নারী তুমি অনন্যা ! অনিন্দিতা হাজরার কলমে বিশেষ প্রতিবেদন
নারী তুমি প্রকৃতি, অনন্যা। শুধু সমাজের পুরুষদের চোখে দুর্বল। কেন? পেশীর জোর কম বলে? কিন্তু মনন চিন্তাশক্তি, কিসের কম? আমরা আধুনিক সভ্য সমাজের নারী। কিন্তু তারপরও আমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। Dissertation Paper এ Viva র দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় শিক্ষকগণের সাথে একপ্রকার বাগ্বিতণ্ডা হয় এই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলার জন্যে। পুরুষসমাজ আজও উগ্র পুরুষতান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী ( Male Chauvinism). শিক্ষিত সমাজ হোক কিংবা বাড়ির পুরুষ সদস্য হোক, কলেজে পুরুষ বন্ধু হোক কিংবা অফিসে পাশের টেবিলে বসা পুরুষ কর্মী হোন, বাইরে উদারতা পূর্ণ ব্যবহার দেখালেও কোথায় একটা গিয়ে পুরুষকারে লাগে। বর্তমান সমাজব্যবস্থার বেশ কিছু উদাহরণ দেব যেখানে নারী এখনো পুরুষের হাতের পুতুল। সমাজের সেই আদি অনন্ত নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে। সে বিয়ের ব্যাপারে বা মাতৃত্ব, কিংবা জরায়ুর স্বাধীনতা। একটি মেয়ের সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও পরিবারের হস্তক্ষেপ। আমরা আধুনিকতার জয়গান গাইছি কিন্তু প্রকৃত আধুনিকতা কোথায়? উদারতা কোথায়? মেয়েদের সতীত্ব এই নিয়ে এক কথায় আমার এক বন্ধুর উক্তি "শহুরে মেয়েরা খারাপ।" আমি তার কথায় অবাক। ভাবলাম তথাকথিত শিক্ষিত ছেলে এইসব কি মনন।
ইংরেজি শিক্ষাতে শিক্ষিত, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করা পুরুষের এই মানসিকতা??????? নারীর সতীত্ব, Hymen membrane অক্ষত নিয়ে চর্চা করছে। এতো একটা উদাহরণ মাত্র। কোনো পুরুষের উক্তি "ডিভোর্সি মেয়েকে কেউ বিয়ে করে?" কলকাতায় বসবাসকারী এক যুবকের এই উক্তি। এরা সবাই তথাকথিত শিক্ষিত। সমস্যা গোড়াতেই। বাড়িতে মায়ের কাছে বা বাড়ির লোকের কাছে যা শুনেছে তাই প্রতিফলিত এদের মনে, কথায় বা আচরণে। বহুগামিতা পুরুষের চলে, মেয়েদের করলে কত রকম কথা। আমাদের সমাজ এমন যেখানে ঘরে বৌ সাজিয়ে রেখে বাইরে, অফিসে, সোশ্যাল মিডিয়াতে আরো একটা দুটো বাহারওয়ালী রাখা হয়। কিন্তু ঘরের টিকে ডিভোর্স দেওয়া হয়না শুধুমাত্র বাবা মা, পরিবারের দেখাশোনার জন্যে, রাত্রে এসে সহবাসের জন্যে আর বংশরক্ষার জন্যে।
এদেশে পুরুষ বিয়ে করে বংশরক্ষার জন্যে, মেয়েরা আহ্লাদিত হয়। মা হওয়ার আনন্দ!! স্বামীটিকে দেবতা ভাবে। আর বাইরের মহিলা সঙ্গীরা আছেই মনোরঞ্জনের জন্যে। ভারতীয় সমাজ সংস্কৃতি দেখায়, আভিজাত্য দেখায়। পশ্চিমের দেশে তাও ডিভোর্স দিয়ে যা হয় করে। এখানে তো Hypocrisy চলে। দু নৌকাতে পা দেওয়া চলে।
সনাতন বিবাহ আইনের Sec 7 এ সপ্তপদী বিবাহের অন্যতম আচার। সনাতন বিবাহে কন্যাদান দেখেছি বেশ রমরম করে হয়। হয় মেয়েটির পিতা বা পিতৃতুল্য কেউ এই সম্প্রদান ক্রিয়া পালন করেন। আচ্ছা মনে কখনো প্রশ্ন আসে না যে মেয়ে কি পণ্য বা সম্পত্তি যে দান করছি? মেয়ে একটা মানুষ তার আবার দান কি? কোনো ছেলে তো পুত্রদান বলে দান হয় না। দিনের পর দিন এইসব কুরুচিপূর্ণ কাজ করছি আর বলছি "নিয়ম"। নিয়ম বানিয়েছে মানুষ, নিয়ম ভাঙবে মানুষ। সেটা দেখি না। আমার এক বান্ধবী Registry marriage র পর ও সামাজিক বিবাহের জন্যে বসে আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো নিয়মেই প্রশ্রয় দি না। আমি বিধর্মী।
জরায়ুর স্বাধীনতা! আজও সব মহিলার নেই। আমার জরায়ু, আমার স্বাধীনতা নেই বাচ্চা নেবো কি নেবো না। আমি চাকুরিরতা কিংবা সমাজসেবিকা বা উচ্চপদে কর্মরতা, আমার স্বাধীনতা থাকবে। Surrogacy আছে। Adoption আছে। আমাদের কত শতাংশ মেয়ের নিজের ইচ্ছে, নিয়ম, স্বাধীনতা আছে? আমাদের দেশে কামাক্ষ্যা মন্দিরে কাপড় লাল রঙে ছোপাতে যায়, অথচ ঋতুমতী নারীকে অশুচি বলে, কোনো কোনো জায়গায় আবার অস্বাস্থ্যকর ঘরে চার পাঁচ দিন রাখা হয়। তাতে নারীর শরীর আরো অসুস্থ হয়ে শেষ হয়ে যায়। এগুলো সব আচরণের বৈপরীত্য।
আমরা আধুনিক বলে দাবি করি। সত্যি কি আধুনিক? তাহলে সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন করি কেন? ডিভোর্সি নিয়ে কত উৎসৌক্য?কেন? Menstrual Cycle হলে কেন খোলামেলা বলি না, I am menstruating.. কেন?? কন্যাদান করি কেন? সিন্দুর, শাঁখাপলা কেন? কিসের নিয়ম? মেয়েদের মানুষ ভাবা হোক, ধর্ষণ বন্ধ হোক, সেইদিন আধুনিক।
Post a Comment