রাশিয়াতে পাঠরত বাঙালিদের দেশে ফেরাতে নিঃশব্দে মানবিক উদ্যোগ দেবের
লোকে তাঁকে সুপারস্টার বলেই জানে। এককালে বাংলার বক্স অফিস কাঁপিয়েছেন তিনি৷ অভিনয়ের সূত্রে কখনো তিনি ছুটেছেন আফ্রিকা, কখনো অ্যামাজন, কখনো সুইজারল্যান্ড, কখনো উজবেকিস্তান, কখনো ইতালি, কখনো দুবাই ও আরো কত কত স্থানে। অভিনয়ের জন্য ভালোবাসাও যেমন পেয়েছেন, তেমন ট্রোলিং বা খিল্লির স্বীকারও হয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে অনেকে বলতেন তিনি তোতলা, অভিনয়ে একেবারে কাঁচা। কিন্তু এই অভিযোগ উড়িয়ে দিতে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন তিনি৷ মেদিনীপুরের কেশপুরের মতো প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতায় এসে অভিনেতা হওয়ার লড়াইটা মোটেও তাঁর সোজা ছিলনা। আজকে তাঁর অভিনয় মুগ্ধ করছে সকলের। চাঁদের পাহাড়, আমাজন অভিযান, জুলফিকার, কবীর, সাঁঝবাতি, টনিক, বুনো হাঁসের মতো উন্নতমানের ছবিতে তিনি অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি আর কেউ নন, আমাদের বাংলা ছবির অন্যতম অভিনেতা দেব। অভিনয় থেকে রাজনৈতিক ময়দান প্রতিটি জায়গায় তাঁর রাজত্ব।
ইদানীং সামাজিক কল্যাণে বেশি বেশি করে উঠে আসছে অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেবের নাম। করোনার মুখ্যমন্ত্রী তহবিলে তিনি দান করেছিলেন এক কোটি টাকা। জম্মু কাশ্মীরে আটকে পড়া চল্লিশ জন বাঙালি পর্যটককে তিনি নিজের খরচে বাস পাঠিয়ে এ রাজ্যে ফিরিয়ে আনেন। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দুই পর্যায়ে নেপাল থেকে এ রাজ্যের ৩০০ জন পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনেন। আর এবার সূদুর রাশিয়া থেকে নিজের খরচে ৭৭ জন কলকাতার বাঙালি ছাত্রদের ফেরাতে বিমানের ব্যবস্থা করতে চলেছেন তিনি।
করোনা সংক্রমণের কারণে বন্ধ সমস্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি। এখনও দেশে-বিদেশে অনেক বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক, পর্যটক ও ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের বাড়ি ফিরতে পারছেন না। খানিকটা অস্বস্তির মধ্য দিয়ে দিন কাটছে তাদের। রাশিয়ার ভার স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে কলকাতার বহু ছেলেমেয়ে পাঠরত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাঙালি ছাত্র অখিলেন্দু কারক তাদের অবস্থার কথা ট্যুইট করে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানায়। তারা ভেবেছিল নিশ্চয় কোনো ব্যবস্থা হবে দেশে ফেরার৷ যদিও কোনো লাভ হয়নি৷ এরপর তারা মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে যোগাযোগ করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। অবশেষে তারা দেবকে ট্যুইট করে। দেব এই ট্যুইটে ওদের অবস্থার কথা জানতে পারেন। গত ১১ ই জুন দেব তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে জানিয়েছেন তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করে ওদের ফিরিয়ে আনবেন।
রাশিয়াতে পাঠরত ৭৭ জন ছাত্র-ছাত্রীকে ফেরাতে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সাথে গোপনে বৈঠকে করেন। সেখান থেকে তিনি প্রতিশ্রুতি মতো আগামী ২৭ শে জুন বিমানের ব্যবস্থা করে দিলেন। তারা ফিরে আসার পরে যেন ১৪ দিন কোয়ারান্টাইনে থাকে এ কথাও জানান তিনি। এভাবেই মানবিকতা প্রদর্শন করতে দেখা গেলো অভিনেতাকে। তাঁর এই মহৎ উদ্যোগে আনন্দিত গোটা টলিউডমহল থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষেরা।
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক
Post a Comment