দুঃসময়েও বইপোকাদের জন্য প্রকাশিত হলো বুক ফার্মের একঝাঁক বই
করোনার আবহে টিকে থাকাটা সকলের কাছেই চ্যালেঞ্জ ছিল, বিশেষ করে বইপাড়ার। লকডাউনে বইয়ের ব্যবসা মোটামুটি চলছিল। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পেইড ইবুক লঞ্চ করে প্রকাশকদের কিছুটা লক্ষ্মীলাভ হলেও আমফান সাইক্লোনের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বইপাড়া। বৃষ্টির জলে ভেসে যায় লাখ লাখ বই। বহু দোকান ভেঙ্গে পড়ে ঝড়ে। যেন বইপাড়ার মেরুদণ্ড ঝরে যায়।
গত মার্চ মাসে যখন সারা দেশ করোনা অতিমারীতে পুরোপুরি বিভ্রান্ত তখন বুক ফার্ম নিজেদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা থেকে এতটুকু না সরে কাজ শুরু করে দেয়। বইপাড়াতে কান পাতলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাঁটাই, মাসিক ব্যয় কমানোর সংবাদ ভেসে আসছে। বড় বড় প্রকাশনীর হাউসগুলোও নিজেদের ব্যয় কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে না কীভাবে নতুন বই প্রকাশ করবে। বড় বড় প্রকাশনী হাউসগুলো এই মুহূর্তে নতুন বই মার্কেটে লঞ্চ করতে ভয় পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বহু সম্পাদক, প্রুফচেকার ও কম্পোজাররা কাজ হারিয়েছেন৷ অনেক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বড় বড় প্রকাশনী যখন নিজেদের কাজ কমিয়ে বাজার স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে ব্যতিক্রম বুক ফার্ম। কারণ বুক ফার্ম এই দিশেহারা সময়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাজের পরিমাণ না কমিয়ে বরং কাজ বৃদ্ধি করতে হবে। কোনো সহকর্মীকে ছাঁটাই করা যাবে না। সকল সহকর্মীদের কাছে মাসের প্রথমেই স্যালারি পৌঁছে দিতে হবে।গত বইমেলাতে বুকফার্মের বই যেভাবে নজর কেড়েছিল পাঠকমহলে। সে কথা মাথায় রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বুক ফার্ম। বইমেলাতে পাঠকমহলে তাদের বই সমাদৃত হওয়াটা সম্ভব হয়েছিল সহকর্মীদের হাড়-খাঁটুনিতে। তাই সহকর্মীদের প্রতিকূল পরিস্থিতিতের হাতছাড়া করা যথেষ্ট ভুল কাজ৷
মার্চ মাস থেকেই বই বিক্রি তলানীতে পৌঁছে গেছে৷ মোটা টাকার অভাবে হ্রাস পাচ্ছে আয়। বিভিন্ন জেলার বুক এজেন্টদের কাছে কয়েক লক্ষ টাকার বকেয়া বাকি। বুকফার্মের সম্পাদক কৌশিক দত্ত লাল্টু ও শান্তনু ঘোষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করেছে কঠিন পরিস্থিতিতেও বুক ফার্ম সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করবে। তারা বাড়িতে না বসে একটা দূর্দান্ত ভিশন প্ল্যান সাজিয়ে ফেলেছে। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে 'মিশন লকডাউন।'
লকডাউনের পর পাঠকের কাছে সরাসরি বুকফার্ম পৌঁছে দিলো আকর্ষণীয় চিত্র, কোয়ালিটি রাইটিং, মলাট, প্রচ্ছদ সহযোগে ঝাঁ চকচকে পাঁচ পাঁচটি ভিন্ন স্বাদের বই। প্রকাশিত হলো বুক ফার্মের পাঁচটি বই। যে বইগুলো হলো যথাক্রমে 'লেখায় শিব্রাম রেখায় শ্রীশৈল', 'অদ্বিতীয় সত্যজিৎ', 'নোলা', 'শ্রীবৈজ্ঞানিক সমগ্র' এবং 'সূর্যতামসী'।
এই পাঁচটি বইতে ঠিক কী কী রয়েছে? কারা এই বইগুলো লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন? চলুন সেই বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা যাক। সুশান্ত রায়চৌধুরী ও বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত 'লেখায় শিব্রাম রেখায় শ্রীশৈল' বইতে রয়েছে মজার মজার ছবির সমন্বয়ে ২২ টি গল্প ও শিবরাম চক্রবর্তীকে নিয়ে ৩০ টি ছোট বড় দুষ্প্রাপ্য লেখা। মঞ্জিল সেন রচিত 'অদ্বিতীয় সত্যজিৎ' বইটির সম্পাদনায় স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়। এটি হলো বাংলা ভাষায় সত্যজিৎ রায়ের পূর্ণাঙ্গ জীবনের ওপর রচিত প্রথম বই। কৌশিক মজুমদার রচিত 'নোলা' বইটি হলো দেশি বিদেশি ১৫০ টি খাবারের চিত্তাকর্ষক ইতিহাস নিয়ে মজার গপ্পো। সুধীন্দ্রনাথ রাহা রচিত 'শ্রীবৈজ্ঞানিক সমগ্র' বইতে দুই মলাটে এই প্রথমবার উঠে এলো সায়েন্স-ফিকশন ও 'মৌলিক' ভৌতিক কাহিনী। ৫০ বছর আগের হারিয়ে যাওয়া সুধীন্দ্রনাথ রাহার দুষ্প্রাপ্য 'অগ্রন্থিত' লেখাগুলি প্রথমবার আসতে চলেছে বই আকারে। এবং কৌশিক মজুমদার রচিত 'সূর্যতামসী' বইতে আছে অদ্ভুত হত্যাকান্ড, পুরোনো কলকাতা, জাদুবিদ্যা, গুপ্তসমিতি আর একশো বছর বাদে ঘটে চলা বিচিত্র খুন নিয়ে রোমহর্ষক ডিটেকটিভ উপন্যাস।
যারা বাড়িতে বসে এই পরিস্থিতিতে অস্থির হয়ে উঠছেন কিংবা ভিন্ন স্বাদের নিত্যনতুন বইয়ের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন, তাদের সমস্ত অপেক্ষার অবশেষে অবসান ঘটলো। কারণ বুক ফার্ম একটা দুটো নয়, পাঁচ পাঁচটা বই নিয়ে এসেছে স্বল্প মূল্যে। বইপ্রেমী মানুষ হলে এমন লোভ কী আর সংবরণ করা যায়?
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment