Header Ads

'মেমসাহেব' কে ফেলে রেখে পৃথিবীকে বিদায় জানালেন সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য


"সোনায় যেমন একটু পানি মিশিয়ে না নিলে গহনা মজবুত হয়না। সেই রকম ভালোবাসার সঙ্গে একটু শ্রদ্ধা ভক্তি না মিশালে সে ভালোবাসাও দীর্ঘস্থায়ী হয় না।" সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য কথাটা প্রায়ই বলতেন৷ নাহলে কী আর দেড়শোর বেশি উপন্যাস আর অসংখ্য ছোটো গল্প লেখা যায়। দেড়শো উপন্যাস লেখা কী আর চাট্টিখানি কথা। কজনই বা পারেন দেড়শো উপন্যাস লিখতে৷ জনপ্রিয় লেখক বলতে যা বোঝায় আক্ষরিক অর্থে তিনি তাই-ই ছিলেন৷ 


তিনি কেবল সাহিত্যিকই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য সাংবাদিকও। তাঁর সাহিত্যচর্চার আড়ালে থেকে গেছে দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতার কথা। তিনি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, জওহরলাল নেহেরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধী, মোরারজি দেশাই এর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের স্নেহভাজন ছিলেন।  সাংবাদিকতার জন্য তিনি ছুটেছেন আসমুদ্র হিমালয় থেকে ভিয়েতনাম, সোভিয়েত ও ক্রোয়েশিয়াতে। হো-চি-মন, ত্রুশ্চেভ ও টিটোর মতো নেতাদের সফর তিনি প্রতিবেদন আকারে লিখেছিলেন।  

তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো মেমসাহেব, মিনিবাস, মাতাল, ইনকিলাব, ব্যাচেলার, ইমনকল্যাণ, ডিফেন্স কলোনী, প্রবেশ নিষেধ, কেরানী, ভায়া ডালহৌসি, হকার্স কর্নার, রাজধানী এক্সপ্রেস, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, ডার্লিং, ম্যাডাম, নাচনী, নিমন্ত্রণ, গোধুলিয়া, প্রিয়বরেষু, ইওর অনার, ককটেল, মোগল সরাই জংশন, ওয়ান আপ-টু ডাউন, অনুরোধের আসর, যৌবন নিকুঞ্জে, আকাশ ভরা সূর্য তারা, শেষ পরানির কড়ি, হরেকৃষ্ণ জুয়েলার্স এবং পথের শেষে। তাঁর মেমসাহেব উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৭২ সালে নির্মিত হয় মেমসাহেব নামে একটি বাংলা ছবি৷ যে ছবিটি পরিচালনা করেন পিনাকী মুখার্জী৷ যে ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার ও সূচিত্রা সেন৷ উপন্যাস, ছোটো গল্প ছাড়াও রিপোর্টার, ডিপ্লোম্যাট, বংশধর, পিকাডেলি সার্কাস, চিড়িয়াখানা, কয়েদী সহ অসংখ্য বইও লিখেছেন৷  

দুই বাংলাতেই তিনি সাহিত্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তাঁর রচিত বহুল পঠিত উপন্যাস হলো মেমসাহেব। ১৯৫০ সালে এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়৷ যে উপন্যাসের বয়স বর্তমানে সত্তর বছর। নিমাই ভট্টাচার্যের মতে মেমসাহেবের আলোচিত মেমসাহেব চরিত্রটি একেবারে কাল্পনিক ছিল। রিপোর্টার যেমন একটি বই তেমন মেমসাহেবও একটি বই৷ ভিন্ন পাঠকের ভিন্ন মত৷ এই একটি উপন্যাসই তাঁকে আকাশছোঁয়া সাফল্য এনে দিয়েছিল। 

প্রখ্যাত সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩১ সালের ১০ ই এপ্রিল অবিভক্ত পূর্ববঙ্গের মাগুরাতে৷ মাত্র তিন বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় একজন পেশাগত রিপোর্টার হিসেবে। পরবর্তী কালে তিনি সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন৷ দেশভাগের পর তিনি কলকাতার টালিগঞ্জের শাসমল রোডে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন৷ দিল্লিতে ২৫ বছর একটানা সাংবাদিকতা করেন। গত ২৫ শে এপ্রিল, বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টা ১০ মিনিটে নিজস্ব বাসভবনে প্রয়াত হলেন তিনি৷ দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁরই জেরে গতকাল বাংলা ছবির রোমান্টিক পর্বের মাইলফলক 'মেমসাহেব' কে একা ফেলে রেখে অমৃতলোকে পাড়ি দিলেন তিনি৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।  


তথ্যসূত্র- বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, প্রথম আলো

No comments