আমতার ঢালমাখা যৌনপল্লীতে ত্রাণের ব্যবস্থা করলো হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ
সমাজে অবহেলিত শ্রেণি হলো যৌনকর্মীরা। যাদের পেশা হলো বেশ্যাবৃত্তি। তারা তো এটা পেশা করতে চাইনি। আমাদের সমাজ, দুষ্ট মানুষদের অত্যাচারে ও পেটের জ্বালায় তাদের বেশ্যাবৃত্তিকে বেছে নিতে হয়। দোষটা তাদের নয়। তারা নিজেদের জীবনের মায়া ভুলে ধর্ষণ, ইভটিজিং, নারীদের ওপর অত্যাচারের হাত থেকে সমাজকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে। তবুও সমাজ এদেরকে মেনে নেয়নি।
করোনা ও আমফানের পরবর্তী পরিস্থিতিতে ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ছে তাদের বেঁচে থাকাটা। দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে তারা দুর্বল হয়ে পড়ছে। কেউ কারও সাথে কথা বলছে না। খাদ্য ও অর্থ সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারা। আমরা দেখেছি যারা যৌনপল্লীতে কাজ করেন তারা সকলেই মাইগ্রেটেড। তাদের না আছে স্থায়ী বাসস্থান, না আছে রেশন কার্ড, না আছে ভোটার কার্ড, না আছে নাগরিকত্ব। সমাজের সবরকম সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে বর্তমানে তারা সুন্দর ভাবে বাঁচার স্বপ্ন থেকে বিরত। এমন অবস্থায় তার পাশে কী কেউ নেই? সত্যিই ভাববার বিষয়। সমাজকে মনে রাখতে হবে তারাও রক্ত-মাংসের মানুষ। তাদের কোনো বিপদ হলে মানুষকেই পাশে দাঁড়াতে হবে।
গত ১৪ ই জুন আমতা এক নম্বর ব্লকের ঢালমাথা যৌনপল্লী এলাকার প্রায় কুড়ি জন যৌনকর্মীকে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ও স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদান করা হয়। হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের তরফ থেকে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। যৌনকর্মী বাদেও পুরো হাওড়া জেলা জুড়ে আর্তপীড়িতদের সাহায্য করতে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ একটি প্রকল্প তৈরি করেছে। যার নাম রাখা হয়েছে 'বাড়িয়ে দাও তোমার হাত প্রকল্প'। ঢালমাথা যৌনপল্লীতে কুড়ি জন যৌনকর্মীকে ত্রাণ প্রদান ছাড়াও আয়োজন করা হয়েছিল একটি ছোট স্বাস্থ্য শিবিরেরও৷ যৌনকর্মীদের মন মানসিক ভাবে চাঙ্গা করতে 'আমতা পরিচয়' নাট্যদলের সহযোগিতায় তাদের কাউন্সিলিং করা হয়েছে। এই নাট্যদলের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে তাদের মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটানোর জন্য থিয়েটার থেরাপি করা হবে।
হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সম্পাদক শুভ্রদীপ ঘোষ, হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের কোষাধ্যক্ষ সায়ন দে, প্রিয়া দাস ও সৌভিক ঘোষের মতো পরিবেশপ্রেমী, বিশিষ্ট সমাজকর্মী কল্যানী পালুই, ডাঃ বিপ্লব মল্লিক, নাট্যকর্মী শুভেন্দু ভাণ্ডারীর মতো অভিজ্ঞ সমাজকর্মীরা পৌঁছে গিয়েছিল আমতার যৌনপল্লীতে। হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ ওখানকার যৌনকর্মীদের অবস্থার কথা জানতে পেরে তাদের জন্য চাল, ডাল, তেল, সোয়াবিন, বিস্কুট ও স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে নিয়ে আসে। প্রথম পর্যায়ে ২০ জনের হাতে তুলে দেওয়া হলো এই বিশেষ ত্রাণ এবং পরবর্তী পর্যায়ে আরো ২৫ জনকে সহায়তা করবে তারা৷
শিক্ষক সায়ন দে ঠিক করেছেন যৌনকর্মীদের শিশুরা যাতে সাফল্যের সাথে পড়াশোনা করতে পারে তার জন্য এই শিশুগুলোর ওপর নজরদারী চালাবেন। যদি কখনো প্রয়োজন পড়ে তাহলে ঐ শিশুগুলোকে ভর্তি করার ও পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবে হাওড়া যৌথ পরিবেশ মঞ্চ। এদিন ওদের হাতে কিছু বইখাতাও দেওয়া হয়৷
গ্রামীণ চিকিৎসক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক আমতার বাসিন্দা ডাক্তার ও বাচিক শিল্পী বিপ্লব মল্লিক সকল যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর জানান "ওরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন এই পরিস্থিতিতে। মন খুলে কথা বলবার কেউ নেই ওদের সঙ্গে। অনেক কথাই যেন ওরা বলতে গিয়ে বলতে পারল না।"
নাট্যকর্মী শুভেন্দু ভাণ্ডারী জানান "এই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বেড়ে গেছে মানুষে মানুষে। ওদের মনের খবর আমরা রাখবো না তাই বলে? শীঘ্রই থিয়েটার থেরাপির মাধ্যমে ওদের মানসিক অবসাদ কাটানোর চেষ্টা করবো।"
সমগ্র কাজটি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছেন হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সম্পাদক শুভ্রদীপ ঘোষ। তিনি এদের ভবিষ্যত গঠন সম্পর্কেও রূপরেখা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন৷ আমতার স্থানীয় মানুষজন, বিডিও, থানার অফিসার ইনচার্জ সহ সকলেই এই মহৎ উদ্যোগে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সমগ্র উদ্যোগটিতে সহযোগিতা করেছিল আমতা ব্যবসায়ী সমিতি ও প্রয়াস নামক মঞ্চের সাথী সংগঠনগুলি।
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক
Post a Comment