো।
বাঁকুড়ার নানা প্রান্তে পোড়ামাটির তৈরি শিল্পকর্মে বিখ্যাত ছিল কেবল পোড়ামাটির তৈরি হাতি-ঘোড়া। কিন্তু এই চেনা শিল্প থেকে বেরিয়ে এসেছেন মৃৎশিল্পী শিবু কুম্ভকার। তিনি চান নিত্যনতুন শিল্পকর্মের মাধ্যমে পোড়ামাটির শিল্পকে আরো বেশি উৎকৃষ্ট করে তুলতে। তিনি সেই কাজ সফলভাবে সম্পন্নও করে চলেছেন।
পোড়ামাটির দাবা সেট বানানোর কৌশলটাও বেশ জমপেশ। সবার প্রথমে যে কাজটি করা হয় তা হলো দাবার বোর্ড তৈরি। একটি চারকোণা প্লাইবোর্ডের ওপর মাটি ফেলে বোর্ডটির গঠন স্কেচ করা হয়৷ তারপর সেটাকে কেটে পোড়ামাটির রঙে রাঙিয়ে বোর্ড তৈরির কাজটি সেরে ফেলা হয়। এরপর বাকী থাকে দাবার ঘুঁটির কাজ। মাটি পাকিয়ে কেটে কেটে দাবার ঘুঁটি যেমন হাতি, ঘোড়া, মন্ত্রী প্রভৃতির গঠনের কাজ সম্পূর্ণ করা হয়। সবশেষে ঘুঁটিটিকে আগুন পুড়িয়ে পেইন্টিং করে সম্পূর্ণ সেট প্রস্তুত করা হয়।
পোড়ামাটির দাবা বানানোর কাজটি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। দিনরাত এক করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্ট করে এটি বানিয়ে থাকেন শিবু কুম্ভকার ও তার পরিবার। এক একটি দাবার সেটের দাম নেওয়া হয় দুই হাজার টাকা। রাজ্যের যে-কোনো জায়গা থেকে অর্ডার দিলে তারা ক্যুরিয়ার মারফত প্রোডাক্টটি ডেলিভারি করে থাকেন। তাদের তৈরি এই বিশেষ শৈল্পিক বস্তুটির কলকাতা ও কলকাতার পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
মৃৎশিল্পী শিবু কুম্ভকারের ভাই তাপস কুম্ভকার পোড়ামাটির দাবা তৈরির কাজটির প্রসঙ্গে বলেন "পোড়ামাটির কাজের শিক্ষা আমি পেয়েছি আমার বাবার কাছ থেকে। আমার বাবা ছোটোবেলা থেকেই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। আর আমি প্রায় পনেরো বছর ধরে এ কাজ করছি। এখন আমার তিরিশ বছর বয়স। আমাদের এখানে বিখ্যাত বলতে পোড়ামাটির হাতি আর ঘোড়া। এবার শুধু এটাকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকলে তো হবে না। নিত্যনতুন জিনিসও তৈরি করতে হবে। এমনিতেই আমাদের মালপত্র বিভিন্ন জায়গায় যেমন কলকাতা ও কলকাতার বাইরে চাহিদা রয়েছে। তো আমি নতুন কিছু বানানোর চেষ্টা করতে লাগলাম৷ হঠাৎ করেই আমাদের একদিন একটা ভালো আইডিয়া এলো পোড়ামাটির দাবা বা ঐ জাতীয় কিছু বানালে কেমন হয়? এভাবেই পোড়ামাটির দাবা বানানোর কাজ আমরা শুরু করি। এখনও সেই কাজ আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। ভালো সাড়াও পাচ্ছি কাজটি শুরু করার পর থেকেই। প্রচুর ফোনও আসছে এটা বিক্রির জন্য।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment