কুসংস্কার কে হারিয়ে রক্ত দিতে মানুষ কে উদবুদ্ধ করলো সুরমঞ্জরী
গত ২১ শে জুন ছিল বিশ্ব সঙ্গীত দিবস ও পিতৃদিবস। এই দিনটিকে অভিনব ভাবে পালন করলো উদাং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ত্রিপুরারি সেনশর্মার তিন সন্তান ও ঐ এলাকার সংস্কৃতিমনস্ক মানুষদের বানানো সুরমঞ্জরী সংগীত ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। গত কয়েকদিন আগে হাওড়ার উদাং গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ত্রিপুরারি সেনশর্মা প্রয়াত হন৷ তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি ছিলেন একজন সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তি। ঐ এলাকার একজন সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে তাঁর একটা পরিচিতি ছিল।
শিক্ষক ত্রিপুরারি সেনশর্মার প্রয়াণকে স্মরণ করে এক রক্তদান শিবিরের উদ্যোগ নিয়েছিল সুরমঞ্জরী সংগীত ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। রক্তদানের পর রক্তদাতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে চারাগাছ। রক্তদাতাদের চারাগাছ প্রদান করেছিল ফতেপুর জনসেবা সমিতির ট্রি ব্যাঙ্ক৷ কেবল গাছ প্রদানই নয়, হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গাছ দত্তক নেওয়ার অঙ্গীকার আদায় করায় রক্তদাতাদের নিকট।
গত রবিবার বিশ্ব সঙ্গীত দিবস, পিতৃ দিবসের পাশাপাশি ছিল ত্রিপুরারি সেনশর্মার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। যে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। সত্যিই অনবদ্য ছিল এই প্রয়াস। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে রক্তদান শিবিরের আয়োজন সচরাচর দেখা যায়না। ঐ এলাকায় শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন এই প্রথম বার করা হয়। এমন উদ্যোগ সমাজকে একটা নতুন বার্তা দেয়। এলাকার মানুষ যথেষ্ট প্রশাংসা করেছেন এরকম উদ্যোগের।
সমগ্র অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যমণ্ডিত করতে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক মাননীয় সুচন্দন পোড়েল মহাশয়, পরিবেশবিদ, কবি ও সাহিত্যিক মাননীয় প্রদীপ রঞ্জন রীত, শিক্ষাব্রতী রাজকুমার প্রামাণিক সহ বহু জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ। ফিজিক্যাল ডিসটেন্সিং মেনে রক্তদান শিবির, বৃক্ষ প্রদান ছাড়াও সকলকে স্যানিটাইজ করে গ্লাভস ও মাস্ক দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গে ত্রিপুরারি বাবুর পুত্র সুমিত সেনশর্মা ও পুত্রবধু চিন্ময়ী সেনশর্মা জানান "এই কাজ আমরা এদিন করতে পেরে আনন্দিত ও মুমূর্ষু রোগীদের পাশে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত৷ বাবার আত্মা এবার প্রকৃত শান্তি পাবে।"
সমগ্র অনুষ্ঠানের আয়োজক সায়ন দে বলেন "শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের দিন এ ধরণের কাজ একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করলো৷ বহু মানুষকে এবার অনুপ্রাণিত করা যাবে রক্তদানে।"
সমগ্র অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ডাঃ বিপ্লব মল্লিক জানান "এবার থেকে প্রতি বছর ত্রিপুরারি বাবুর মৃত্যুদিবস উপলক্ষে এ ধরণের সামাজিক কাজ পরিকল্পনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুরমঞ্জরী।"
করোনার যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান আয়োজন করা কঠিন ব্যাপার। আমরা সকলেই জানি হয়তো মৃত্যুর পর কোনো জীবন নেই৷ কিন্তু পরিবারের অত্যন্ত কাছের মানুষ যখন চলে যান তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো ও তার স্মরণসভা আয়োজন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। বেশিরভাগ পরিবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান উপলক্ষে পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ভোজনের ব্যবস্থা করে। তবে এবার অন্যরকম উপায়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করে মানবতার অনন্য নজির গড়লো উদাং গ্রাম৷ যা এককথায় সাধুবাদের যোগ্যতা বহন করে।
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক
Post a Comment